Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
আঁধারে আলো

‘আমরা এককাট্টা, এখানে অশান্তি হতে দেব না’

এক সপ্তাহ ধরে বসিরহাটের দু’প্রান্তে দেখা গিয়েছে এমনই বিপরীত ছবি। একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে দু’পক্ষের হিংসা-হানাহানি দেখেছে বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র। বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রে তার কোনও আঁচই পড়েনি।

অকাল-রাখি: বসিরহাটের মাটিয়াতে। —নিজস্ব চিত্র।

অকাল-রাখি: বসিরহাটের মাটিয়াতে। —নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৭ ০৩:৫৭
Share: Save:

এক প্রান্তে আগুন জ্বলছে। অন্য প্রান্তে শান্তি।

এক দিক যখন বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছে, তখন ঘুমে ব্যাঘাত হয়নি অন্য দিকের মানুষের।

লাঠিসোটা নিয়ে এক দিকের কিছু মানুষ যখন অন্য পক্ষের দিকে তেড়ে যাচ্ছে, অন্য দিকে তখন দু’পক্ষের হাতে-হাত।

এক সপ্তাহ ধরে বসিরহাটের দু’প্রান্তে দেখা গিয়েছে এমনই বিপরীত ছবি। একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে দু’পক্ষের হিংসা-হানাহানি দেখেছে বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র। বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রে তার কোনও আঁচই পড়েনি। কারণ, সেই সময় এখানে দু’পক্ষ শান্তির নজির গড়ছেন। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে হাতিয়ার করে পোস্টার সাঁটছেন, হোর্ডিং লাগাচ্ছেন। রবিবার দু’পক্ষ পরস্পরের হাতে পরিয়ে দিলেন রাখি। উৎসবের চেহারা নিল রাস্তাঘাট।

‘জাতীয় শিক্ষাবিদ’ পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক আবু সালেক আহমেদ বললেন, ‘‘আমরা এককাট্টা। এখানে অশান্তি হতে দেব না।’’ একই সুর মাটিয়া-শ্রীনগর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রেমেন্দ্র মল্লিকের গলাতেও, ‘‘সবাইকে বোঝানো হয়েছে, দুষ্কৃতীদের প্ররোচনায় পা নয়। তাই এখানে কোনও অশান্তি হয়নি।’’

অথচ, সাত দিন ধরে শুধু অশান্তির খবরই এসেছে এই জনপদে। এই কেন্দ্রকে ঘিরে রয়েছে বাদুড়িয়া, হাসনাবাদ, হাড়োয়া এবং বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র। এর মধ্যে তিন জায়গায় গোলমাল হয়েছে। প্রথম দিকে বসিরহাট উত্তরের মাটিয়া এলাকা নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন সাধারণ মানুষ। কারণ এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপ্রবণ। ছোটখাটো দুর্ঘটনা বা সাধারণ বিবাদ নিয়ে অশান্তির একাধিক নজির রয়েছে এখানে। কিন্তু এ বার ওই এলাকাও পুরোপুরি শান্ত!

আরও পড়ুন:এগিয়ে এল সর্বদল

কী ভাবে সম্ভব হলো?

পুলিশ প্রশাসনের অপেক্ষায় না-থেকে তাঁরা বাদুড়িয়ায় গোলমালের কথা জানার পরেই পথে নেমে পড়েন বলে জানিয়েছেন বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রের দু’পক্ষ। কয়েকশো মানুষ সেই দলে সামিল হন। সেখানে যেমন পিরজাদা মাহাবুব বিল্লা রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন মন্দিরের পুরোহিত প্রদীপ সরকার। রয়েছেন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকেরাও। এমনকী, রয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক এটিএম আবদুল্লা রনিও। তাঁরা জানান, মাটিয়া, শ্রীনগর এবং ধান্যকুড়িয়া— এই তিন এলাকায় ৮টি শান্তি-শিবির করে পালা করে রাত জাগছেন তাঁরা। কোনও মহল্লা থেকে গুজবের কথা কানে এলেই ম্যাটাডর নিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন। গ্রামবাসীদের বুঝিয়েছেন। বহিরাগতরা ঢুকে যাতে অশান্তি পাকাতে না-পারে, সে জন্য সাহস জুগিয়েছেন।

ধান্যকুড়িয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রমথ সরকার বলেন, ‘‘আমরা কিছুতেই এখানে শান্তির বাতাবরণ নষ্ট হতে দেব না। তার জন্য যা করতে হয়, করব।’’ একই রকম প্রত্যয়ের সুরে হাজি আয়ুব আলিও বলেন, ‘‘এ সব হানাহানিতে ক্ষতি ছাড়া আর কিছু হয় না। এটা মানুষকে বোঝাতে পেরেছি। সামান্য কারণে কেউ এখানে দু’পক্ষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করবে, তা অত সহজ নয়।’’ একই কথা বলছেন সমাজসেবী রণদেব মল্লিক, মামুদ হাসানও।

শান্তির আবহ বজায় রাখতে এককাট্টা বসিরহাট উত্তর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE