Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

‘বেটি বাঁচাও’ কি পারবে এ দেশের না-জন্মানো মেয়েদের বাঁচাতে?

‘বেটি বাঁচাও’-এর পর ‘বেটি দিখাও’? নিজের মেয়ের সঙ্গে ‘সেলফি’ তুলে পাঠাবার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশে যে শিশুকন্যা দ্রুত কমছে, সেই দিকে নজর টানার জন্য তাঁর এই চেষ্টা। কিন্তু সমস্যাটি এত তিক্ত, যে এমন মধুর দাওয়াই কতটা কাজ করবে তা নিয়ে ধন্দ থেকে যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

‘বেটি বাঁচাও’-এর পর ‘বেটি দিখাও’? নিজের মেয়ের সঙ্গে ‘সেলফি’ তুলে পাঠাবার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশে যে শিশুকন্যা দ্রুত কমছে, সেই দিকে নজর টানার জন্য তাঁর এই চেষ্টা। কিন্তু সমস্যাটি এত তিক্ত, যে এমন মধুর দাওয়াই কতটা কাজ করবে তা নিয়ে ধন্দ থেকে যায়।

শিশুকন্যা ভারতে কতটা সংকটে, তার একটা আন্দাজ দেয় জনগণনা। ২০১১ সালের গণনায় দেখা যাচ্ছে, প্রতি হাজার শিশুপুত্রের পাশাপাশি রয়েছে ৯১৮টি শিশুকন্যা। গত কয়েক দশক ধরে এই অনুপাত ক্রমশ কমেই যাচ্ছে, বাড়ছে না। এ ভাবে চলতে থাকলে ২০৪০ সালে দেখা যাবে, ভারতে কর্মক্ষম পুরুষদের চাইতে (২০-৪৯ বছর) থাকবে ২ কোটি কম মেয়ে। এই হল সংকটের তীব্রতা।

সংকটের জটিলতা এখানেই যে, শিক্ষিত, সম্পন্ন, শহুরে মানুষরাই শিশুকন্যাদের গর্ভে নিকেশ করছে বেশি। গ্রামের মানুষ, দলিত বা জনজাতির মানুষদের মধ্যে এই হার ঢের কম। আরও মুশকিল, যে পাঁচটি রাজ্যে শিশুকন্যার অনুপাত সব চাইতে কম, তার মধ্যে তিনটি (হরিয়ানা, পঞ্জাব, দিল্লি) রাজ্যে মাথাপিছু আয় জাতীয় গড়ের চাইতে বেশি। অর্থাৎ কন্যাপালনের আর্থিক বোঝা টানতে না পেরে বাধ্য হয়ে বাবা-মা নিকেশ করছেন মেয়েকে, এমন আদৌ নয়।


বিপন্ন এই শৈশবের মুক্তি কোথায়?

কন্যাভ্রূণ হত্যা বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও যাঁরা কাজটা অকাতরে করে চলেছেন, তাঁরা ডাক্তার। উচ্চমানের প্রযুক্তির ব্যবহারে ঝাঁ চকচকে প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রায় নিঃশব্দে কাজ সেরে চলেছেন তাঁরা। কয়েক কোটি কন্যা ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই ‘নেই’ হয়ে গেল, একজন ডাক্তারও দোষী সব্যস্ত হননি।

সামনে ১১ জুলাই, বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। এক সময় জনসংখ্যা বাড়ছে, এই আতঙ্ক তৈরি করা হত প্রতি জনসংখ্যা দিবসে। দুর্ভিক্ষ থেকে যুদ্ধ, সব সংকটকে চাপানো হত মেয়েদের সন্তানের জন্ম দেওয়ার প্রবণতার উপর।

বিশেষত গরিব মেয়েদের বন্ধ্যাত্বকরণ প্রায় জাতীয় মিশনের চেহারা নিয়েছিল। এখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, ‘জনবিস্ফোরণ’-এর তত্ত্বে অনেক গলদ রয়েছে। জনসংখ্যাবিদ বা ডেমোগ্রাফারদের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ, জনসংখ্যায় ভারসাম্য বজায় রাখা। মেয়েদের সংখ্যা ক্রমাগত কমতে থাকলে যা বজায় রাখা অসম্ভব।

রাষ্ট্র মেয়েদের জন্য উচ্চশিক্ষা বা রোজগারে যত সুযোগ তৈরি করছে, সমাজ তত মেয়েদের জন্মানোর পথই বন্ধ করে দিচ্ছে। এ যেন আগা কেটে গোড়ায় জল দেওয়া।

এই শিশুর জন্য এখনও বাসযোগ্য নয় এই পৃথিবী

মেয়েদের সংখ্যা কম হলে তার কী কী ভয়াবহ পরিণাম হতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা করেন অনেকে। রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্ট বলছে, বিবাহযোগ্য মেয়েদের সংখ্যা কমলে নারীপাচার বাড়বে, যৌন নির্যাতন বাড়বে। কিন্তু এই সব সম্ভাব্য ঝুঁকির চাইতেও বড় আশঙ্কা রয়েছে। তা হল গণতন্ত্রকে নিয়ে। গণতন্ত্রের মূল কথা, সকলকে সমান সুযোগ। মেয়েদের যদি জন্মানোর সুযোগই না দিতে পারে একটা রাষ্ট্র, তবে তার মৌলিক পরিচয় নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।

শিশুকন্যার সঙ্গে সহাস্য পিতার কয়েক লক্ষ সেলফি মোদীর ওয়েবসাইটে পোস্ট করলেও, তা দেশে মেয়েদের অবস্থার ছবিটা তুলে ধরবে না। দেশের ছবি আঁকছে সেই ‘মিসিং’ মেয়েরা, যারা একবারও হাসার সুযোগ পায়নি।

এই সংক্রান্ত আরও খবর...

বেটি বাঁচাও এই হোক আজকের অঙ্গীকার

#সেলফিউইথডটার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE