Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিক্ষোভে গিয়ে ইট খেলেন বাবুল, উত্তপ্ত আসানসোল

রাজ্যের মন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করার কর্মসূচি নিয়ে বুকে ইটের ঘা খেলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী! ঘটনাস্থল, আসানসোল। প্রতিপক্ষ দুই মন্ত্রী হলেন তৃণমূলের মলয় ঘটক এবং বিজেপি-র বাবুল সুপ্রিয়।

বিক্ষোভের মুখে।—নিজস্ব চিত্র।

বিক্ষোভের মুখে।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪৮
Share: Save:

রাজ্যের মন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করার কর্মসূচি নিয়ে বুকে ইটের ঘা খেলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী!

ঘটনাস্থল, আসানসোল। প্রতিপক্ষ দুই মন্ত্রী হলেন তৃণমূলের মলয় ঘটক এবং বিজেপি-র বাবুল সুপ্রিয়।

নরেন্দ্র মোদীর সেই মোড় ঘোরানো জনসভা। সঙ্গে নিজস্ব ক্যারিশমা ও স্টাইলে প্রতি গলিতে ঘুরে প্রচার। দু’বছর আগে এই দুইয়ের জোরেই আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে দোলা সেনের মতো তৃণমূলের হেভিওয়েটকে হারিয়ে সাংসদ হয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। পুরস্কার হিসাবে জুটেছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব। দু’বছরে হাওয়া অনেক ঘুরেছে। শিল্পশহরে বিজেপি-র দাপট যত ফিকে হয়েছে, ততই প্রভাব বেড়েছে ঘাসফুলের। কতটা বেড়েছে, তা বুধবার চাক্ষুষও করলেন বাবুল। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয়বাবুর বাড়ি ঘেরাও করবে বিজেপি, এই খবর ছড়াতে এ দিন উত্তাল হয়ে ওঠে শিল্পশহর। তৃণমূল-বিজেপি কর্মীদের সংঘর্ষ, গাড়ি ভাঙচুর, বাবুলকে ঘিরে বিক্ষোভ— ধুন্ধুমার চলে ঘণ্টা চারেক।

বাবুলের অভিযোগ, ‘‘আসানসোলে বিধায়ক মলয় ঘটকের এলাকায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বিধায়ক নিজেও তাতে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এর বিরুদ্ধেই আমাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু, যে ভাবে আমাদের উপরে হামলা হল, ভাবা যায় না!’’ মলয়বাবুর ইন্ধনেই হামলা হয়েছে বলে তাঁর দাবি। রাজ্য বিজেপির দুই শীর্ষ নেতা রাহুল সিংহ ও শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকেই যদি পুলিশ নিরাপত্তা দিতে না পারে তবে রাজ্যের সাধারণ মানুষের কী হাল, বোঝা যাচ্ছে!’’ তৃণমূল নেতৃত্বের পাল্টা দাবি, বাবুলের মদতে বিজেপি কর্মীরাই বিনা প্ররোচনায় শহর অশান্ত করেছেন। মলয়বাবুর বক্তব্য, ‘‘আন্দোলনের নামে এলাকায় উত্তেজনা ছড়াচ্ছিল বিজেপি। মানুষই তার জবাব দিয়েছেন। এখন আমাদের দিকে ওঁরা আঙুল তুলছেন।’’

এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ আসানসোলের ভগৎ সিংহ মোড়ে মলয়বাবুর বাড়ি ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ছিল বিজেপি। সেখানে জড়ো হন তৃণমূলের হাজারখানেক কর্মী-সমর্থক। দুপুরে বিজেপির কিছু নেতা-কর্মী সেখানে পৌঁছতেই গোলমাল বেধে যায়। অভিযোগ, বিজেপির লোকজনের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন তৃণমূল কর্মীরা। হামলার মুখে পড়ে বিজেপির লোকজন পালিয়ে যান। এই ঘটনার পরেই আসানসোল জুড়ে তাণ্ডব শুরু হয়। বার্নপুর রোড, বিএনআর মোড়ে তৃণমূলের কর্মীরা অবরোধ-বিক্ষোভ শুরু করেন। শহরে গাড়ি চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। বিজেপির অভিযোগ, নানা এলাকায় তাঁদের কর্মীদের দেখলেই তাড়া করে মারধর করা হয়। দলের নেতা-কর্মীদের গোটা দশেক গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা তৈরি ও উস্কানিমূলক কাজকর্মের পাল্টা অভিযোগ তুলে আসানসোল দক্ষিণ পুলিশ ফাঁড়িতে বিক্ষোভও দেখায় তৃণমূল।

আসানসোলের বিএনআর মোড়ে গাড়ি থেকে নামতেই বাবুল সুপ্রিয়র দিকে উড়ে এল ইট

ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে পুলিশ ফাঁড়িতে যেতে বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ সাংসদ বাবুল আসানসোলের মহীশিলার বাড়ি থেকে বেরোন। বিএনআর মোড়ের কাছে রাস্তা অবরোধ করে তাঁর কনভয় আটকায় তৃণমূলের কয়েকশো লোক। কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প প্রতিমন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ, ইট-জুতো ছোড়া হতে থাকে। বাবুল গাড়ি থেকে বেরোতেই একটি ইট গিয়ে লাগে তাঁর বুকে। পুলিশকর্তারা বাবুলকে গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু বাবুল বলেন, ‘‘আমার গাড়ি সামনে যাবে। যারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তাদের সরান।’’

এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছন আসানসোলের মেয়র, তৃণমূলের জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তিনিই দলের কর্মীদের বুঝিয়ে বাবুলের গাড়ি যাওয়ার রাস্তা করে দেন। সাংসদকে যাতে দলের কর্মীরা নির্বিঘ্নে যেতে দেন, সে জন্য ডেপুটি মেয়র তবসসুম আরাকে তাঁর গাড়িতেও তুলে দেন জিতেন্দ্রবাবু। তবে বাবুলের দিকে দলের কেউ ইট ছুড়েছে, তা তিনি মানতে চাননি। পরে আসানসোল দক্ষিণ থানায় গিয়ে বাবুল পুলিশকর্তাদের কাছে ঘটনার বিবরণ দিয়ে ধৃত বিজেপি কর্মীদের ছেড়ে দেওয়ার আর্জি জানান। তবে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ বা ইট ছোড়ার কোনও লিখিত অভিযোগ সাংসদ করেননি। বাবুলের আরও দাবি, ‘‘আমরা কোনও কিছুতে উস্কানি দিইনি।’’

পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা জানান, গোলমাল নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। ৫৭ জন বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE