বন্ধুতা: দুই খুদে অভিনেতা নুর ইসলাম ও সামিউল আলম। দেগঙ্গায়। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।
বাড়ির উঠোনে পা দিলেই অভাবটা স্পষ্ট। টিভি আছে, চলে না। ফোন তো দূরস্থান। টাওয়ারও নেই। গ্রামে তাই জাতীয় পুরস্কারের খবরও নেই। শুক্রবার বিকেলে সেই পুরস্কার পাওয়ার খবর জেনেও হেলদোল নেই দুই খুদের। দিল্লি গিয়ে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিতে হবে শুনে কিছুটা বিস্ময়। ‘কেমন লাগছে’ জিজ্ঞেস করতেই ‘‘আমি উদিক যাই?’’ বলে ছাগলছানার পেছনে দে-দৌড়! অন্য জন ছুটল আম পাড়তে।
এক জনের বাবা কাঠুরে, অন্য জনের বাবা দর্জি। মাঠে-ঘাটের কঠিন জীবনে অভিনয়ের জায়গা কই? অথচ উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার প্রত্যন্ত গ্রামের এমন দুই ছেলে নুর আর আলমের হাত ধরে এ বার বাংলায় এল জাতীয় পুরস্কার। সেরা শিশুশিল্পীর।
দুই দস্যিকে দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন বারাসতের দুই বন্ধু। দু’জনেই ২৯। মানসমুকুল পাল
এবং অভিজিৎ সাহা। যথাক্রমে পরিচালক ও প্রযোজক। ছবির নাম, ‘সহজ পাঠের গপ্পো’। ইতিমধ্যেই নানা চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত এই ছবি।
আরও পড়ুন: রাজ্যে মদের দোকানের ঝাঁপ কি ভূতে খুলেছে!
বিভূতিভূষণের ‘তালনবমী’র অনুপ্রেরণায় মানসমুকুলের গপ্পো। দুই প্রধান চরিত্র, ছোটু আর গোপালের খোঁজে বহু গ্রাম চষেছেন। মায়াবী চোখের নতুন শিশুমুখ চাইছিলেন। কথায় যার সীমান্ত এলাকার টান। সেই ছেলের খোঁজে গিয়ে কখনও ছেলেধরা, কখনও কিডনি পাচারকারীর অপবাদ শুনতে হয়েছে। শেষমেশ দেগঙ্গার বেলপুরের পূর্ব চ্যাংদানা কাদরিয়া হাই মাদ্রাসা থেকে পান ‘ছোটু’ নুর ইসলামকে। আর বেড়াচাঁপার দেউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা পান ‘গোপাল’ সামিউল আলমের।
কিন্তু তাদের অভিনয় করানো! যারা ক্যাডবেরির বদলে আমের কুশি খায়, ছোটা ভীমকে চেনে না, দেব-জিৎ ‘আঙ্কলরা’ কোলে নেবেও শুনেও আহ্লাদিত হয় না। বাড়িতে রেখে প্রায় ৮ মাস ধরে দু’জনকে গড়েপিটে নিয়েছেন মানসমুকুল। তারপর বোলপুরের বিভিন্ন গ্রামে শ্যুটিং, দু’বছরের অক্লান্ত চেষ্টা। ফল? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোটদের এত সাবলীল অভিনয় বিরল।
মামাবাড়িতেই মানুষ নুর। কেউ ভ্যান চালান, কেউ আনাজ বিক্রেতা। দাদু সাজেত আলি মণ্ডল দিনমজুর। সংসারের অবস্থা এমনই যে, শ্যুটিং চলাকালীন নুরের সঙ্গে দাদু ছিলেন বলে তাঁদের বাড়িতে টাকাও পাঠাতে হয়েছে পরিচালককে। তবে মুম্বই চলচ্চিত্র উৎসবের ‘স্পেশ্যাল জুরি মেনশন’ বিভাগে পুরস্কার জেতার পর থেকেই খুদে হিরোদের ‘ডিম্যান্ড’ বেড়ে গিয়েছিল গাঁয়ে। নুর এখন ক্লাস ফাইভ, আলম এইট। আলম বলল, ‘‘চুল কাটতি গেলিউ তাকাই তাকাই দ্যাখে।’’ এ দিনের পর তো সেটা আরও বাড়বে! আলমের বাবা বলছেন, ‘‘ওকে কাজটা করতে না দিলে কী ভুল যে করতাম!’’
শীঘ্রই মুক্তি পাবে ছবি। অভিজিৎ বললেন, ‘‘আমি যে প্রযোজনা করছি, বাড়িতে মা-বাবাও জানত না। রাজ্য সরকার যদি ছবিটাকে করমুক্ত করে দেন, তা হলেই স্বস্তি।’’
বাঙালির ভাগ্যে
• সেরা বাংলা ছবি: বিসর্জন (পরিচালক-কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়)
• সেরা মহিলা কণ্ঠ: ইমন চক্রবর্তী (প্রাক্তন)
• সেরা গীতিকার: অনুপম রায় (প্রাক্তন)
• সামাজিক বিষয় নিয়ে সেরা ছবি: পিঙ্ক (পরিচালক-অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী)
• সেরা প্রথম ছবি: দীপ চৌধুরী (আলিফা)
• সেরা প্রোডাকশন ডিজাইন: সুব্রত চক্রবর্তী, অমিত রায় (২৪, তামিল)
• সেরা সাউন্ড মিক্সিং: অলোক দে (ভেন্টিলেটর, মরাঠি)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy