বাবুল সুপ্রিয়।
টাকা কেন্দ্রের। প্রকল্প কেন্দ্রের। অথচ, যেমন খুশি নাম দিচ্ছেন এবং নাম কিনছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা আদতে মিথ্যাচারের সামিল। সোমবার এই অভিযোগ করলেন কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
বিজেপি-র এই অভিযোগ হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছে রাজ্যের বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও টাকাই কেন্দ্রের নয়। টাকা জনগণের। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় যে সরকারই থাকুক, টাকা দিতে বাধ্য। আর নামকরণের ক্ষেত্রে কোনও অন্যায় করা হয়নি। প্রকল্পগুলিতে রাজ্যেরও ভাগ আছে। তাই রাজ্য নিজের মতো নাম দিতেই পারে।’’
বাবুল এ দিন মূলত চারটি প্রকল্প নিয়ে নবান্নের বিরুদ্ধে নাম ভাঁড়ানো এবং মিথ্যাচারের অভিযোগ আনেন। তিনি জানান, জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা মিশনের গ্রামাঞ্চলে ৭৫ ভাগ এবং শহরাঞ্চলের ৫০ ভাগ গরিব মানুষের বিনা পয়সায় চাল-গম পাওয়ার কথা। বাজার থেকে প্রতি কিলোগ্রাম ৩৩ টাকা দরে কেনা চাল গরিবদের বিনা পয়সায় পৌঁছে দিতে কেন্দ্র প্রতি কেজি-তে ২৯.৬৭ টাকা ভর্তুকি দেয়। বাকিটা দেওয়ার কথা রাজ্যের। কিন্তু রাজ্য বিনা পয়সার বদলে ২ টাকা কিলো দরে গরিবদের চাল বিক্রি করে। কেন্দ্রের এই প্রকল্পের নাম বদলে দিয়ে রাজ্য ‘খাদ্যসাথী’ রেখেছে। গমের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা বহাল হয়েছে। বাবুলের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ক্ষেত্রেও প্রকল্পের নাম বদলে মমতা রেখেছেন ‘বাংলার বাড়ি’। এই প্রকল্পেও চলতি আর্থিক বছরে ৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু তৃণমূলেরই একাংশের অভিযোগ, ওই টাকা নয়ছয় হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর আরও অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাধের প্রকল্প স্বচ্ছ ভারত অভিযান নিয়েও রাজ্য দ্বিচারিতা করছে। প্রথমত, প্রকল্পের নাম বদলে তারা করেছে ‘নির্মল বাংলা মিশন’। তার উপরে একের পর এক জেলাকে নির্মল জেলা হিসাবে ঘোষণা করা হচ্ছে। বাস্তবে ওই সব জেলার বহু এলাকাতেই কোনও শৌচালয় তৈরি হয়নি। এই খাতেও কোটি কোটি টাকা জলে যাচ্ছে বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বাবুলের বক্তব্য, ‘‘১০০ দিনের কাজ ঘিরেও দুর্নীতি বাস বেঁধেছে পশ্চিমবঙ্গে। বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা পেলেও মাঠে-ঘাটে কাজ পেয়েছে এমন লোক খুঁজে পাওয়া যায় না।’’
বিজেপি-র এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। এ দিন নবান্নে বিভিন্ন দফতরের উন্নয়ন প্রকল্পের পর্যালোচনায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি উল্টে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ আনেন। তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ বছরের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রের কাছে আমাদের বকেয়া রয়েছে ১৩ হাজার ৭১৪ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ১০০ দিনের কাজে ১৪৭০ কোটি, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৮৮৭ কোটি, স্বচ্ছ ভারত মিশনে ৭০০ কোটি, অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন খাতে ২৩৩০ কোটি, শিক্ষকদের বেতন বাবদ ২০০০ কোটি, গ্রামীণ জল পরিষেবায় ৪০০ কোটি, সবার জন্য ঘর প্রকল্পে ৪৫৯ কোটি, ছিটমহল হস্তান্তর বাবদ ৫৯০ কোটি এবং রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় ১১৭ কোটি টাকা কেন্দ্রের ঘরে পড়ে রয়েছে।’’ যা শুনে বাবুল বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর জানা ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট বলে একটি বস্তু আছে। সেই শংসাপত্র জমা না পড়লে বকেয়া টাকা কেন্দ্র দেয় না। টাকা পেলে হিসেব দিতে হয়। সে অভ্যাস রাজ্যের নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy