Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

স্বাভাবিক পাহাড়ে উঠল বন্‌ধ

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, শীঘ্রই পাহাড় নিয়ে স্বরাষ্ট্রসচিবকে আলোচনার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সেখানে মোর্চা নেতা বিমল গুরুঙ্গকেও ডাকা হবে। কিন্তু আলোচনা ত্রিপাক্ষিক হবে কি না, তা মন্ত্রক থেকে স্পষ্ট করা হয়নি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২২
Share: Save:

নতুন বোর্ড দায়িত্ব নিয়েছে ২৪ ঘণ্টা আগে। চালু হয়ে গিয়েছে ইন্টারনেট। খুলে যাচ্ছে দোকানপাটও। দিনভর ফের কিছুটা ব্যস্ত দিন কাটানোর পরে সন্ধ্যায় পাহাড় শুনল, বিমল গুরুঙ্গকে ‘বন্‌ধ প্রত্যাহার’ করে নিতে অনুরোধ জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তার কিছুক্ষণের মধ্যে গুরুঙ্গ বিবৃতি দিয়ে জানালেন, বুধবার সকাল ৬টা থেকে বন্‌ধ তুলে নেওয়া হল। যা শুনে রাজ্য সরকারের বক্তব্য, পাহাড়বাসীই যখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন, তখন এই অনুরোধ আর ঘোষণা অর্থহীন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, শীঘ্রই পাহাড় নিয়ে স্বরাষ্ট্রসচিবকে আলোচনার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সেখানে মোর্চা নেতা বিমল গুরুঙ্গকেও ডাকা হবে। কিন্তু আলোচনা ত্রিপাক্ষিক হবে কি না, তা মন্ত্রক থেকে স্পষ্ট করা হয়নি।

বন্‌ধ তুলতে এর মধ্যেই পাহাড়ের নেতাদের নিয়ে দু’টি বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাহাড়ের মানুষের মধ্যে ভরসা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। জিটিএ-র কাজ চালাতে বিনয় তামাঙ্গের নেতৃত্বে কেয়ারটেকার বোর্ড গঠিত হয়েছে। এর পরে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হতেই দার্জিলিং এ দিন সকাল থেকে পুরনো ছন্দে ফিরতে শুরু করে।

এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এ দিনের বার্তায় জল্পনা শুরু হয়েছে, তা হলে কি পাহাড়ে ক্রমশ কোণঠাসা গুরুঙ্গকে মুখরক্ষার ব্যবস্থা করে দিল দিল্লি? রাজ্য প্রশাসনের একটি অংশ বলছে, এমন ভাবনার কারণ আছে। এত দিন পর্যন্ত পাহাড়ের যাবতীয় দায়িত্ব দিল্লি ছেড়ে দিয়েছিল রাজ্যের উপরে। তা হলে হঠাৎ সুর বদল কেন? নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘বন্‌ধ উঠতে আর বাকি কী ছিল যে এমন বার্তা দিতে হল?’’

তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার দাবি, ‘‘এ সবের পিছনেই বিজেপির হাত রয়েছে।’’ ঘটনাচক্রে, সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ, দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ারা। দিলীপের দাবি ছিল, দার্জিলিং নিয়ে শীঘ্রই বৈঠক ডাকা হবে, এমন আশ্বাস দিয়েছেন রাজনাথ। তার পরেই মঙ্গলবারের বিবৃতি।

পাহাড়ের মানুষ বলছেন, জিটিএ-র কেয়ারটেকার বোর্ড তৈরি এবং তাকে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দেওয়ার পরে স্বাভাবিক ভাবেই ছন্দে ফিরছিল পাহাড়। এই অবস্থায় হাঙ্গামা করে যে লাভ হবে না, তা বুঝতে পেরেছিলেন গুরুঙ্গ। এমনকী, এত দিন ধরে তাঁরা ঘনিষ্ঠ ছিলেন যাঁরা, তাঁরাও এ বারে শিবির বদলাতে শুরু করেছেন। এ দিনই দুপুরে যুব মোর্চার নেতা তিলক ছেত্রীকে দেখা যায়, হ্যান্ড মাইক হাতে চকবাজারে গিয়ে দোকানপাট খোলার আর্জি জানাচ্ছেন। দু’দিন আগেও নানা মামলায় অভিযুক্ত তিলককে পুলিশ খুঁজছিল। তিলক বলেন, ‘‘হিংসা দিয়ে কিছু হবে না।’’ ক’দিন আগে গুরুঙ্গের একান্ত ঘনিষ্ঠ তথা মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত দীনেশ গুরুঙ্গ ওরফে ক্যারাটে কাইলাও বিনয়ের দিকে ঝুঁকেছেন। এর পরে বন্‌ধ তোলার ঘোষণা করা ছাড়া উপায় ছিল না গুরুঙ্গের। পাহাড়ের একাংশের বক্তব্য, সেই মুখরক্ষার সুযোগই করে দিল কেন্দ্র। রাজ্য অবশ্য জানিয়েছে, গুরুঙ্গের সঙ্গে বৈঠক সম্ভব নয়। কারণ, তিনি ইউএপিএ-তে অভিযুক্ত।

এ দিন অডিও-বার্তায় স্কুল-কলেজ, দোকানপাট খোলা, যানবাহন চালানোর অনুরোধ করেন গুরুঙ্গ। বলেন, ‘‘যাঁরা আমার থেকে দূরে সরে গিয়েছে, তাঁদের মা দুর্গা সুবুদ্ধি দিন।’’ জবাবে বিনয় বলেন, ‘‘জঙ্গলে লুকিয়ে পাহাড় অচল করে রাখাটা পাহাড়বাসী মানতে পারছেন না।’’ জেলাশাসক জয়সী দাশগুপ্তও বলেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষের জন্য এত ভাবলে জঙ্গলে, সিকিমের হোটেলে কেন! চকবাজারে দাঁড়িয়ে নিজের কথা বলুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE