সারা দিনে থামে মাত্র একটিই ট্রেন।
পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছোট্ট একটা স্টেশন। চারপাশের অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে এই স্টেশন মন ভরিয়ে দেওয়ার মতো। কিন্তু এক অজানা আতঙ্কে এই স্টেশন খালি পড়ে রয়েছে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘ভূতুড়ে স্টেশন’। রেল মানচিত্রে এই স্টেশনের নাম বেগুনকোদর। পাকা ইমারতের স্টেশন বিল্ডিং, রেল কোয়ার্টার্স—সবই রয়েছে। এক সময় নাকি স্টেশন লাগোয়া বড় বাজারও ছিল। এখন সে সবই অতীত। রেললাইনের ধারে সারা রাত হানাবাড়ির মত পড়ে থাকে পুরুলিয়ার জেলার কোটশীলার এই বেগুনকোদর স্টেশন।
শোনা যায়, বহু বছর আগে একদিন মধ্যরাতে এখানে খুন হন স্টেশন মাস্টার ও তাঁর স্ত্রী। পরে স্টেশনের কাছে এক কুয়োর মধ্যে থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁদের মৃতদেহ। সেই থেকেই নাকি অশরীরী কার্যকলাপের শুরু। শোনা যায়, ওই ঘটনার পরই রাতারাতি পালিয়ে যান সব রেলকর্মী। বন্ধ হয়ে যায় এই স্টেশনে ট্রেন থামা। হানাবাড়ির মতো পড়ে থাকে শুধু পাকা স্টেশন বিল্ডিংটা।
১৯৬৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এমনই দশা চলে। ২০১০ সালে আবার চালু হয় বেগুনকোদর স্টেশন। তবে তা শুধু প্যাসেঞ্জার হল্ট হিসেবে। পুরনো স্টেশন বিল্ডিংটাকেই রং করে চালু করা হয়। তা হলে এখন কি বেগুনকোদর স্টেশনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে? বোধহয় নয়!
দিনের বেলায় কয়েক জনকে দেখা গেলেও রাতে ফাঁকাই থাকে স্টেশন।
এখনও স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়, রাত নামলে হঠাৎ হঠাৎ এখানে দেখা যায় অদ্ভুত আলো। যত রাত বাড়ে, বাতাসে ভেসে আসে অদ্ভুত সব গন্ধ। মাঝে মধ্যেই নাকি শোনা যায় অশরীরী কণ্ঠস্বর। দিনের আলোতেও বেগুনকোদর মনে ত্রাস সঞ্চার করতে থাকে স্থানীয় লোকজনের। দিনের বেলাতেও অনেকেই নাকি কানের কাছে মানুষের গলা শুনে চমকে উঠেছেন অনেকে। চার পাশে তাকিয়ে কাউকেই নাকি দেখা যায়নি। অনেক সময়ে আবার লোকজনের গা ঘেঁষে চলে গিয়েছে অশরীরী কেউ! আচমকা ধাক্কা খেয়ে সচেতন হয়েছেন কেউ কেউ। কিন্তু যাঁর সঙ্গে ধাক্কা লাগল, তাঁর দেখা মেলেনি! এমনই নানা গল্প স্থানীয় লোকজনের মুখে মুখে ফেরে।
আরও পড়ুন: ‘ভূত ধরার’ আধুনিক সব যন্ত্রপাতি
এখনও সন্ধ্যার পর স্টেশন বিল্ডিংয়ের ত্রিসীমানায় দেখতে পাওয়া যায় না কোনও গ্রামবাসীকে। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ এই স্টেশনে থামে রাঁচি-চন্দ্রপুরা-ধানবাদ প্যাসেঞ্জার। এর পর আর কোনও ট্রেনের স্টপেজই দেওয়া হয়নি এখানে। নেই কোনও রেলের স্থায়ী কর্মী। সন্ধের পরে আর কেউ আসেন না এখানে। এখনও একরাশ ভয়, আতঙ্ক নিয়ে সারা দিন ফাঁকা পড়ে থাকে পুরুলিয়ার বেগুনকোদর স্টেশন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy