Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নভেম্বরের হিমে কি কড়া শীতের বার্তা

বর্ষা এ বার হাত উপুড় করেছিল। শীতও একই পথেই হাঁটবে কি না, বঙ্গবাসীর সে জল্পনা উস্কে দিল নভেম্বরের পারদ পতন। রবিবার যা ভাল মতোই মালুম হয়েছে। মরসুমের গোড়ায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র ধাক্কায় খানিক বেসামাল হলেও বর্ষা পরে পুষিয়ে দিয়েছে। ভরা হেমন্তে কুমিরের লেজের ঝাপ্টা খেয়ে উত্তুরে হাওয়াও থমকে গিয়েছিল।

শীতের পোশাকে শিশু। রবিবার ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

শীতের পোশাকে শিশু। রবিবার ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৭
Share: Save:

বর্ষা এ বার হাত উপুড় করেছিল। শীতও একই পথেই হাঁটবে কি না, বঙ্গবাসীর সে জল্পনা উস্কে দিল নভেম্বরের পারদ পতন। রবিবার যা ভাল মতোই মালুম হয়েছে।

মরসুমের গোড়ায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র ধাক্কায় খানিক বেসামাল হলেও বর্ষা পরে পুষিয়ে দিয়েছে। ভরা হেমন্তে কুমিরের লেজের ঝাপ্টা খেয়ে উত্তুরে হাওয়াও থমকে গিয়েছিল। তবে মেঘ সরতেই তার জোর বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে নামছে তাপমাত্রা। নভেম্বরের শেষের শুরু এখনও হয়নি। তার আগেই মোলায়েম ঠান্ডার আমেজ। এমনকী, রাতের দিকে হাল্কা জ্যাকেট, মাফলারও চড়িয়ে নিচ্ছেন অনেকে।

রবিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস— স্বাভাবিকের দু’ডিগ্রি কম। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে আরও কম। বহরমপুরে রাতের তাপমাত্রা তো স্বাভাবিকের ৫ ডিগ্রি নীচে নেমেছে! ঝাড়খণ্ডে বহু জায়গায় রাতের তাপমাত্রা ১১-১২ ডিগ্রির কাছাকাছি। ‘‘হতেও পারে, এ সব জোরালো শীতের ইঙ্গিত।’’— মন্তব্য এক আবহবিজ্ঞানীর।

হাওয়া অফিস অবশ্য বলছে, শীত এখনও পশ্চিমবঙ্গে থানা গাড়েনি। বহরমপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৫ ডিগ্রি কম থাকলেও তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলা যাবে না।
কারণ, সরকারি ভাবে শীত আসেনি। উপরন্তু শৈত্যপ্রবাহ হতে গেলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি বা তার নীচে থাকতে হবে।

তবে গত বছরের তুলনায় চলতি নভেম্বর যে বেশি হিমেল, আলিপুর হাওয়া অফিস তা মেনে নিচ্ছে। তাদের রেকর্ড মোতাবেক, গত বছর নভেম্বরে কলকাতায় রাতের তাপমাত্রা ১৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামেনি। এ বার ইতিমধ্যেই (কয়েক দিন আগে) ১৬.৯ ডিগ্রি ছুঁয়ে ফেলেছে। আলিপুরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাসের কথায়, ‘‘এই নভেম্বরে তাপমাত্রা শুধু নামেইনি, গত ক’দিন ধরে স্বাভাবিকের নীচে থিতু হয়ে আছে। উত্তুরে হাওয়াও জোরালো।’’ কেন?

আবহবিদ মহলের ব্যাখ্যা: অক্টোবরের শেষে ঘূর্ণিঝড় কিয়ান্ত (মায়ানমারি শব্দটির অর্থ কুমির) এসেছিল। পিছু পিছু একটি গভীর নিম্নচাপ। তার পরে বঙ্গোপসাগরে তেমন কোনও ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ তৈরি হয়নি। ফিরতি পথের বর্ষাও (উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু) দুর্বল। ফলে উত্তুরে হাওয়ার পথে বাধা নেই। তাই ঠান্ডা ভাব বেশি মালুম হচ্ছে।

এবং এর নেপথ্যে উত্তর-পশ্চিম ভারত তথা পশ্চিমি ঝঞ্ঝার ভূমিকাও উঠে আসছে। হরিয়ানা, পঞ্জাব-সহ বহু জায়গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে নেমেছে। হরিয়ানার হিসারে এ দিন তা ছিল ৯.৪ ডিগ্রি, প়ঞ্জাবের লুধিয়ানায় ৮.৬। আবহবিদদের একাংশের ব্যাখ্যা: উত্তর-পশ্চিমে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়লে সেখান দিয়ে বয়ে আসা বাতাস বেশি ঠান্ডা হবে। তাতে শীত জোরালো হবে পূর্ব ভারতে।

আবার এর পিছনে হাত রয়েছে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার। ওই ভূমধ্যসাগরীয় শীতল বায়ুপ্রবাহ কাশ্মীরে ঢুকে বৃষ্টি-তুষারপাত ঘটায়। তার প্রভাবে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে শীত আসে। আবহবিদদের একাংশের পর্যবেক্ষণ— এমন একটি ঝঞ্ঝা কাশ্মীরের দিকে ধেয়ে আসছে। যার জেরে চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি উত্তর-পশ্চিম ভারতে রাতের তাপমাত্রা আরও নামতে পারে।

কিন্তু কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে শীত কবে থিতু হবে? কতটা জাঁকিয়ে পড়বে ঠান্ডা?

আবহবিদদের মতে, ডিসেম্বরের আগে এ রাজ্যে শীত থিতু হয় না। শীতের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলিপুর ‘সরকারি’ পূর্বাভাস দিতেও নারাজ। গণেশবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে শীত কেমন পড়বে, তা বলার সময় আসেনি।’’ ওঁদের বক্তব্য, সব ঋতুর মতো শীতও নির্দিষ্ট ছন্দ মেনে চলে। থার্মোমিটারের পারা ওঠা-নামা করতে থাকে। কখনও একটু বেশি নেমে শৈত্যপ্রবাহ সৃষ্টি করে। ‘‘শীত মানে তাপমাত্রা শুধুই নামবে, তেমনটা আদপেই নয়।’’— বলছেন আলিপুরের এক কর্তা।

শীত-প্রত্যাশী বাঙালিরা সাধ কতটা পূরণ হয়, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Winter Alipore Weather Office
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE