প্রতীকী ছবি।
বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলে গিয়েছেন, তাঁর লক্ষ্য ‘এ বার বাংলা’। বাংলায় পদ্ম ফোটাতে সভাপতির পরামর্শ ছিল— ‘বুথে যাও, সংগঠন গড়ো’। সংগঠন গড়তে তিনি রাজ্যে পাঠিয়েছিলেন পাঁচ কেন্দ্রীয় নেতাকে। দলের পরিভাষায় সেই ‘পালক’ নেতারা সভাপতিকে রিপোর্ট দিয়েছেন, বুথভিত্তিক সংগঠন হয়তো অনেকটাই করে ফেলা যাবে। কিন্তু আগামী লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে বিজেপি-র সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে প্রভাবশালী প্রার্থী খুঁজে পাওয়া। পালকদের রিপোর্ট অনুযায়ী— দলে এখন শ’তিনেক এমন নেতাও নেই, যাঁরা সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থী হিসাবেও এলাকায় দাগ কাটতে পারেন। দিল্লি থেকে আসা নেতাদের পর্যবেক্ষণ ভাবাচ্ছে অমিতদের। কারও কারও সংশয়, তা হলে কি ‘এ বার বাংলা’ এ বারও অধরাই থেকে যাবে?
এ রাজ্যে বুথ এখন ৭৭ হাজার। দেড় বছরের প্রচেষ্টায় মেরে-কেটে ৪০ হাজার বুথে কমিটি তৈরি করতে পেরেছে রাজ্য বিজেপি। নেতাদের আশা, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের এখনও বছরখানেকের বেশি দেরি। তত দিনে আরও কয়েক হাজার বুথে পৌঁছনো সম্ভব হবে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘এ রাজ্যের ২০-২৫ ভাগ বুথে বিজেপি-র কমিটি তৈরি সম্ভব নয়। কারণ সেগুলি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা। বাকি সর্বত্র বুথ কমিটি হয়ে যাওয়ার কথা।’’ কিন্তু কথার কথায় ভরসা রাখেননি অমিত। তিনি পালক হিসাবে তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উত্তরবঙ্গে জগৎপ্রকাশ নাড্ডা, রাঢ় বঙ্গে অর্জুনরাম মেঘাওয়াল, কলকাতার আশপাশে মনোজ সিনহাকে নিয়োগ করেছিলেন। এ ছাড়াও রয়েছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, রাহুল সিংহের মতো নেতারাও কয়েকটি করে আসনের পালক হয়েছেন। সাংগঠনিক ভাবে তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন শিবপ্রকাশ। বার দুই-তিন লোকসভা কেন্দ্র ওয়াড়ি ঘুরে যাওয়ার পর অমিতকে রিপোর্ট দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। তাতেই দলের মধ্যে যোগ্য, লড়াকু, প্রভাবশালী প্রার্থীর অভাব রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এ কথা যে ঠিক, তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে সাম্প্রতিক সবং এবং আসন্ন নোয়াপাড়া ও উলুবেড়িয়ার উপনির্বাচনে। স্থানীয় ‘যোগ্য’ প্রার্থী না পেয়ে সবংয়েও প্রার্থী ঘোষণা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখতে হয়েছিল দলকে। শেষ পর্যন্ত বছর দেড়েক আগে সিপিএম থেকে আসা অন্তরা ভট্টাচার্যকে সবংয়ে দাঁড় করানো হয়। অন্তরার বাড়ি পিংলায়। নোয়াপাড়ার মঞ্জু বসু-কাণ্ড এবং উলুবেড়িয়ায় জন্য প্রার্থী খুঁজতে মুম্বই পাড়ি দেওয়ার প্রবণতাও বুঝিয়ে দিচ্ছে, দল ঠিক যেমন চাইছে, তেমন প্রার্থী এলাকায় নেই। গত লোকসভা নির্বাচনেও একসঙ্গে ৪২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেনি বিজেপি। দলে প্রভাবশালী প্রার্থী না পেয়ে গত লোকসভা ভোটেও বেশ কয়েক জন প্রাক্তন পুলিশ অফিসার, আমলা, অভিনেতা-অভিনেত্রীকে টিকিট দিতে হয়েছিল বিজেপি-কে। ঘটনাচক্রে, এখন এ রাজ্য থেকে যাওয়া তিন সাংসদই গান এবং চলচ্চিত্র জগতের। ফলে আগামী ভোটেও এই সমস্যা যে প্রকট হবে, তা বুঝতে পারছেন অমিত।
সেই প্রভাবশালীদের খুঁজতেই বাংলার বিদ্বজ্জনদের কাছে টানতে বাড়তি তৎপরতা শুরু হয়েছে বিজেপি শিবিরে। ঘন ঘন রাজ্যে আসছেন শিবপ্রকাশ, সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের মতো নেতারা। কিন্তু ঘটনাচক্রে, রাজ্য বিজেপি-র ‘বিদ্বজ্জন সেল’-এর আহ্বায়ক কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরীই সম্প্রতি তৃণমূলে চলে গিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy