Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
State News

গণনা চলছে, বুথে ঢুকে পড়ে মারা হল ছাপ্পা

শিবনিবাস গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০১ নম্বর বুথের নির্দল প্রার্থী নীলাদ্রি সুকুলের অভিযোগ, বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ কয়েক জন যুবক গণনা কেন্দ্রে ঢুকে তাঁকে বেরিয়ে যেতে বলে। রাজি না হওয়ায় মারধর শুরু হয়। পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়েও মেলেনি। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ঘোষ সিসি ক্যামেরা ভেঙে দেন। মার খান এক ভোটকর্মীও। প্রার্থীদের সামনেই ছাপ্পা মারা শুরু হয়ে যায়।

গণনার দিনে ভোট। ভোটের দিনে গণনা। নদিয়ার মাজদিয়ায় গণনার দিনে পড়ল ছাপ্পা।

গণনার দিনে ভোট। ভোটের দিনে গণনা। নদিয়ার মাজদিয়ায় গণনার দিনে পড়ল ছাপ্পা।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ০৪:৪১
Share: Save:

ভোটের দিনই দেদার ছাপ্পা দেখেছিল গোটা রাজ্য। মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে এক বুথে শুধু ছাপ্পা মারা নয়, বাক্স খুলে ব্যালট খুলে গুনতেও দেখা গিয়েছিল দু’জনকে। আবার প্রতিপক্ষের ভোট বাতিল করাতে গণনার সময়েও যে ছাপ্পা মারা যায়, এ বার সেটা দেখা গেল নদিয়ায়!

শুধু কি তা-ই? শাসক দলের ছাপমারা কর্মীদের পাশাপাশি গণনা কেন্দ্রে জেলা প্রশাসনের নিয়োগ করা কর্মীদেরও নামেও এই দুষ্কর্মে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠল। এক তৃণমূল প্রার্থী-সহ দু’জনকে রাতেই গ্রেফতার করা হয়। জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি তথা বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস অবশ্য দাবি করছেন, ‘‘পুলিশ ভুল করছে। জোটই ঘোঁট পাকিয়েছে।’’

বৃহস্পতিবার নদিয়ার মাজদিয়ায় সুধীরঞ্জন লাহিড়ী কলেজে চত্বরে গোলমালটা শুরু হয়েছিল কয়েক জন নির্দল প্রার্থী এগিয়ে যেতেই। কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের গণনা চলছিল। ওই এলাকায় কিছু নির্দল প্রার্থীকে অঘোষিত সমর্থন জুগিয়েছিল বিরোধী দলগুলি।

শিবনিবাস গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০১ নম্বর বুথের নির্দল প্রার্থী নীলাদ্রি সুকুলের অভিযোগ, বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ কয়েক জন যুবক গণনা কেন্দ্রে ঢুকে তাঁকে বেরিয়ে যেতে বলে। রাজি না হওয়ায় মারধর শুরু হয়। পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়েও মেলেনি। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ঘোষ সিসি ক্যামেরা ভেঙে দেন। মার খান এক ভোটকর্মীও। প্রার্থীদের সামনেই ছাপ্পা মারা শুরু হয়ে যায়। নীলাদ্রির ভোট পাওয়া ব্যালটে বাড়তি ছাপ মেরে বাতিল করা হতে থাকে।

সোমবার ভোটের দিনেই বাক্স ভেঙে গোনা হচ্ছিল ব্যালট। মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে।

বাইরে খবর যেতেই বিরোধীরাও একজোট হয়ে কলেজে ঢোকার চেষ্টা করে। পুলিশকে লক্ষ করে ইট, বোমা পড়ে। পাঁচ পুলিশকর্মী আহত হন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমনদীপ কৃষ্ণনগর থেকে বড় বাহিনী নিয়ে এলে তাঁদের লক্ষ করেও বোমা ছোড়া হয়। লাঠি চালিয়ে, টিয়ার গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করা হয়। এরই মধ্যে ছাপ্পা মারা শেষ করে পালিয়ে যায় ওই যুবকেরা।

আরও পড়ুন: গণতন্ত্র আছে এখানে তাই ভোট সুষ্ঠু : মমতা

নীলাদ্রির অভিযোগ, “গণনাকেন্দ্রের জল-টিফিন সরবরাহের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা ছাপ্পা মেরেছে। পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখেছে।” গণনা-কর্মীরাও জানান, তাঁদের সামনেই শ’তিনেক ব্যালটে ছাপ্পা মারা হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা গণনা করবেন না। পরে কাজ শুরু হলেও ওই বুথের গণনা রাত পর্যন্ত স্থগিতই রয়েছে। একই ভাবে কালীগঞ্জ ও চাপড়ার গণনা কেন্দ্র থেকেও বিরোধীদের বার করে দিয়ে ছাপ্পা মারার অভিযোগ উঠেছে, যা অস্বীকার করেছেন শাসক দলের নেতারা।

গণনার দিন ভোটের স্ট্যাম্প ওই যুবকদের হাতে এল কী করে?

বিরোধীদের দাবি, কিছু জায়গায় বুথ দখল বা ব্যালট বাক্স লুটের সময়ে স্ট্যাম্প সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। তবে কৃষ্ণগঞ্জে তেমন কিছু ঘটেনি। সে ক্ষেত্রে ব্লক অফিসের স্টোর রুম থেকে তা বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত থেকে ব্লকস্তরের কর্তারা শুধু বলেন, ‘‘খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’ পুলিশ জানায়, ১০১ নম্বর বুথের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ঘোষ এবং কাউন্টিং এজেন্ট সাহেব ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোলাপি জামা পরা সাহেবকেই ক্যামেরায় ছাপ্পা মারতে দেখা গিয়েছিল।

—নিজস্ব চিত্র ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE