Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্ব বাংলায় ঠাঁই এ বার বটতলারও

‘বটতলার বই’ ব্যাপারটা বাঙালি মাত্রেই জানেন। কেচ্ছার বই মানেই নাকি বটতলা সাহিত্য। কলকাতার ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন হরিপদ ভৌমিক।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:২০
Share: Save:

কলেজ স্ট্রিট নয়, বিশ্ব বাংলার বিপণন কেন্দ্রে সগৌরবে ভূষিত হচ্ছে বটতলা।

‘বটতলার বই’ ব্যাপারটা বাঙালি মাত্রেই জানেন। কেচ্ছার বই মানেই নাকি বটতলা সাহিত্য। কলকাতার ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন হরিপদ ভৌমিক। তাঁর কথায়, বটতলার ছাপা পঞ্জিকা সেই আমলে কলকাতার পাড়ায় পাড়ায় ঝাঁকায় করে বিক্রি করে বেড়াত ফেরিওয়ালারা। সেই পঞ্জিকার ফাঁকেই অন্তঃপুরে ঢুকে পড়ত তখনকার নানা কেচ্ছা-কাহিনি।

কিন্তু এটি ধারণা মাত্র। সুকুমার সেন থেকে গৌতম ভদ্র অনেকেই তালিকা দিয়ে জানিয়েছেন, উনিশ শতকে বটতলা প্রেসে কৃষ্ণদাস কবিরাজ থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্ত অনেকের লেখাই ছাপা হতো। ছিলেন গিরিশচন্দ্র থেকে বঙ্কিমচন্দ্র অনেকে। ছাপা হতো ভারতচন্দ্র, মুকুন্দরামও। ‘‘পুরাণ, পাঠ্যপুস্তক থেকে আয়ুর্বেদ, গার্হস্থ্য স্বাস্থ্য, সচিত্র রামায়ণ, মহাভারত সবই বটতলায় ছাপা হতো। বেরোত জনসংস্করণ, সচিত্র সংস্করণ, শোভন সংস্করণ ইত্যাদি হরেক এডিশন,’’ বলছেন গৌতমবাবু। বটতলা নিছক কেচ্ছা-প্রকাশক নয়, সে বাংলার ঐতিহ্য।

এই সব বইয়ের প্রথম প্রচ্ছদের ছবি নিয়ে ছাপা পোস্ট কার্ড, ব্যাগ, দেশলাই বাক্স থাকবে বিশ্ব বাংলার বিপণিতে। উদ্দেশ্য, সেই সময়ের বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। কারণ, স্বদেশি শিল্পকর্মকে চিনতে গেলে কালীঘাটের পটশিল্প থেকে বটতলার চিত্রকলাকে চেনা বা জানা জরুরি মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব বাংলার এক কর্তা জানাচ্ছেন, তাঁদের বিপণন কেন্দ্রে বহু আন্তর্জাতিক পর্যটক বাংলার শিল্পকর্ম কিনতে আসেন। তাঁদের কথা ভেবেই বটতলাকেও তাঁরা সংগ্রহের তালিকায় চিহ্নিত করেছেন।

সংগ্রহযোগ্য, অবশ্যই! চিৎপুর, মসজিদবাড়ি স্ট্রিটের বিভিন্ন প্রকাশন নিয়ে যে ‘বটতলা’, সেখানে কাঠ খোদাই করে আঁকা হত দেবদেবীর ছবি, সেখানে ছিল না ধর্মীয় ভেদাভেদ। কাজি সফিউদ্দিন নামে এক প্রকাশক তখন হরিমোহন কর্মকারকে দিয়ে ‘লায়লা মজনু’, ‘শাহনামা’ অনুবাদ করান। বটতলা নিঃসন্দেহে বঙ্গ সংস্কৃতির প্রবহমান ঐতিহ্য, কোনও কেচ্ছা বা খেউড়ের প্রকাশনা নয়। ‘‘বই আগে বটতলাতেই ছাপা হত। কলেজ স্ট্রিটে বইপাড়া এসেছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটরি’র হাত ধরে। ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে তাঁর বইয়ের বিপণন হত ওখান থেকেই,’’ বললেন গৌতমবাবু। বটতলার বই থেকেই তো এই ইতিহাসবিদ একদা উদ্ধার করেছিলেন ১৮৭৮ সালের বিজ্ঞাপন, ‘সতর্ক করা যাইতেছে যে বঙ্কিমবাবুর পুস্তকের উপর তাঁহার স্বাক্ষর থাকে। যাহাতে তাঁহার স্বাক্ষর নাই, এরূপ পুস্তক পাইলে আমরা ধৃত করিব।’ অতীতের যাবতীয় ভ্রান্ত ধারণা তছনছ করে সেই বটতলা এ বার অভিজাত বিপণিতে।

এটাই বাংলার ঐতিহ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE