ফোর্ট উইলিয়ামের কাছে গত শনিবার সকালে দুর্ঘটনার কবলে পড়া অমিতাভ বচ্চনের বিএমডব্লিউ গাড়িটির যথাযথ স্বাস্থ্য শংসাপত্র (ফিটনেস সার্টিফিকেট) ছিল না। তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। তার পরেই সংশ্লিষ্ট গাড়ির মালিক-সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, শুক্রবার কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শহরে এসেছিলেন ‘বিগ বি’। পরের দিন, ১১ নভেম্বর মুম্বই ফেরার জন্য সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ মধ্য কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেল থেকে রওনা দেন অমিতাভ। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পথে ফোর্ট উইলিয়ামের কাছে অল্পের জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় তাঁর গাড়ি।
সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘অমিতাভ বচ্চন সিটের বাঁ-দিকে বসেছিলেন। আমি ছিলাম ডান দিকে, চালকের ঠিক পিছনে। ফোর্ট উইলিয়ামের কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ গাড়িটি নড়বড় করতে শুরু করে। প্রথমে মনে হয়েছিল, বোধহয় টায়ার পাংচার হয়েছে। চালককে বলি, বিষয়টি দেখতে। চালক দেখে জানান, গাড়ির চাকা প্রায় খুলে বেরিয়ে আসছে।’’ ঘটনাচক্রে, সেই দিকেই বসেছিলেন অমিতাভ। ‘‘বচ্চন তো হতবাক! অস্ফুটে বললেন, থ্যাঙ্ক গড। বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছি’’— বলেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী।
এর পরেই অমিতাভকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন সুব্রতবাবু। তত ক্ষণে ময়দানে ফুটবল প্র্যাকটিস করতে আসা অনেকেই ‘বিগ বি’-কে দেখে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। সুব্রতবাবুর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে আমি পিছনে থাকা আমার গাড়িতে অমিতাভ বচ্চন এবং তাঁর জিনিসপত্র তুলে নিয়ে বিমানবন্দরের পথে রওনা দিই।’’ ঘটনার পরে পরেই সকাল ন’টা নাগাদ গাড়িটির বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল প্রোটেকশন সেকশনে অভিযোগ দায়ের হয়। গাড়িটি সম্পর্কে (নম্বর— ডব্লিউ বি০৪এফ-২৪৪৪) খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দেন পরিবহণমন্ত্রীও। তাতেই জানা যায়, গাড়ির মালিক এজেসি বোস রোডে জুপিটার লজিস্টিক নামে একটি সংস্থা।
নিয়ম মতো, বাণিজ্যিক যে কোনও গাড়িরই প্রতি বছর পরীক্ষা করিয়ে পরিবহণ দফতর থেকে স্বাস্থ্য শংসাপত্র নেওয়ার কথা। কিন্তু তদন্তে উঠে আসে, গত ২৯ মার্চ ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়ার নির্ধারিত দিন থাকলেও ওই সংস্থা তা করেনি। এর পরেই ওই সংস্থাকে শো-কজ করেছে পরিবহণ দফতর। এক পরিবহণ-কর্তার কথায়, ‘‘তিন দিনের মধ্যে আমরা সংস্থাটিকে শো-কজের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করব।’’
ওই কর্তা জানান, গাড়িটি এখন বিএমডব্লিউ-এর কর্মশালায় নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে বেরোনোর পরেই বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ে গাড়ির স্বাস্থ্য-পরীক্ষা না করানো এবং অন্যান্য ত্রুটি থাকার জন্য প্রায় ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে দফতর। এ ছাড়াও শো-কজের উত্তর পাওয়ার পরে গাড়ির অন্য কাগজপত্র সঠিক আছে কি না— তা-ও পরীক্ষা করে দেখা হবে। সেখানে সমস্যা থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পরিবহণ দফতর বিষয়টি কলকাতা পুরসভার নজরে এনেছে। তদন্তে আরও বড় গাফিলতি পেলে সংস্থার ‘ট্রেড লাইসেন্স’ বাতিল হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy