Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাকুড়ে ধৃত খাগড়াগড়ের আরও এক অভিযুক্ত

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডের আর এক অভিযুক্ত এ বার ধরা পড়ল ঝাড়খণ্ডের পাকুড় থেকে। পুলিশ জানায়, ধৃত মহম্মদ ইব্রাহিম শেখ ওরফে লাল মহম্মদ ওরফে লাল্টু মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের সাহেবনগর গ্রামের বাসিন্দা। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো-র কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ঝাড়খণ্ড পুলিশ শনিবার রাতে পাকুড়ের অদূরে টিলভিট্টা রেল স্টেশনের কাছ থেকে তাকে গ্রেফতার করে। ইব্রাহিমকে নিয়ে খাগড়াগড় কাণ্ডে ধৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৯।

মহম্মদ ইব্রাহিম

মহম্মদ ইব্রাহিম

নিজস্ব সংবাদদাতা
রাঁচি ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৭
Share: Save:

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডের আর এক অভিযুক্ত এ বার ধরা পড়ল ঝাড়খণ্ডের পাকুড় থেকে। পুলিশ জানায়, ধৃত মহম্মদ ইব্রাহিম শেখ ওরফে লাল মহম্মদ ওরফে লাল্টু মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের সাহেবনগর গ্রামের বাসিন্দা।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো-র কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ঝাড়খণ্ড পুলিশ শনিবার রাতে পাকুড়ের অদূরে টিলভিট্টা রেল স্টেশনের কাছ থেকে তাকে গ্রেফতার করে। ইব্রাহিমকে নিয়ে খাগড়াগড় কাণ্ডে ধৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৯।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের মধ্যে যারা জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর শীর্ষে ছিল, তেমনই এক জন এই ইব্রাহিম। ঝাড়খণ্ডের এডিজি (অপারেশনস) সত্যনারায়ণ প্রধান জানান, ভারতীয় হয়েও জেএমবি-র গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কমিটি ‘সুরা’-র সদস্য হয়েছিল ৩২ বছরের ওই যুবক।

গোয়েন্দাদের বক্তব্য, বর্ধমানের ইউসুফ শেখের স্তরের জেএমবি জঙ্গি এই ইব্রাহিম। ইউসুফ যেমন মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া মাদ্রাসার দায়িত্বে ছিল, ইব্রাহিমের উপরে ছিল লালগোলার মকিমনগর মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব।

বিস্ফোরণের পরে সে পাকুড়ে পালিয়ে আসে। তদন্তকারীরা জানান, গত পাঁচ বছর ধরে জেএমবি-র সঙ্গে ইব্রাহিম যুক্ত। জেএমবি-র বর্ধমান মডিউলের ‘চিফ’ সাজিদ ওরফে শেখ রহমতুল্লার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল এই ইব্রাহিম।

ইব্রাহিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ও হেফাজতে নিতে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র একটি দলের আজ, সোমবার পাকুড় যাওয়ার কথা। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিআইডি-র একটি দল ইতিমধ্যেই পাকুড়ে পৌঁছেছে। গোয়েন্দাদের দাবি, জঙ্গি ডেরা তৈরির জন্য নতুন নতুন মাদ্রাসা খুঁজে বার করা, ক্যাডার নিয়োগ, প্রশিক্ষণের মতো দায়িত্ব পালন করত ইব্রাহিম।

পাকুড়ের পুলিশ সুপার অনুপ বিরথারে জানান, ধৃতের কাছ থেকে একটি রিভলবার, ছ’টি গুলি, চারটি বোমা ও মোবাইলের একটি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। তা ছাড়া, গোয়েন্দারা ইব্রাহিমের কাছ থেকে মোবাইলের একটি মেমারি কার্ড পেয়েছেন, যাতে কিছু জেহাদি তথ্য, নথি ও ভিডিও রয়েছে।

গত ৩০ মার্চ খাগড়াগড় কাণ্ডের চার্জশিটে এনআইএ জানায়, প্রতিবেশী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে জেএমবি পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র করে ভারতে যে জঙ্গি-জাল বিছিয়েছিল, তার শাখা ছিল ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলাতেও। কারণ, এ বছরের গোড়ায় সাহেবগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় খাগড়াগড় কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত রেজাউল করিমকে। আর ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করে বোঝা গেল পাকুড় জেলাও ছিল জঙ্গি নেটওয়ার্কের মধ্যে।

তবে রেজাউলকে গ্রেফতারের পরই এনআইএ ঝাড়খণ্ড পুলিশকে সতর্ক করে দিয়ে জানায়, খাগড়াগড় কাণ্ডের অভিযুক্তরা সাঁওতাল পরগনাকে নিজেদের করিডর করেছে। কারণ পাকুড়, সাহেবগঞ্জের মতো জায়গা থেকে বাংলাদেশে সহজে পৌঁছানো যায়।

একই সঙ্গে ওই জায়গাগুলি থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, বর্ধমানের মতো জায়গাও সহজে পৌঁছানো যায়। পাকুড়ের আশপাশের এলাকায় লাল্টুর যাতায়াতের কথা গোপন সূত্রে জানতে পারে পুলিশ। মুর্শিদাবাদ থেকে ফরাক্কা হয়ে সে পাকুড়ে যাতায়াত করত। শনিবার রাতে লোকাল ট্রেনে চেপে টিলভিট্টা স্টেশনে নামা মাত্রই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পাকুড়ের এসপি-র দাবি, জেরায় ইব্রাহিম জানিয়েছে, সে এবং জেএমবি-র আরও কয়েক জন মিলে মুর্শিদাবাদ ও আশপাশের এলাকায় ফের সংগঠনকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছিল। কম শক্তির বোমা তৈরিতে ইব্রাহিম সিদ্ধহস্ত। তার কাছ থেকে যে সব বোমা উদ্ধার হয়েছে, সেগুলি প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হত।

ইব্রাহিম ওরফে লাল্টুকে গ্রেফতারের খবর এ দিন সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে প্রথম জানতে পারেন সাহেবনগর গ্রামে তার পরিবারের সদস্যেরা। তিন ভাইয়ের মধ্যে লাল্টু ছোট। সাহেবনগরের বাড়িতে বৃদ্ধা মা এবং লাল্টুর মেজদা শাকির শেখ সপরিবার থাকেন। এ দিন ভাইয়ের গ্রেফতার হওয়ার খবর শুনে শাকির শেখ বলেন, “ভাই কোনও দোষ করে থাকলে তার শাস্তি হবে। তবে আমরা জানতাম ভাই শিমুলিয়া মাদ্রাসায় কাজ করত। এর বেশি কিছু আমরা জানি না।” গত বছর ইদুজ্জোহাতে শেষ বার বাড়ি এসেছিল ইব্রাহিম।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইব্রাহিমের দু’টি বিয়ে। নদিয়ার বারবাকপুরের এক মহিলা তার প্রথম স্ত্রী। তাঁর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর সে বীরভূমের এক মহিলাকে বিয়ে করে। ওই মহিলা আবার আর এক সন্দেহভাজন জেএমবি জঙ্গি কদর কাজির বোন বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE