প্রতীকী ছবি।
বিদেশের বাজারে পশ্চিমবঙ্গের আনাজপাতির কদর থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সার প্রয়োগের বাড়াবাড়িতে তা বাতিল করে দেয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। ছোট-বড় রফতানিকারী সংস্থাগুলির অধিকাংশেরই অভিজ্ঞতা প্রায় একই রকম।
সেই বাধা পেরোতে কলকাতার একটি রফতানিকারী সংস্থা নিজেদের উদ্যোগে সিঙ্গুরের ২০ জন চাষিকে নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত চাষে নেমেছে। তাদের উৎপাদিত আনাজ পাঠানো হয়েছিল লন্ডন ও বার্মিংহামে। ফলও মিলেছে। সেখানকার মানদণ্ডে পাশ নম্বর পেয়েছে ওই আনাজ। বেশি টাকা পেয়েছেন চাষিরাও।
রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরাও বিভিন্ন এলাকার চাষিদের নিয়ে ‘ফার্মার্স প্রডিউসার কোম্পানি’ (এফপিসি) গড়ে তাদের উৎপাদিত আনাজ ‘সুফল বাংলা’র মাধ্যমে বিক্রি করছি। এতে সাধারণ মানুষ বাজারদরের চেয়ে কম দামে টাটকা জিনিস পাচ্ছেন, চাষিরাও দু’টো টাকা বেশি আয় করছেন।’’ মন্ত্রী জানান, চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি আনাজ কেনার বিষয়টিকে সমর্থন করে সরকার। কারণ, এই প্রক্রিয়ায় ফড়েদের মধ্যস্থতা তুলনামূলক ভাবে কম হওয়ায় চাষিদের লাভ বেশি থাকে। রফতানিকারী সংস্থাগুলিও যদি এই প্রক্রিয়ায় কাজ করে, তাতে তারাও লাভবান হতে পারবে।
যে-রফতানিকারী সংস্থার উদ্যোগে ওই ‘পাইলট প্রজেক্ট’ চলছে, তার ডিরেক্টর অঙ্কুশ সাহা বলেন, ‘‘এ বার বৃষ্টিতে ফসলের অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যেটুকু পেয়েছি, সেটাই লন্ডন ও বার্মিংহামে পাঠিয়েছিলাম। কিছুই বাতিল হয়নি।’’ তিনি জানান, ফড়েদের মাধ্যমে আনাজ কিনে তা বিদেশে পাঠিয়ে যে-লাভ হয়, সরাসরি কিনে তার চেয়ে বেশি লাভ হচ্ছে। চাষিদেরও বেশি টাকা দেওয়া যাচ্ছে। সব চেয়ে ইতিবাচক দিক হল, তাঁদের উৎপাদিত আনাজ বিদেশের বাজারে এক বারে গ্রাহ্য হওয়ায় চাষিদের মধ্যে উৎসাহ বেড়েছে। তাঁরা যোগাযোগ করছেন, জানতে চাইছেন, কবে ফের চাষ শুরু হবে।
সিঙ্গুরের ওই ২০ জন চাষির অন্যতম শঙ্করলাল কিস্কু বেশি টাকা পেয়ে খুশি। তিনি বলেন, ‘‘লাভ তো বেশি হয়েছেই। ওরা (রফতানিকারী সংস্থা) বীজের অর্ধেক দাম দিয়েছিল। জৈব কীটনাশকও পেয়েছি। পোকা মারার বিশেষজ্ঞও আগাগোড়া আমাদের সঙ্গে ছিলেন।’’
প্রথম দফায় খুব কম জমিতেই চাষ করেছিলেন চাষিরা। শিম, লাউ, ঝিঙে, চালকুমড়ো, ধুঁধুলের মতো যে-সব আনাজে পোকা ধরার আশঙ্কা কম, মূলত সেগুলিই ফলিয়েছিলেন। কিন্তু অকালবৃষ্টিতে কোনও আনাজই ১০০ কিলোগ্রামের বেশি মেলেনি। শঙ্করলাল বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে সংস্থার লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। ওঁরা আশ্বাস দিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়িই দ্বিতীয় দফার চাষ শুরু হয়ে যাবে।’’ বেশি মুনাফার আশায় শঙ্করলাল, নীলমণি মাঝিরা ফের মাঠে নামার অপেক্ষায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy