Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মাঝরাতে শনি পুজো দিলেন ভারতী

মন্দির কমিটির এক সদস্য জানান, পুজো চলাকালীন হাঁটু মুড়ে বসেছিলেন ভারতী। পুরোহিত রবীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঈশ্বর নিশ্চয়ই ওঁর মনস্কামনা পূরণ করবেন।”

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৮
Share: Save:

শীতের রাতে ঘড়ির কাঁটায় তখন একটা। মেদিনীপুর শহরের কুইকোটায় শনি মন্দিরের সামনে দাঁড়াল দুধসাদা গাড়িটা। গাড়ি থেকে নেমে সটান মন্দিরে ঢুকলেন ভারতী ঘোষ। বেরোলেন ঘণ্টাখানেক পরে। প্রতি শনিবারের মতোই।

আশপাশের ছবিটা অবশ্য এত দিনের শনিবারের থেকে একেবারে আলাদা। কোথাও পুলিশি নজরদারি নেই। ‘ম্যাডাম’কে দেখে পুলিশকর্মীদের স্যালুট ঠোকা নেই। নেই মন্দিরের সামনের রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ, বাইকের হেডলাইট নেভানোর জন্য পুলিশের নির্দেশ। এমনকী, শহরে এসে ভারতীর এক ছায়াসঙ্গী একজন পুলিশকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ওই পুলিশকর্মী ফোনটুকুও ধরেননি।

সব মিলিয়ে বছরের শেষ শনিবার বুঝিয়ে দিল প্রথমে বদলি, তার পর পুলিশের চাকরিতে ইস্তফা— এক লহমায় বদলে দিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুলিশ সুপারের জীবন।

আরও পড়ুন, বিভীষণদের নকশা ধরা পড়েছে: শুভেন্দু

জেলার পুলিশ সুপার থাকাকালীন প্রতি শনিবার রাতেই মেদিনীপুরের এই মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন ভারতী। ঘনিষ্ঠদের বলতেন, ঈশ্বর কখনও তাঁকে নিরাশ করেননি। বছর খানেক আগে গাড়ি উল্টোনোর পরেও প্রাণে বেঁচে যাওয়ায় ভারতী প্রতিক্রিয়া ছিল, ঈশ্বরের আশীর্বাদেই তাঁর প্রাণ বেঁচেছে।

গত ২৫ ডিসেম্বর জেলা পুলিশ সুপারের পদ থেকে ভারতীর বদলির নির্দেশ জারি হয়। তার আগের শনিবারও (২৩ ডিসেম্বর) এই মন্দিরে এসেছিলেন ভারতী। সে দিনও কুইকোটার ওই এলাকা পুলিশে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল। সন্ধে থেকে মন্দিরের সামনে মোতায়েন ছিল অন্তত ১০-১২ জন পুলিশকর্মী। রাত বাড়তেই মন্দিরের সামনে ব্যারিকেড। এই শনিবার সেই কুইকোটাই সুনসান। অভ্যাস মতো মন্দিরের সামনে দিয়ে বাইকের হেডলাইট নিভিয়ে যাচ্ছিলেন স্থানীয় অজয় দাস। মন্দির পেরনোর পরে তিনি বুঝলেন, পুলিশের নজরদারি নেই। অজয় বলছিলেন, “চিরদিন তো আর সকলের সমান যায় না। আমাদেরও অভ্যাসটা এ বার বদলাতে হবে।”

ভারতী অবশ্য অভ্যাস মতোই এই শনিবারও ফুল-মিষ্টি দিয়ে শনি মন্দিরে পুজো দিয়েছেন। মন্দির কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, পুজো চলাকালীন আগাগোড়া বিগ্রহের সামনে হাঁটু মুড়ে বসেছিলেন ভারতী। কারও সঙ্গে কথা বলেননি। পুজো শেষে প্রসাদ খেয়েছেন। পুরোহিত রবীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উনি (ভারতী) যেখানেই থাকুন, প্রতি শনিবার এই মন্দিরে আসেন। ঈশ্বর নিশ্চয়ই ওঁর মনস্কামনা পূরণ করবেন।”

তৃণমূল সরকারের অতি-আস্থাভাজন, প্রশাসনিক সভায় বারবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মা’ সম্বোধন করে চমকে দেওয়া ভারতী বরাবরই ছিলেন বিতর্কের কেন্দ্রে। বিরোধী শিবিরের চোখে তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার নন, বরং ছিলেন শাসক দলের তাবড় কোনও নেত্রী। সেই ভারতীকেই পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের পদ থেকে বদলি করে দেওয়ায় আলোড়ন পড়ে। কম গুরুত্বের পদে বদলির ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ভারতীও ইস্তফা দিয়ে দেন।

তারপর থেকে জল্পনা চলছে, চাকরি ছেড়ে এ বার তবে কী! শনিবার রাতে এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন ভারতী। শুধু পুজো দেওয়ার কথা মেনে বলেছেন, “ঈশ্বরের টানেই মন্দিরে গিয়েছিলাম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE