পঞ্চায়েত ভোটের পরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এমন অভিযোগ হাওয়ায় উড়ছে। এ বার হাতেনাতে প্রমাণ মিলল। অভিযোগ, জয় ঘোষণার পর বিজয়ী প্রার্থীকে পরাজিত ঘোষণা করা হয়েছে। জয়ের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে পরাজিত প্রার্থীকে।
মথুরাপুরে দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোটে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন একদা তৃণমূল মহতাবুদ্দিন গাজি। ২০০৮ এবং ২০১৩ সালের নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, এ বারের নির্বাচনের আগে দল তার কাছে টাকা দাবি করে। মহতাবুদ্দিনের ভাষায়, ‘‘টিকিট বিক্রি করতে চেয়েছিল তৃণমূল। রাজি হইনি। নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিই।’’ ১৭ মে নির্ধারিত সময়ে ভোট গণনা কেন্দ্রে পৌঁছন মহতাবুদ্দিন। গণনার পর তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বিপক্ষ তৃণমূলের সাহাবুদ্দিন পাইক তাঁর কাছে ১৫১ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। এর পর গণনাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যান মহতাবুদ্দিন। অভিযোগ, এর খানিক পরেই তৃণমূলের সাহাবুদ্দিন পাইককে জয়ের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। জানানো হয় ৭ ভোটে জিতেছেন সাহাবুদ্দিন।
সে দিন বিকেলেই মহতাবুদ্দিন নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ঢুকে ফলাফল পরীক্ষা করেন। দেখা যায়, সেখানে তখনও মহতাবুদ্দিনকেই ১৫১ ভোটে বিজয়ী দেখাচ্ছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের মন্তব্য, ‘‘রাজ্য জুড়ে ৬০ হাজার বুথে কোথায় কী হয়েছে বলা সম্ভব নয়। অভিযোগ এলে দেখা হবে।’’ মহতাবুদ্দিনের দাবি, অভিযোগ জানানোর সুযোগই পাননি তিনি। মঙ্গলবার কমিশনকে চিঠি পাঠাবেন।
১৭ মে, ২০১৮। বিকেল ৪টে ৫ মিনিটে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য।
অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোচনা শুরু হতেই দুষ্কৃতীরা তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করে। ভেঙে দেওয়া হয় ৬টি বাইক। পুকুরে ফেলে দেওয়া হয় ১টি অটো। এর পরে মথুরাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মহতাবুদ্দিন। অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের না ধরে তাঁকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। বলা হয় জনৈক আলতাব লস্কর তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র-সহ দাঙ্গা, বেআইনি জমায়েত, হত্যার চেষ্টা, উস্কানিমূলক কাজকর্ম-সহ বেশ কয়েকটি ধারা রুজু হয় তাঁর বিরুদ্ধে। রবিবার ডায়মন্ড হারবার আদালতে তাঁকে তোলা হয়। কিন্তু সেখানে অভিযোগকারী আলতাব জানান, তাঁর অগোচরেই মহতাবুদ্দিনের নামে এ সব অভিযোগ রুজু হয়েছে। আনন্দবাজার পত্রিকাকে আলতাব বলেন, ‘‘এলাকার ছেলেরা অভিযোগপত্রে টিপ সই করিয়ে নিয়েছিল। মহতাবুদ্দিনের সঙ্গে তেমন কোনও বিবাদই হয়নি।’’ এ বিষয়ে মথুরাপুর থানার তরফ থেকে বলা হয়, নির্বাচনের ফলাফল নিয়েই দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়েছিল। ওরা নিজেরাই বিষয়টি মিটিয়ে নিয়েছে। ফলাফল নিয়ে কেবল মথুরাপুর নয়, পার্শ্ববর্তী মন্দিরবাজারেও বেশ কিছু সমস্যার খবর তাঁরা পেয়েছেন। তৃণমূলের সাহাবুদ্দিনের বক্তব্য, ‘‘পুরোটাই ভাঁওতা। পরিকল্পনামাফিক অশান্তি করছেন মহতাবুদ্দিন।’’
আরও পড়ুন: ভোট বাতিলে মামলা, হলফনামা চায় কোর্ট
গোটা বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা রুজু করছেন মহতাবুদ্দিন। তাঁর আইনজীবী দীপাঞ্জন দত্ত জানান, এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে আরও অনেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ছুটির পর আদালত খুললে মহতাবুদ্দিনের হয়ে তিনি সওয়াল করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy