Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বারবার কেন চোপড়াই

শাসক-বিরোধীদের চাপানউতরে বিরক্ত তিন এলাকার অনেকেই। ওই তিন এলাকার শতাধিক বস্ত্র বিক্রেতার মাথায় হাত পড়েছে। কয়েকজন জানান, গোলমালের জেরে অন্তত ১০ লক্ষ টাকার কেনাবেচা মার খেয়েছে। কী ভাবে লোকসান সামলাবেন, সেটা ভেবেই ভেঙে পড়েছেন ফুটপাতের বস্ত্র বিক্রেতাদের অনেকেই।

টহল: চোপড়ার লালবাজারে গন্ডগোলের পরে পুলিশের টহল। থমথমে গোটা এলাকা। বন্ধ হয়ে যায় কিছু দোকানপাটও। নিজস্ব চিত্র 

টহল: চোপড়ার লালবাজারে গন্ডগোলের পরে পুলিশের টহল। থমথমে গোটা এলাকা। বন্ধ হয়ে যায় কিছু দোকানপাটও। নিজস্ব চিত্র 

মেহেদি হেদায়েতুল্লা
চোপড়া শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৮ ০২:২৯
Share: Save:

চৈত্রশেষের বিক্রি ভাল হয় বলে সকাল-সকাল দোকানপাট খুলেছিল লক্ষ্মীপুর, লালবাজার, দাসপাড়ায়। ইসলামপুরের চোপড়ার মূল বাজার ওই তিনটিই। কিন্তু, লক্ষ্মীপুরে দোকান খোলার সময়েই বোমা, গুলির আওয়াজে কেঁপে ওঠে চারদিক। ঝটপট সব দোকান বন্ধ। কিছু ক্ষণের মধ্যে গোলমাল ছড়ায় ৪ কিলোমিটার দূরের লালবাজারে। সেখানেও গুলি-বোমা-কাঁদানে গ্যাসে তুলকালাম ঘটে। খানিক বাদেই দাসপাড়ায় হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। দিনের শেষে মাথায় হাত এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের। নববর্ষের বাজারটাই মাটি। এমনকী, ওষুধের দোকান অবধি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

তাতেই আতঙ্কে সুনসান এখন চোপড়া। রাস্তাঘাটে লোকজন হাতে গোনা। নববর্ষের আগের দিন সন্ধ্যায় যে বাজারগুলিতে উপচে পড়া ভিড় থাকে সেখানে শুধুই লাঠিধারী পুলিশ। রাইফেল উঁচিয়ে টহল দিচ্ছে তারা। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী, বাসিন্দারা ক্ষোভে ফুঁসছেন। তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন, পঞ্চায়েত ভোট এলেই কেন প্রতি পদে মারপিট, গুলি-বোমা, লাঠালাঠি হবে! কেনই বা পুলিশ প্রশাসন তা রুখতে ব্যর্থ হয়? শাসক-বিরোধী লড়াইয়ে আর কত দিন রক্ত ঝরবে চোপড়ায়?

ক্ষোভ-আতঙ্কের ছবিটা মানছেন তৃণমূল ও কংগ্রেস উভয় দলেরই নেতারাই। কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি অশোক রায় মনে করেন, পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে তৎপরতা দেখালেই এ ধরনের রক্তারক্তি বন্ধ হয়ে যাবে। তৃণমূলের বিধায়ক হামিদুল রহমান দূষেছেন কংগ্রেসকেই। তাঁর মতে, কিছু এলাকায় শক্তি আছে বলে কংগ্রেসের একাংশ বোমা-গুলি নিয়ে ভোটে জিততে চায় বলেই গোলমাল বাঁধছে। তবে একান্তে উভয় দলের অনেকেই মানছেন, ভোটের সময়ে ‘স্পর্শকাতর’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও চোপড়ায় বাড়তি পুলিশি নজরদারি হচ্ছে না। সেই সুযোগে দুষ্কৃতীদের একাংশ সক্রিয় হওয়ায় জনজীবন থমকে যাচ্ছে।

শাসক-বিরোধীদের চাপানউতরে বিরক্ত তিন এলাকার অনেকেই। ওই তিন এলাকার শতাধিক বস্ত্র বিক্রেতার মাথায় হাত পড়েছে। কয়েকজন জানান, গোলমালের জেরে অন্তত ১০ লক্ষ টাকার কেনাবেচা মার খেয়েছে। কী ভাবে লোকসান সামলাবেন, সেটা ভেবেই ভেঙে পড়েছেন ফুটপাতের বস্ত্র বিক্রেতাদের অনেকেই।

শনিবার সকাল থেকে ৭-৮টি বাইক নিয়ে জনা পনেরো যুবক কী ভাবে লাঠিসোটা উঁচিয়ে বাজারের মধ্যে দাপাচ্ছেন, সেই দৃশ্যের বর্ণনা দেন এক গৃহবধূ। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েকে নিয়ে নববর্ষের জামাকাপড় কিনতে দোকানে ঢুকেছিলাম। হঠাৎ বোমার আওয়াজ। দোকান বন্ধ। অলিগলি হয়ে টোটো ধরে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছি।’’

কিন্তু, বারবার কেন চোপড়াই?

এই এলাকায় কংগ্রেস বরাবরই শক্তিশালী। অতীতে বাম আমলে ২০০৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে চোপড়ায় ১ জন সিপিএম নেতা খুনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৩ জন কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছিলেন। তার পরেও প্রতি ভোটে গোলমাল হয়েছে। এখন তৃণমূল জমানাতেও চোপড়ার ওই এলাকায় কংগ্রেসের প্রার্থীরা দল বেঁধে মনোনয়ন দিয়েছেন। কংগ্রেসের স্থানীয় নেতাদের কয়েকজন জানান, তিন দিন ধরে ঘিরনিগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের এক মহিলা প্রার্থী ও তাঁর স্বামীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামলেও তাঁদের হদিস মেলেনি। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, কংগ্রেস নিজেরাই প্রার্থীকে সরিয়েছে।

দোষারোপের বহর যত বাড়ছে, ততই যেন ভয় জাঁকিয়ে বসছে চোপড়ায়। শান্তি ফেরাতে সর্বদল বৈঠকের আর্জি জোরদার হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE