Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

২০১৬-র মহড়া পুরভোট, বার্তা অমিতের

চাঁদে যাওয়ার লক্ষ্যে ঝাঁপাও। তা হলে অন্তত ছাদে গিয়ে পৌঁছবে! এমনই নীতিবাক্য মাথায় রাখছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। বঙ্গ বিজেপি-র জন্য তাঁর পরিষ্কার বার্তা, ২০১৬-র লক্ষ্যে দৌড় শুরু হোক এখনই। মাঝে পুরভোটে তার মহড়া হবে। রাজ্যে দু’নম্বর নয়, অমিতের লক্ষ্য পয়লাই! লোকসভা ভোটে এ বার বাংলায় ১৭% ভোট পেয়েছে বিজেপি। ঝুলিতে এসেছে দু’টি আসন। এবং তার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে প্রকৃত বিরোধী শক্তি হিসাবেই লড়াই চালানোর চেষ্টা করছে তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৬
Share: Save:

চাঁদে যাওয়ার লক্ষ্যে ঝাঁপাও। তা হলে অন্তত ছাদে গিয়ে পৌঁছবে!

এমনই নীতিবাক্য মাথায় রাখছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। বঙ্গ বিজেপি-র জন্য তাঁর পরিষ্কার বার্তা, ২০১৬-র লক্ষ্যে দৌড় শুরু হোক এখনই। মাঝে পুরভোটে তার মহড়া হবে। রাজ্যে দু’নম্বর নয়, অমিতের লক্ষ্য পয়লাই!

লোকসভা ভোটে এ বার বাংলায় ১৭% ভোট পেয়েছে বিজেপি। ঝুলিতে এসেছে দু’টি আসন। এবং তার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে প্রকৃত বিরোধী শক্তি হিসাবেই লড়াই চালানোর চেষ্টা করছে তারা। এক দিকে শাসক তৃণমূল এবং অন্য দিকে বিরোধী কংগ্রেস ও বাম শিবির থেকে কর্মী-সমর্থকেরা যোগ দিচ্ছেন বিজেপি-তে। বাংলায় বিরোধী রাজনীতির পরিসর দখলের জন্য বিজেপি-র তৎপরতা যখন তুঙ্গে, সেই সময়েই দলের রাজ্য নেতৃত্বকে অমিতের পরামর্শ: দু’বছর পরে বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন সামনে রেখেই এগোতে হবে তাঁদের। তার জন্য রাজ্য নেতৃত্বের যাবতীয় উদ্যোগে অকুণ্ঠ সহযোগিতা থাকবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের।

সর্বভারতীয় সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে মঙ্গলবারই প্রথম দিল্লিতে অমিতের সঙ্গে দেখা করেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। সেই আলাপচারিতায় অমিত যে পরামর্শ রাহুলকে দিয়েছেন, সাম্প্রতিক পরিস্থিতির নিরিখে তাকে যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ ধরা হচ্ছে। কারণ, সংসদের চলতি অধিবেশনে তৃণমূল যে ভাবে মাঝে মাঝে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে, তাতে বিজেপি-র ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনও কোনও মহলে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছিল। রাহুলকে পেয়ে অমিত এ দিন সেই সংশয় দূর করে দিয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, সংসদের চৌহদ্দিতে যা-ই ঘটুক, রাজ্য বিজেপি-কে পুরো দমেই লড়তে হবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

অমিতের সঙ্গে আলোচনা সেরে রাহুলবাবু এ দিন বলেন, “রাজ্য নেতৃত্ব যে ভাবে এগোচ্ছেন, তাতে খুশি তিনি। অদূর ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গে এক নম্বর দল হিসাবে যাতে বিজেপি-র উত্থান হয়, সেই মনোভাব নিয়েই প্রচার করতে বলেছেন বিজেপি সভাপতি।” পশ্চিমবঙ্গে এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন, কী ভাবে নানা জায়গায় শাসক দলের হাতে আক্রান্ত হচ্ছেন বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকেরা, সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট সর্বভারতীয় সভাপতিকে দিয়েছেন রাহুল। আবার একই দিনে পশ্চিমবঙ্গে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে জমা পড়েছে প্রবীণ নেতা বলবীর পুঞ্জের নেতৃত্বে বীরভূমের ইলামবাজার ঘুরে যাওয়া বিজেপি প্রতিনিধিদলের রিপোর্ট। সেখানেও বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম সরকারের পরিবর্তন ঘটিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এলেও আসলে কোনও ‘পরিবর্তন’ আসেনি! বাম আমলের গুন্ডাদের নিয়েই এখন তৃণমূল রাজত্ব চালাচ্ছে। যে ভাবে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র ভোট ৬ থেকে বেড়ে ১৭% হয়েছে, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘাবড়ে গিয়েছেন! সে কারণেই রাজ্য সরকারের প্রশ্রয়ে তৃণমূল কর্মীরা বিজেপি-র উপরে হামলা করছেন।

সব মিলিয়ে মমতার রাজ্যে সংগঠন ছড়ানোর জন্য রসদ হাতে পেয়েছেন বিজেপি-র অন্দরে ‘মাস্টার স্ট্র্যাটেজিস্ট’ বলে পরিচিত অমিত। দলের রাজ্য নেতৃত্বও তাঁর পরামর্শের অপেক্ষাতেই ছিলেন। বিজেপি-র রাজ্য নেতা ঋতেশ তিওয়ারির কথায়, “আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের লক্ষ্য এখন তৃণমূলমুক্ত বাংলা গড়া। সর্বভারতীয় সভাপতি আমাদের রাজ্য সভাপতিকে এই কথাই বলেছেন যে, রাজ্যে দলের সব রকম আন্দোলনে তাঁদের সহযোগিতা থাকবে। কেন্দ্রীয় নেতারাও তাতে প্রয়োজনমতো সামিল হবেন।”

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বিজেপি-র এমন তৎপরতাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। বিজেপি-র উপরে হামলার অভিযোগও নস্যাৎ করে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় হোক আর রাজ্য নেতৃত্ব, সব দিবাস্বপ্ন দেখছেন! যাঁরা এ রাজ্যে প্রাথমিক পরীক্ষাতেও পাশ করল না, তারা দিল্লিতে এমএ পাশ করে এখানেও অলীক স্বপ্ন দেখছে! এই স্বপ্ন সফল হবে না, কারণ এ রাজ্যের মানুষ কোনও দিনই বিভাজনের রাজনীতি মেনে নেননি। নেবেনও না।”

বস্তুত, দায়িত্ব নেওয়ার পরেই বিজেপি-র অন্দরে অমিত বুঝিয়ে দিয়েছেন, যেখানে যেখানে দলের প্রসার এখনও সে ভাবে ঘটেনি, সেখানে পৌঁছে যাওয়াই তাঁর প্রথম লক্ষ্য। সেই কাজে এক দিকে যেমন তিনি নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করে তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানতে চান, তেমনই একেবারে তৃণমূল স্তরে বিজেপি-র মর্তাদর্শগত শিক্ষা পৌঁছে দিয়ে দলের বাঁধুনি ঠিক রাখতে চান। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হচ্ছে না। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, বাংলার জন্য ত্রিমুখী রণকৌশল নিচ্ছেন অমিত। এক, ভোটে লড়ার প্রধান হাতিয়ার হল বুথকে রক্ষা করা। তাই বুথ স্তরে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে হবে। দুই, অন্য দল থেকে কর্মীরা ইতিমধ্যেই দলে যোগ দিতে শুরু করেছেন।

কিন্তু অমিত চাইছেন, শুধু কর্মী নয়, ভিন্ দলের বড় নেতারা বিজেপি-তে যোগ দিতে আগ্রহী হলে এখনই তাঁদের সামিল করাতে হবে। তাঁরা অন্য দলের বিধায়ক বা সাংসদও হতে পারেন। তিন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের আক্রমণ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় স্তর থেকে সব রকম সাহায্য করা হবে। অতীতে দু’দফায় কেন্দ্রীয় দল গিয়েছে। প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও যাবে। অমিত প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গেও এই বিষয়ে কথা বলবেন। যে সব জায়গায় তৃণমূলের অত্যাচার হচ্ছে, সেখানে সংখ্যালঘু কমিশন, মহিলা কমিশনকেও সক্রিয় হতে বলা হবে।

রাহুলের প্রতি এ দিন অমিতের নির্দেশ, বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে পুরভোটকে সেমিফাইনাল ধরে রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। প্রতি মাসে অগ্রগতির রিপোর্ট পাঠাতে হবে দিল্লিতে। বিজেপি-র অন্দরের খবর, অমিত এমন সফ্টঅয়্যারের সন্ধানও শুরু করেছেন, যার সুবাদে কোনও রাজ্যের ছোটখাটো ভোটের সূচিও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নজরে থাকে!

বাংলার জন্য অমিতের যাবতীয় নির্দেশের নির্যাস একটাই আগামী বিধানসভায় ‘নাম্বার টু’ নয়, সরাসরি ক্ষমতা দখলের লক্ষ্য নিয়েই ঝাঁপাতে হবে। রাজ্য বিজেপি-র এক নেতার কথায়, “রাজ্য থেকে মণ্ডল হয়ে নীচের স্তর পর্যন্ত আমাদের কমিটি ছিলই। এ বার আরও সংগঠনের কাজ আরও গুছিয়ে নিয়ে ‘মিশন ২০১৬’-র প্রস্তুতি চলবে।”

সভাপতি হওয়ার আগেই অমিত দলের রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন, তিনি কলকাতা সফরে যেতে আগ্রহী। গত বছর ৩০ নভেম্বর তিনিই বিজেপি-র বাৎসরিক সমাবেশে বক্তা ছিলেন। রাহুলকে এ দিন তিনি বলেছেন তাঁর কলকাতা সফরের দিনক্ষণ ঠিক করতে। পরে রাহুলবাবু বলেন, “অগস্ট কিংবা সেপ্টেম্বরে কর্মসূচি চূড়ান্ত করে ওঁকে জানাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amit shah rahul sinha bjp tmc west bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE