Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মার খেয়ে পাল্টা চড় নারায়ণেরও

নিজের কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে বাধা পেয়ে একাই রুখে দাঁড়ালেন সিপিএমের সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা নারায়ণ বিশ্বাস। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের সিপিএম নেতা নারায়ণবাবুর কথায় এক সময় উঠত বসত বিস্তীর্ণ এলাকা। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিকবার ফৌজদারি মামলাও রুজু হয়েছে। বাম জমানায় মন্ত্রী থাকাকালীনও তিনি ফেরার ছিলেন দীর্ঘকাল। পরে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। তাঁকে জেলেও যেতে হয়েছিল।

বুথের বাইরে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে তর্কাতর্কি প্রাক্তন মন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাসের। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

বুথের বাইরে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে তর্কাতর্কি প্রাক্তন মন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাসের। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গঙ্গারামপুর শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

নিজের কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে বাধা পেয়ে একাই রুখে দাঁড়ালেন সিপিএমের সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা নারায়ণ বিশ্বাস।

দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের সিপিএম নেতা নারায়ণবাবুর কথায় এক সময় উঠত বসত বিস্তীর্ণ এলাকা। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিকবার ফৌজদারি মামলাও রুজু হয়েছে। বাম জমানায় মন্ত্রী থাকাকালীনও তিনি ফেরার ছিলেন দীর্ঘকাল। পরে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। তাঁকে জেলেও যেতে হয়েছিল।

শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর পুরসভায় ভোট দিতে যাওয়ার সময় সেই নারায়ণবাবুই আক্রান্ত হলেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমাকে ঘিরে ধরেছিল একদল বহিরাগত তৃণমূল কর্মী।’’ বামেদের দাবি, অন্তত জনা পঞ্চাশেক লোক তাঁকে তখন ঘিরে ধরেন। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা হুঙ্কার দিয়ে নারায়ণবাবু এক তৃণমূল সমর্থককে সপাটে চড় মেরে তেড়ে যান। তখনই শুরু হয়ে যায় ধাক্কাধাক্কি। সে সময়ে নারায়ণবাবুকে চড় ঘুষি মারা হয় বলেও তিনি নির্বাচন কমিশনে নালিশ করেছেন।

সিপিএমের দাবি, নারায়ণবাবুকে ঘিরে ধরা হয় বুথের দশ হাতের মধ্যেই। তা হলে পুলিশ তখন কী করছিল? পুলিশকর্তারা এই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। নারায়ণবাবুর বক্তব্য, ‘‘আপাতশান্ত পরিবেশের আড়ালে শাসকদল যে বহিরাগতদের নিয়ে বুথ কব্জা করেছে, এই ঘটনা তারই প্রমাণ। পুলিশের সামনেই ১৪৪ ধারা অমান্য করে অত লোক বুথের সামনে ভিড় করেছিল। কিন্তু পুলিশ তাদের বাধা দেয়নি।’’ জেলা পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘নারায়ণবাবুকে হামলা বা তাঁর পাল্টা হামলার কোনও অভিযোগ পাইনি।’’ নারায়ণবাবু জানিয়েছেন, পুলিশে অভিযোগ করে কোনও লাভ নেই বলে সরাসরি নির্বাচনী কমিশনকেই সব কথা জানিয়েছেন।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র অবশ্য দাবি করেন, ‘‘নারায়ণবাবুই একদল লোক নিয়ে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন। মিছিল করে কেন তিনি বুথে ঢুকবেন, লোকজন জানতে চাইলে তর্কাতর্কি হয়। ধস্তাধস্তি হয়নি।’’ বিপ্লববাবুর সংযোজন, ‘‘নারায়ণবাবু মিডিয়ার প্রচার পেতে ওই কাণ্ড করেছেন।’’

এ দিন সকাল থেকেই শহরের ৯, ১২, ১৩, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে দলের পোলিং এজেন্টদের বুথ থেকে মেরে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে অস্থির হয়ে ওঠেন নারায়ণবাবু। এক সময় যাঁর কথায় গঙ্গারামপুরে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত, সেই নারায়মবাবুর নিজের পাড়াতেই তাঁর দলের সমর্থকদের বুথ পর্যন্ত যেতে দেওয়া হচ্ছে না, এ কথা তিনি মানতে পারেননি। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের গঙ্গারামপুর হাইস্কুলের মধ্যে তিনটি বুথে স্থানীয় বাসিন্দাদের রাস্তাতেই আটকে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পান তিনি। সিপিএমের বিদায়ী চেয়ারম্যান সুবল বসাক ওই ওয়ার্ডের প্রার্থী। এলাকার কায়স্থ পাড়া, বসাক পাড়া থেকে বাসিন্দারা ভোট দিয়ে আসতেই বুথের আগে একদল বহিরাগত তাঁদের আটকে দেয় বলে অভিযোগ। বাড়ির মহিলাদের সঙ্গে সিপিএম প্রার্থী সুবলবাবুর বড়দা ৭০ বছরের সুনির্মল বসাকও ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা, পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী এক মহিলা বলেন, ‘‘বহিরাগতের দলটি হমকির সুরে বলে, ‘কাকিমা চা খান, বাড়ি যান। ভোট দিতে হবে না।’ ওই দলের কাউকে আমরা চিনি না।’’

এরপরই দলীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে পড়েন নারায়ণবাবু। গলি রাস্তা ধরে পায়ে হেঁটে নিজের এলাকায় ভোট দিতে যান। তখনই তাঁকে ঘিরে ধরা হয় বলে অভিযোগ। উত্তেজনার খবর পেয়ে এসডিপিও সহ পদস্থ অফিসারেরা গিয়ে পরিস্থিতি সামলান। নারায়ণবাবু ভোট দিয়ে বের হলে তাকে পুলিশি প্রহরায় গলির রাস্তা পর্যন্ত এগিয়েও দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE