Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্রীকে কটূক্তি, হামলা তার বাড়িতেও

দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে কটূক্তির অভিযোগ ঘিরে রবিবার রাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুর্গাপুরের ধান্ডাবাগের ঋষি অরবিন্দ কলোনি। রাস্তায় শুরু হওয়া গণ্ডগোল গড়ায় বাড়ির উপরে হামলায়। জনা দশেক জখম হন, তার মধ্যে ছ’জন হাসপাতালে ভর্তি। দফায় দফায় গোলমাল চললেও পুলিশ দেরিতে পৌঁছেছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ অবশ্য জানান, খবর পেয়ে দ্রুত এলাকায় গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি আয়ত্তে এনেছে।

এই জমি ঘিরেই বিবাদ বলে অভিযুক্তদের দাবি। —নিজস্ব চিত্র।

এই জমি ঘিরেই বিবাদ বলে অভিযুক্তদের দাবি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৪
Share: Save:

দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে কটূক্তির অভিযোগ ঘিরে রবিবার রাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুর্গাপুরের ধান্ডাবাগের ঋষি অরবিন্দ কলোনি। রাস্তায় শুরু হওয়া গণ্ডগোল গড়ায় বাড়ির উপরে হামলায়। জনা দশেক জখম হন, তার মধ্যে ছ’জন হাসপাতালে ভর্তি।
দফায় দফায় গোলমাল চললেও পুলিশ দেরিতে পৌঁছেছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ অবশ্য জানান, খবর পেয়ে দ্রুত এলাকায় গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি আয়ত্তে এনেছে। ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বিচারক সকলকে ১৪ দিনের জেল-হাজতে পাঠান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত রাত পৌনে ৮টা নাগাদ। ওই ছাত্রীকে মোটরবাইকে চড়িয়ে টিউশনের জন্য সেকেন্ডারি এলাকায় এক গৃহশিক্ষকের কাছে পৌঁছে দিতে বেরিয়েছিলেন তার দাদা। বাড়ি থেকে সামান্য এগোতেই পাড়ার মোড়ে বসে থাকা জনা পাঁচ-ছ’জন যুবক ছাত্রীকে লক্ষ করে কটূক্তি করে বলে অভিযোগ। বোনকে টিউশনে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তাঁর দাদা ওই যুবকদের কাছে গিয়ে প্রতিবাদ করেন, দাবি করেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, সেই সময়ে ওই যুবকেরা তাঁকে মারধর করে। বাড়ি ফিরে তিনি ঘটনার কথা পরিবারের লোকজনকে জানান।

অভিযোগ, এর পরেই ওই ছাত্রীর কাকা তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা লোকজন নিয়ে গিয়ে অভিযুক্তদের উপরে চড়াও হন। অভিযুক্তরা ছাত্রীর বাড়িতে পাল্টা হামলা চালায় বলেও অভিযোগ। কটূক্তির করায় অন্যতম অভিযুক্ত বিশু মাহাতোর বাবা ও মা জখম হয়ে ভর্তি হন ডিএসপি হাসপাতালে। ছাত্রীর কাকার যদিও দাবি, প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাঁকেই হামলার মুখে পড়তে হয়েছে। তাঁর মাথা ফেটে যায়। পুলিশের কাছে অভিযোগে ছাত্রীর দাদা জানান, অভিযুক্তদের পরিবার ও প্রতিবেশীরা তাঁদের পরিবারের উপরে হামলা করলে বৃদ্ধ দাদু, বাবা-সহ মোট ছ’জন জখম হয়ে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ওই ছাত্রীর পরিবারের তরফে ৮ জনের বিরুদ্ধে কটূক্তি, মারধর এবং হামলার অভিযোগ করা হয়। তার ভিত্তিতে বিশু, সানি সাউ, মুকুল মাহাতো, কাঞ্চন প্রসাদ, বিক্রম মাহাতো ও রাজা সিংহকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের পরিবারের যদিও দাবি, তাদের উপরে হামলার অভিযোগ পুলিশ নিতে চায়নি। পুলিশ অবশ্য তা অস্বীকার করেছে। দুর্গাপুরের মহকুমাশাসকের কাছে বিষয়টি জানিয়েছে ধৃতদের পরিবার। তাদের অভিযোগ, ছাত্রীর কাকার জমির অবৈধ কারবার নিয়ে সরব হওয়ার জন্যই তাঁদের উপরে চালানো হামলা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কটূক্তিতে অন্যতম অভিযুক্ত বিশু মাহাতোর জ্যাঠা অরুণ মাহাতোর পরিবার বহু বছর ধরে ডিএসপি-র কয়েক বিঘা জমিতে চাষবাস করছেন। অরুণবাবুরা অভিযোগ করেন, ওই ছাত্রীর কাকা ডিএসপি-র অব্যবহৃত জমি অবৈধ ভাবে বিক্রির সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা যে জমিতে চাষ করেন তা ওই ছাত্রীর কাকা দখল করে অবৈধ ভাবে বিক্রির পরিকল্পনা করছেন বলে তাঁদের দাবি।

মেয়েটির কাকা জমির কারবারে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে কোনও রকম অবৈধ কারবারে তিনি যুক্ত নন বলে দাবি করেন। ডিএসপি সূত্রে জানানো হয়েছে, যে জমি ডিএসপি-র সেগুলিতে বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয় মাঝে-মাঝেই। ওই জমিতে কোনও নির্মাণকাজ হলে তা বৈধ নয়।

এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘ছাত্রীর কাকার জমির অবৈধ কারবারের প্রতিবাদ করায় এ দিন গায়ে পড়ে হামলা চালানো হয়েছে— অভিযুক্তদের পরিবারের লোকজন এমন অভিযোগ করতে এসেছিলেন।’’ তাঁর দাবি, এত দিন তাঁরা কোনও অভিযোগ জানায়নি। হঠাৎ কটূক্তিতে নাম জড়ানোর পরে তদন্তের অভিমুখ ঘোরাতেই তাঁরা পাল্টা অভিযোগ করছেন বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করেছে। পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ পদক্ষেপ করেছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE