Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পাত পড়ল টিনের ঘরে

কলাপাতায় ভাত-রুটি দুই-ই দেওয়া হয়েছিল। পাশে কাচের বাটিতে ডাল। এক টুকরো রুটি ছিঁড়ে মুখে দিয়ে গৃহকর্ত্রী গীতা মাহালির দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে অমিত শাহ বললেন, ‘‘প্রথমে ভাত খাব।’’ মোটা চালের ভাতের সঙ্গে ঝিঙে-পটলের তরকারি মেখে খেলেন।

মধ্যাহ্নভোজ: নকশালবা়ড়ির এক দলিতের ঘরে অমিত শাহ। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

মধ্যাহ্নভোজ: নকশালবা়ড়ির এক দলিতের ঘরে অমিত শাহ। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

অনির্বাণ রায়
নকশালবাড়ি শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:৫২
Share: Save:

কলাপাতায় ভাত-রুটি দুই-ই দেওয়া হয়েছিল। পাশে কাচের বাটিতে ডাল। এক টুকরো রুটি ছিঁড়ে মুখে দিয়ে গৃহকর্ত্রী গীতা মাহালির দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে অমিত শাহ বললেন, ‘‘প্রথমে ভাত খাব।’’ মোটা চালের ভাতের সঙ্গে ঝিঙে-পটলের তরকারি মেখে খেলেন। এক চুমুকে ডাল শেষ করে আবার চাইলেন। বললেন, ভাল হয়েছে।

নকশালবাড়ির দক্ষিণ কোটিয়াজোতে রংমিস্ত্রি রাজু মাহালির টিন-দরমার বাড়িতে তখন ভিড় ভেঙে পড়েছে। অমিতের পাশে খেতে বসেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পাশে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। তাদের সামনেই অতিথির পাশে হাঁটু মুড়ে বসে গীতা বলছেন, আর একটু খান!

খেলেন অমিত। এবং খেলেন চেয়ে চেয়েই। তাঁর জন্য যে চেয়ার-টেবিল রাখা হয়েছিল, তাতে না বসে বসলেন গিয়ে মাটিতে বিছানো আসনে। সামনে পেতে দেওয়া হল কলাপাতা। তার পরে এল ভাত, ডাল, তরকারি, রুটির সঙ্গে বরবটি ও পটলভাজা। পরে গীতা বললেন, ‘‘মুগের ডালটা ওঁর খুব ভাল লেগেছিল। বারবার চেয়ে নিয়েছেন।’’

প্রথমে ঠিক ছিল, দলের পঞ্চায়েত সদস্য সাধনা মণ্ডলের বাড়িতে দুপুরের খাওয়া হবে। সেই মতো সাত রকম পদের আয়োজন করা হয়, খাওয়ার পরে পাঁচ রকম ফল কেটে দেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল। সাধনা দেবীর পাকা দালান বাড়ি ও পাশে শ্বশুরমশাইয়ের তিন তলা বাড়ি দেখে আপত্তি জানান দিল্লির নেতারা। বেছে নেওয়া হয় এক দলিত পরিবারকে। দরমা-বেড়ার বাড়ি শুনে সবুজ সঙ্কেত আসে দিল্লি থেকেই। এবং নির্দেশ, গৃহকর্ত্রী যেন নিজেই রান্না করেন।

আরও পড়ুন: মায়ের খুনি অপবাদ মুছতেই লড়াই দুই ভাইয়ের

রান্নার জন্য বিজেপি টাকা দিতে চাইলেও তা ফিরিয়ে দিয়েছেন রাজু। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কোনও দল করি না। তবে বাড়িতে এক জন খাবে, তার জন্য টাকা নিতে পারব না।’’ গোল বাধে অবশ্য অন্য জায়গায়। অমিতের সঙ্গে যে ভিড় এসেছিল রাজুর বাড়িতে, তাদের হুড়োহুড়িতে বাড়ির দাওয়া বসে গিয়েছে। তছনছ হয়েছে ফুলগাছ। রান্নাঘরের বেড়া খুলে গিয়েছে। ধারে আনা দুটি চেয়ার ভেঙে চুরমার। গীতা জানালেন, এই ধকল সামলাতে তাঁদের একটু সময় লাগবে।

শুধু গীতার বাড়িতে খাওয়াই নয়, চমক ছিল বাড়ি বাড়ি যাওয়ার কর্মসূচিতেও। চারটি বাড়ির নাম ছিল এই তালিকায়। প্রথমেই অমিত যান সাবিরুদ্দিনের বাড়িতে। সাবির বিজেপি সমর্থক হিসেবেই পরিচিত। তাঁর মেয়ে করিশ্মা খাতুন স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করছেন জেনে তাঁকেও ডেকে নেন অমিত। আর অমিতকে বলেন, ‘‘এখানে পানীয় জল নেই। নিকাশির খুব সমস্যা। এখানকার মেয়েরা পড়াশোনা করেও চাকরি পাচ্ছে না।’’

যাওয়ার সময় করিশ্মাকে অমিত বলেন, ‘‘বেটি তুমহারি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চাহিয়ে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Shah Naxalbari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE