বিনয় তামাঙ্গ। ছবি: সংগৃহীত।
প্রকাশ গুরুঙ্গ দলবল নিয়ে চকবাজারে দাঁড়িয়ে ‘দোকান বন্ধ’ বললেই ঝাঁপ নেমে যেত। বিজনবাড়িতে বাজারে গিয়ে সতীশ পোখরেল ‘ঘর ভিতরো জনতা’ বললেই সুনসান হয়ে যেত রাস্তাঘাট। আবার কালিম্পঙের ডম্বর চকে দাঁড়িয়ে দাওয়া লেপচা চোঙা ফুঁকে কোনও ফতোয়া দিলে বিনা বাক্যব্যয়ে তা মেনে নিতে হতো। কার্শিয়াং স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে অনীত থাপা ‘গাড়ি রোকো’ বললেই মুহূর্তে সব থেমে যেত। দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং মিলিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার এমন ডাকসাইটে নেতার সংখ্যা জনা পনেরো। তাঁদের মধ্যে অনীত থাপা ও সতীশ পোখরেল বাদে বাকিরা এখনও বিনয় তামাঙ্গের দিকে ঝোঁকেননি। সেই অর্থে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও সকলকে পাশে পাননি তাঁরা। ফলে, বিমল গুরুঙ্গকে দল থেকে সাসপেন্ড করেও দুশ্চিন্তামুক্ত নন বিনয়-অনীত।
কেন্দ্রীয় কমিটির যে বৈঠকে গুরুঙ্গদের সাসপেন্ড করেছেন বিনয়রা, সেখানেও আসেননি অর্ধেকের বেশি সদস্য। কমিটি ছিল ৯২ জনের। তিন জন মারা গিয়েছেন, দল ছেড়েছেন আরও তিন। এখন কার্যকর সদস্য সংখ্যা ৮৬। তার মধ্যে ৩৭ জনকে নিয়ে বৈঠক করেন বিনয়-অনীত। সেই বৈঠকেই বিমল গুরুঙ্গ, রোশন গিরিকে ‘সাসপেন্ড’ করে নিজেরা সেই পদে বসেছেন বিনয়-অনীত। যাঁদের সামনে রেখে গুরুঙ্গ দীর্ঘদিন পাহাড়ে মর্জিমাফিক শাসন চালিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এখনও অবধি মাত্র দু’জনকে পাশে পেয়েছেন বিনয়। তাঁরা হলেন দার্জিলিঙের সতীশ পোখরেল, কার্শিয়াঙের অনীত থাপা।
বাকি যাঁদের দেখলেই ব্যবসায়ী-বাসিন্দারা সম্ভ্রমে কিংবা ভয়ে চুপসে যেতেন, তাঁদের মধ্যে ১৩ জন গুরুঙ্গের সঙ্গেই রয়েছেন। তাঁরাও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। সাসপেন্ড সদস্যদের বাদ দিলেও পাহাড়-ডুয়ার্স মিলিয়ে আরও ৩৬ জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রয়েছেন, যাঁরা বিনয়ের বৈঠকে যাননি। গুরুঙ্গ-শিবির এদের একজোট করে কোথাও একটা কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক করার ছক কষছে। বিনয়-অনীত অনুগামীদের সঙ্গে সংঘাতে না জড়াতে নিষেধ করেছেন গুরুঙ্গ। তাঁর একান্ত ঘনিষ্ঠ দার্জিলিঙের এক আইনজীবী জানান, পাল্টা বৈঠক করে বিনয়-অনীতকে বহিষ্কারের পরে বিষয়টিকে আদালত অবধি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিও চলছে।
তাই বিমলের দিকে ঝুঁকে থাকা দাপুটে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে টানতে গভীর রাত অবধি পাহাড়-সমতলে বৈঠক করে বেড়াচ্ছেন বিনয়-অনীত। দীর্ঘদিনের একান্ত সহচর হওয়ার সুবাদে গুরুঙ্গের হাতে কী পরিমাণ টাকা রয়েছে, সেই ধারণাও আছে বিনয়ের। উপরন্তু, দিল্লিতে প্রভাবশালী মহলের একাংশ যে গুরুঙ্গকে ‘জবরদস্ত সহযোগিতা’ করছে, তা-ও এখন স্পষ্ট। বিনয় বলেন, ‘‘সব কিছু মাথায় রেখেই এগোচ্ছি। শান্তিপ্রিয় পাহাড়বাসী আর অশান্তিকে সমর্থন করবেন না।’’
বিনয়-অনীত শিবিরের মাথায় তাই উদ্বেগের মেঘ থাকছেই। পাহাড়কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে রাজ্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া সত্ত্বেও এই মেঘ কবে কাটবে, তা কেউই বলতে পারছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy