মিষ্টিমুখ: রসগোল্লা বিলি করছেন নেপালবাবু। ছবি: উদিত সিংহ।
সংঘাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিল। কিন্তু, মারামারি, হাতাহাতি হল না। বরং ‘উল্টো ছবি’ দেখল রায়না। তৃণমূলের বিধায়ক মনোনয়ন জমা করালেন সিপিএম প্রার্থীদের।
সোমবার থেকে শুরু হয়েছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া। বৃহস্পতিবার অবধি রায়না ১ ব্লকে কোনও বিরোধী দলই মনোনয়ন দেয়নি। রোজ অফিসে বসে কার্যত মাছি তাড়াচ্ছিলেন ভোটের কাজে নিযুক্ত কর্মীরা। বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ ছিল, গত ক’দিন শ্যামসুন্দরপুরে ব্লক অফিসের বাইরেই তৃণমূলের লোকজন যে ভাবে লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হয়ে আছে, তাতে ভয় সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকে ছবিটা একই ছিল। বদলাল শেষ প্রহরে। রায়নার তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘড়ুই এবং দলের স্থানীয় নেতা শেখ ইসমাইল সিপিএমের ৩৭ জন প্রার্থীকে সঙ্গে করে ব্লক দফতরে নিয়ে গেলেন। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে ব্লক অফিসের উল্টো দিকের মিষ্টির দোকান থেকে রসগোল্লা কিনে সিপিএম প্রার্থীদের খাওয়ালেনও বিধায়ক। এবং শেষে তাঁদেরকে ‘পাহারা’ দিয়ে সিপিএমের জেলা নেতাদের হাতে তুলে দিয়ে এলেন। নেপালবাবুর বক্তব্য, “গত কয়েক দিন ধরে তৃণমূল মনোনয়ন জমা দিতে দেবে না বলে সিপিএম প্রচার করছিল। সেটা যে কতটা মিথ্যা, তা প্রমাণ হয়ে গেল!’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বিরোধীদের মনোনয়ন জমা নিতে প্রশাসনও নানা ভাবে সাহায্য করেছে। কিন্তু, পঞ্চায়েতের এক-চতুর্থাংশ আসনে প্রার্থী দিতে পারল কই!”
রায়না ১ ব্লকের সদর শ্যামসুন্দরপুর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে নতুনগ্রামের কাছে একটি গাছতলায় দাঁড়িয়ে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অমল হালদার দাবি করলেন, “ওরা (তৃণমূল) বোমা-গুলি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল। তবে, আমরাও প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আর তাতেই প্রশাসন ও তৃণমূল ভয় পেয়ে গিয়েছে।”
এ দিন সকাল ১০টা থেকেই শয়ে শয়ে লোক শ্যামসুন্দরে জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদের একটি বড় অংশ ছিলেন ব্লক দফতর থেকে কিছুটা দূরে একটি সেতুর কাছে। প্রকাশ্যেই তাঁরা লাঠি-বাঁশ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কারও কারও মুখ ছিল কাপড় বা রুমালে ঢাকা। ‘‘ওরা সব তৃণমূলের ক্যাডার। মনোনয়ন দিতে গেলেই আমাদের পেটাবে বলে দাঁড়িয়ে আছে!’’— ওই সেতু থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে বলছিলেন সিপিএমের এক কর্মী। তখনও মনোনয়নের জন্য সিপিএমের বড় মিছিল এলাকায় ঢোকেনি।
একটাও ‘মাছি’ যাতে না গলে, তার জন্য এমনকী বাস আটকে তল্লাশিও চালিয়েছেন জড়ো হওয়া ওই লোকজন। তেমনই ছোট যাত্রীবাহী গাড়ি-লরি-ম্যাটাডর পর্যন্ত বাদ যায়নি। রেহাই পাননি হেলমেট পরে থাকা মোটরবাইক চালক বা আরোহীরাও। এরই মধ্যে এক মোটরবাইক চালককে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। তৃণমূলের কিছু কর্মীকে বলতে শোনা গিয়েছে, “সিপিএমকে সেতু পার হতে দেব না।’’
এরই মধ্যে খবর আসে, সিপিএম বড় মিছিল নিয়ে আসছে। তাঁদের মধ্যে বেশ কিছু আদিবাসীর হাতে তির-ধনুক রয়েছে। তৃণমূলের জমায়েত কিছুটা চিন্তায় পড়ে। ব্লক দফতরে দাঁড়িয়ে থাকা তৃণমূল বিধায়ক পুলিশের কাছে ছুটে যান। পুলিশের দু’টি গাড়ি সিপিএমের মিছিল আটকাতে ছোটে। নতুনগ্রামের কাছে এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) শৌভনিক মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ গিয়ে সিপিএমের মিছিল আটকায়। অমলবাবুর দাবি, “ধারান থেকে আমাদের মিছিলটি বের হয়। নতুনগ্রামের কাছে এসডিপিও মিছিলটি আটকে দেন।” পুলিশও তৃণমূলের বিধায়ক ও অন্য নেতৃত্ববৃন্দকে জানিয়ে দেয়, মনোনয়ন জমা নিয়ে কোনও রকম গোলমাল বরদাস্ত করা হবে না।
এর পরেই বিধায়ক সিদ্ধান্ত নেন, সিপিএম প্রার্থীদের উপরে যাতে কোনও ‘আঁচড়’ না পড়ে, তা তিনি নিজে থেকে নিশ্চিত করবেন। সেই মতো নতুনগ্রামের কাছে চলে যান নেপালবাবু। ট্রাক্টরে চেপে সিপিএম প্রার্থীরা ব্লক অফিসে যান। তার আগে একটি মোটরবাইকে ছিলেন বিধায়ক। ব্লক দফতর থেকে দু’শো মিটার দূরে গাড়ি থেকে নেমে সিপিএম প্রার্থীরা বিধায়কের সঙ্গে ব্লকে ঢোকেন।
সিপিএমের প্রার্থী শরৎ মাজিলা, পুতুল সাঁতরাদের কথায়, “গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ লক্ষণ। এ বার ভোটটা সুষ্ঠুভাবে হলেই ভাল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy