Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

‘আসুন, আমাকে গ্রেফতার করুন’, চ্যালেঞ্জ গুরুঙ্গের

ইতিমধ্যে পাহাড় থেকে সরকারি অফিসারদের বদলির প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য। এই পরিস্থিতিতে গুরুঙ্গকে অনেকটাই কোণঠাসা বলে মনে করা হচ্ছিল। বৃহস্পতিবারই গোপন ডেরা থেকে একটি ইংরেজি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে কড়া অবস্থান বজায় রাখার কথা বলেছিলেন তিনি।

বিমল গুরুঙ্গ

বিমল গুরুঙ্গ

প্রতিভা গিরি
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৭ ০৫:১৬
Share: Save:

টানা কয়েক দিন ‘গোপন ডেরা’য় থাকার পরে শুক্রবার দার্জিলিঙের সিংমারিতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দফতরে বসে বিমল গুরুঙ্গ রাজ্য সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন, ‘‘আসুন, আমাকে গ্রেফতার করুন।’’ দলের সভাসদদের নিয়ে জিটিএ থেকে ইস্তফাও দিলেন তিনি। জানিয়ে দিলেন, পাহাড়ের বন্‌ধে আপাতত কোনও ছাড় নেই।

মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় তাঁর নাম জড়িয়েছিল আগেই। এর পরে গত ১৭ জুন সিংমারির তাণ্ডবে তিন জনের মৃত্যুর ঘটনাতেও গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে খুন ও খুনের ষড়যন্ত্রের মামলা করা হয়েছে। এ দিন কলকাতা হাইকোর্টও গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে। পাহাড়ে বন্‌ধ নিয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলায় মোর্চা, গুরুঙ্গ, এবং দলের নেতা রোশন গিরিকে যুক্ত করে আদালতে নথি পাঠাতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে। গুরুঙ্গ-রোশনের বাড়ি এবং মোর্চার কার্যালয়ে মামলার কাগজ সাঁটিয়ে দিতে বলেছেন তিনি।

ইতিমধ্যে পাহাড় থেকে সরকারি অফিসারদের বদলির প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য। এই পরিস্থিতিতে গুরুঙ্গকে অনেকটাই কোণঠাসা বলে মনে করা হচ্ছিল। বৃহস্পতিবারই গোপন ডেরা থেকে একটি ইংরেজি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে কড়া অবস্থান বজায় রাখার কথা বলেছিলেন তিনি। এ দিন সিংমারিতে সেই সুরই ছিল মোর্চা প্রধানের গলায়।

আরও পড়ুন:কিষেণজি নই, বলছেন গুরুঙ্গ

ঘরে-বাইরে প্রবল চাপের মুখে এ ছাড়া গুরুঙ্গের উপায়ও ছিল না বলে মোর্চার অন্দরের খবর। এ দিনই কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক নিয়ে দার্জিলিঙের চকবাজারের রাস্তায় চলে আসেন জিএনএলএফ প্রধান মন ঘিসিঙ্গ। সুবাস ঘিসিঙ্গের ছেলে মন মাইক ছাড়াই বক্তৃতায় বলেন, ‘‘এই আন্দোলন কোনও দলের আন্দোলন নয়, এটা পাহাড়বাসীর লড়াই। এ আমাদের অন্তিম লড়াই। এর থেকে কেউ যদি পিছু হটে, তাকে পাহাড়বাসী ছাড়বে না।’’ গুরুঙ্গের প্রাক্তন সতীর্থ, জন আন্দোলন পার্টির হরকাবাহাদুর ছেত্রীও গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে মাঠে নেমে পড়েছেন। ‘আমি গোর্খাল্যান্ডের সমর্থক, আমাকে গ্রেফতার করুন’ পোস্টার নিয়ে কালিম্পঙে অবস্থান-বিক্ষোভ চালাচ্ছেন তিনি।

সমমনস্ক দলগুলিকে পাশে পেয়ে গুরুঙ্গ মনে জোর পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ঘরে বসে থাকলে পাহাড়ে জমি হারানোর আশঙ্কাও রয়েছে তাঁর। সেই কারণেই গুরু‌ঙ্গ ৮ দিন পরে প্রকাশ্যে এলেন বলে অনেকের মত। গুরুঙ্গের অবশ্য দাবি, তিনি আত্মগোপন করে ছিলেন না। আগামী দিনে তাঁকে প্রকাশ্য আন্দোলনে দেখা যাবে, নাকি তিনি ফের গোপন ডেরায় চলে যাবেন— সেই প্রশ্নেরও উত্তরও খোলসা করেননি গুরুঙ্গ। বলেছেন, ‘‘সেটা আমি ঠিক করব, কোথায় থাকব।’’ তবে গোর্খাল্যান্ড হওয়ার আগে দিল্লি যাবেন না বলে জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার গুরুঙ্গ দাবি করেছিলেন, পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে মোর্চা অন্য দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করবে না। এ দিন সেই অবস্থান থেকে ঘুরে তিনি দাবি করেন, ‘‘আমার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। আমি বলেছি, জিটিএ নিয়ে কোনও আলোচনা হবে না। ২৯ জুন পাহাড়ের সব দলের সঙ্গে বৈঠক হবে।’’

জিটিএ থেকে কেন সরে এলেন? গুরুঙ্গ বলেন, ‘‘জিটিএ অফিসে তালা দেওয়া হয়েছে। গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলন যেখানে চলছে, তখন জিটিএ-তে থাকার মানে হয় না।’’ আগামী ২৭ জুন দার্জিলিঙে জিটিএ-চুক্তির কপি পোড়াবে মোর্চা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE