আহত চিত্রসাংবাদিক সব্যসাচী ইসলাম এবং সাংবাদিক সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
সন্ত্রাসের হাত থেকে রেহাই পেলেন না সাংবাদিকরাও। সোমবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের অতিরিক্ত একদিন মনোনয়ন জমা দেওয়াকে ঘিরে একের পর এক জেলা যে সন্ত্রাসের সাক্ষী হয়ে রইল, তার শিকার হলেন সংবাদ কর্মীরাও।
ইঙ্গিত যদিও আগেই ছিল। নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগে থেকেই খুব ঠাণ্ডা গলায় শাসকদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্ব সতর্ক করে দিয়েছিলেন জেলায় জেলায় সাংবাদিকদের। আওয়াজটা যে ফাঁকা ছিল না তা বোঝা গিয়েছিল, যখন খোদ কলকাতা শহরের বুকে, এক ইংরাজি সংবাদপত্রের চিত্র সাংবাদিককে জেলা শাসকের অফিস থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করে মারধর করে আটকে রাখা হয়েছিল।
সোমবার রাজ্যের দিকে দিকে দেখা গেল সেই একই চিত্র। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙাতে শাসক দলের কর্মীদের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে মাথা ফাটল আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়ের। বেলা গড়ানোর আগেই বীরভূমের রামপুরহাটে আক্রান্ত হন আনন্দবাজার পত্রিকারই চিত্রসাংবাদিক সব্যসাচী ইসলাম। রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা ‘উন্নয়ন’-এর হাতে রক্তাক্ত হন তিনি। সিউড়িতে তখন বিজেপির জেলা কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিনিধি দয়াল সেনগুপ্ত। তাঁর কথায় ‘দেখলাম, কাছে দাঁড়িয়ে থাকা আর একটা ভিড় লাঠি উঁচিয়ে ইট ছুড়তে ছুড়তে বিজেপি অফিসের দিকে ছুটে আসছে। কয়েক জনের হাতে পিস্তলও রয়েছে, স্পষ্ট লক্ষ্য করলাম। পাল্টা প্রতিরোধ গড়তে বিজেপি কর্মীরাও দেখলাম ডান্ডা, মঞ্চ তৈরির কাঠের বাটাম হাতে ছুটে গেলেন হামলাকারীদের দিকে। দু’পক্ষই ইট ছুড়ছে, হাতের লাঠিরও যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে।’ কোনওমতে সেখান থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে পালাতে পারলেও ফের নির্বিচার বোমাবাজির মধ্যে আটকে পড়েন তিনি। প্রায় গায়ের কাছে মুহুর্মুহু বোমা পড়তে থাকে। সেবাব্রত, সব্যসাচীর মত ওই পরিস্থিতিতে আহত হন আরও একাধিক সাংবাদিক।
আরও পড়ুন: ৩৫৬ জারির দাবি তুলে দিলেন দিলীপ, ভোটে যেতে চান না ওঁরা: পার্থ
আরও পড়ুন: প্রাণপণ দৌড়চ্ছি, বোমাটা ফাটল ফুট বিশেক দূরে
এই ছবি খালি জেলার নয়। ফের সেই আলিপুর জেলা শাসক অফিসেই ‘উন্নয়ন’-এর পুরোধাদের হাতে আটক হতে হয় একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক প্রজ্ঞা সাহাকে। শাসক দলের মহিলা ব্রিগেড প্রায় দু’ঘন্টা তাঁকে আটকে রাখে। মারধর না করলেও উপরি পাওনা ছিল অশ্রাব্য গালিগালাজ। কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের গোটা বিষয়টি জানানোর পরও প্রজ্ঞার খোঁজ মিলতে সময় লেগেছে আরও এক ঘন্টা। একই হাল হয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকার আর্যভট্ট খানের। সেই আলিপুরেই। তাঁকে খালি আটকে রেখে ক্ষান্ত হয়নি দুষ্কৃতীরা। তাঁর মোবাইল, ঘড়ি কেড়ে নেওয়া হয়। অল্পবিস্তর মারধরও জোটে আর্যভট্টর কপালে। শেষ পর্যন্ত সব ফেরত পেলেও সোমবার দুঃস্বপ্নের দুপুর কাটল তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy