Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বন্‌ধের ছন্দপতন, তাই নরম গুরুঙ্গ

আগে তাঁর ডাকে স্তব্ধ হয়ে যেত পাহাড়। ২৪ ঘণ্টা তো নস্যি, তাঁর ইচ্ছেয় ১০৮ ঘণ্টার বন্‌ধও দেখেছেন পাহাড়বাসী। বুধবার সেখানেই যেন কিছুটা ছন্দপতন। ১২ ঘণ্টার বন্‌ধে জনজীবন থমকে গেলেও বিমল গুরুঙ্গ টের পেয়েছেন, গোটা দার্জিলিং আর তাঁর মুঠোয় নেই। বুঝেছেন, কিছুটা হলেও তাঁর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো শক্তি সঞ্চয় করে ফেলেছে রাজ্যের শাসকদল।

পুলিশি পাহারায় স্কুলের পথে পড়ুয়ারা। কার্শিয়াঙে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

পুলিশি পাহারায় স্কুলের পথে পড়ুয়ারা। কার্শিয়াঙে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

কিশোর সাহা
কার্শিয়াং শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০১
Share: Save:

আগে তাঁর ডাকে স্তব্ধ হয়ে যেত পাহাড়। ২৪ ঘণ্টা তো নস্যি, তাঁর ইচ্ছেয় ১০৮ ঘণ্টার বন্‌ধও দেখেছেন পাহাড়বাসী। বুধবার সেখানেই যেন কিছুটা ছন্দপতন। ১২ ঘণ্টার বন্‌ধে জনজীবন থমকে গেলেও বিমল গুরুঙ্গ টের পেয়েছেন, গোটা দার্জিলিং আর তাঁর মুঠোয় নেই। বুঝেছেন, কিছুটা হলেও তাঁর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো শক্তি সঞ্চয় করে ফেলেছে রাজ্যের শাসকদল। তাই বন্‌ধ ফুরনোর চার ঘণ্টা আগেই, বেলা ২টো নাগাদ সুর নরম করে তৃণমূলের সঙ্গে ফের আগের মতো ‘ভাব’ জমাতে আসরে নেমেছেন মোর্চা প্রধান।

এ দিন গুরুঙ্গ ছিলেন কালিম্পঙে। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘পুজোর আগে বন্‌ধ হলে পর্যটকদের সমস্যা হবে, সেটা আমিও বুঝি। তাই তো দ্রুত চা শ্রমিকদের বোনাস দেওয়ার দাবিতে মাত্র ১২ ঘণ্টার প্রতীকী বন্‌ধ ডেকেছিলাম।’’ একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বন্‌ধ ডাকিনি। বরং মিলেমিশে চলতে চাই। আমরা চাই রাজ্যের সঙ্গে আমাদের আগের মতো সুসম্পর্ক হোক।’’

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে এসে জিটিএ-র কাছে হিসেব চাওয়ায় দু’দিন আগেও তাঁর কড়া সমালোচনা করেছিলেন গুরুঙ্গ। মোর্চার অন্দরের খবর, কিন্তু বন্‌ধের দিন টুকরো-টুকরো ছবি দেখার পরে সুর পাল্টাতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। কেমন সেই ছবি? এ দিন ভোর ৬টার মধ্যেই দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পঙের রাস্তায় নেমে পড়েন ৩ মন্ত্রী জেমস কুজুর, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও গৌতম দেব। দার্জিলিঙের চকবাজারে কয়েকটি দোকান খোলে। কার্শিয়াঙে জিটিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রদীপ প্রধান, বিন্নি শর্মাকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ নিজে দাঁড়িয়ে একটি পেট্রোল পাম্প খুলিয়ে দেন। পরপর কয়েকটি দোকানও খুলে যায়। শাসক দলের লোকজনের অনুরোধে ও ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা দেখে অনেকে স্বেচ্ছায় দোকানের সাটার তুলে ফেলেন। তাতে হাততালিতে ভেসে যায় চারদিক।

কালিম্পঙে আর এক মন্ত্রী গৌতম দেবের মিছিলে উপচে পড়ে ভিড়। পর্যটক বোঝাই গাড়িও দুপুরের পরে চলতে শুরু করে। মোর্চার সব থেকে শক্ত ঘাঁটি দার্জিলিঙেও কড়া পুলিশ পাহারায় টয় ট্রেনের ‘জয় রাইড’ শুরু হয়। এবং সেই ট্রেন ছিল দেশি-বিদেশি পর্যটকে ভরা। ডেনমার্কের জোস অ্যান্ডারসনরা ১৮ জনের দল নিয়ে এসেছেন পাহাড় বেড়াতে।
বলছিলেন, ‘‘অতীতে একবার কাঠমাণ্ডুতে বন্‌ধের মুখে পড়ে ঘরে আটকে গিয়েছিলাম। এখানে কিন্তু অন্য অভিজ্ঞতা হল!’’

তত ক্ষণে পাহাড়ের তিন মহকুমায় পাঁচ জিটিএ সদস্য-সহ মোট তিনশো মোর্চা নেতা-কর্মীকে জোরজবরদস্তি বন্‌ধ করানো এবং গোলমালের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ খোদ দিনভর পাহাড়ের খবর নিয়েছেন। মোর্চার অন্দরের খবর, পাহাড়ের রাশ যে আর পুরোপুরি হাতে নেই, তা বুঝেই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে বিকেলের দিকে তিন মহকুমায় মিছিলের কর্মসূচি স্থগিত করে দেন। আর বেলা গড়াতেই গুরুঙ্গ সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে সুর নরম করেন। বলেন, ‘‘পর্যটকরা
পাহাড়ে আসুন। কোনও ঝুঁকি নেই। নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার।’’ একই সঙ্গে রাজ্যের দিকেও বাড়িয়ে দেন শান্তির হাত।

কিন্তু এ দিন বন্‌ধের পরে তৃণমূল বুঝে গিয়েছে, পায়ের তলায় মাটি পোক্ত তাদের। তাই গুরুঙ্গের বাড়ানো হাত ধরার ইচ্ছে যে তাঁদের নেই, সেটা বুঝিয়ে দিয়ে তৃণমূলের পাহাড় শাখার সভাপতি রাজেন মুখিয়া বলেন, ‘‘পাহাড়ে বিমল গুরুঙ্গ যে
শেষ কথা নন, তা মানুষ এ বার
বুঝিয়ে দিয়েছেন।’’

গুরুঙ্গেরও ভয়টা সেখানেই।

সহ প্রতিবেদন: দার্জিলিং থেকে রেজা প্রধান ও কালিম্পং থেকে অনির্বাণ রায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bimal Gurung Mamata Banerjee Bandh at Hills
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE