আর্জি: নির্বাচনী-হিংসা রুখতে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে লিফলেট বিলি করছেন আসাদুদ্দিন সাদিক। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
ছাপানো পোস্টার হাতে পথে নেমেছেন আসাদুদ্দিন সাদিক।
দোরে-দোরে ঘুরছেন তিনি। হাত জোড় করে বলছেন— ‘‘ভোট আমার স্ত্রীকে কেড়ে নিয়েছে। ছেলেমেয়েদের নিয়ে কী ভাবে দিন কাটছে, ভাবতেও পারবেন না। ভোটে হিংসা না-থামলে আপনারও এই পরিণতি হতে পারে।’’
নিজের গাঁটের কড়ি খরচ করে পোস্টার ছাপিয়েছেন সাদিক। সেই পোস্টার বলছে: একটি ভোটের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।
সাদিক একা নন। সঙ্গে রয়েছে তাঁর নবম শ্রেণিতে পড়া মেয়ে সাবিহা শবনম। বছর পাঁচেক আগে যখন ভোটের লাইনে বোমা পড়ে, মায়ের পাশেই ছিল সে। মায়ের কোলে তার ভাই, বছরখানেকের সুলতান আবিদ।
গত ২০১৩ সালের ২২ জুলাই ছিল পঞ্চায়েত নির্বাচন। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় কাজিসাহা প্রাথমিক স্কুলে বুথের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন বছর আঠাশের নূরজাহান বিবি। পুলিশও ছিল। হঠাৎ গোলমাল শুরু হয়। নূরজাহানের বাঁ দিকে বোমা এসে পড়ে, সুলতান ছিল ডান কোলে। তফাতেই ছিলেন স্বামী আসাদুদ্দিন।
কাজিসাহা হাই মাদ্রাসার ছাত্রী সাবিহা তখন পঞ্চম শ্রেণিতে। পড়া সে ছাড়েনি ঠিকই। তবে বাড়িতে রান্না সেরে স্কুলে যেতে হয়। বোন রুকাইয়া মাহজাবিন মামাবাড়িতে। চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছে সে। ছ’বছরের সুলতান শিশু মাদ্রাসায় পড়ে।
আরও পড়ুন: ‘দু’মিনিটে শিকার উৎসব বন্ধ করতে পারতেন’, মমতাকে বাঘা খোঁচা মেনকার
কবিরাজি ওষুধের কারবারি সাদিক এখন বদ্ধপরিকর, যে ভাবেই হোক ভোটে হিংসা আটকাতেই হবে। তাই লিফলেট পোস্টার ছাপিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন তিনি। পোস্টারে দু’টি ছবি। এক দিকে ছেলেমেয়ে নিয়ে নূরজাহান আর এক দিকে তাঁর নিস্পন্দ দেহ। কাজিসাহা থেকে বেলডাঙা বাজার, ব্লক অফিস চত্বর থেকে
পূর্বপাড়ার মাঠঘাটে ঘুরছেন তাঁরা। ভোট আর দেন না সাদিক বা পরিবারের কেউ।
সে দিন যারা বুথে বোমা ছুড়েছিল, অভিযোগ, তারা সিপিএমের আশ্রিত। মামলার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। সিপিএমের বেলডাঙা এরিয়া কমিটির সদস্য গফুর শেখের অবশ্য দাবি, তাঁরাই আগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, পরে ‘প্রতিহত’ করেন। তাঁরা শান্তিরই পক্ষে। কংগ্রেসের বেলডাঙা ১ সভাপতি ইসরাইল শেখ বা তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য মনিরুল হকেরাও শান্তির কথাই বলছেন।
তবু পঞ্চায়েত ভোটের আগে হিংসায় শঙ্কিত সাদিক। বলেন, ‘‘ভোট দিন, রাজনীতি করুন। শুধু মনে রাখবেন, আপনার কিছু হলে সংসার ভেসে যাবে। আর কারও কিছু যাবে-আসবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy