Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
অভিযুক্ত শাসক দল

ত্রিপল দিতে গিয়ে রূপা ফিরলেন ‘ছিনতাইকারী’ হয়ে

বৃষ্টি মাথায় বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় গিয়েছিলেন ত্রা‌ণ বিলি করতে। ফিরেছেন ধাক্কাধাক্কি, গালিগালাজ হজম করে। পরে জানলেন, ইতিমধ্যে তাঁর নামে হার ছিনতাই এবং মারধরের অভিযোগ জমা পড়েছে থানায়!

হাবরার শ্রীপুরে হেনস্থার মুখে রূপা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

হাবরার শ্রীপুরে হেনস্থার মুখে রূপা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও সীমান্ত মৈত্র
কলকাতা ও বনগাঁ শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৫ ০৪:১১
Share: Save:

বৃষ্টি মাথায় বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় গিয়েছিলেন ত্রা‌ণ বিলি করতে। ফিরেছেন ধাক্কাধাক্কি, গালিগালাজ হজম করে। পরে জানলেন, ইতিমধ্যে তাঁর নামে হার ছিনতাই এবং মারধরের অভিযোগ জমা পড়েছে থানায়!

বৃহস্পতিবার দুপুরে হাবরা-অশোকনগরের ঝড়-বিধ্বস্ত এলাকায় রূপাদেবী-সহ বিজেপি নেতৃত্ব যেখানেই ত্রাণ নিয়ে গিয়েছেন, স্থানীয় মহিলা-পুরুষেরা গাড়ি ঘিরে ধরে ‘গো-ব্যাক’ ধ্বনি তুলেছে। রূপার গাড়ির কাচ ভাঙচুর হয়েছে। পিছন থেকে শাসক দলই এ সবের কলকাঠি নেড়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির। কিন্তু শেষমেশ তাঁর বিরুদ্ধে ছিনতাই এবং মারধরের অভিযোগ দায়ের হওয়ায় বিস্মিত রূপা।

সরাসরি শাসক দলের বিরুদ্ধে মুখ না খুললেও রূপা বলেন, ‘‘এর থেকে আশ্চর্যের কিছু হয় বলে আমার মনে হয় না।’’ বিজেপি নেত্রীর কথায়, ‘‘আমি যেখানেই যেতে চাইছি, কিছু লোকজন আমাকে বাধা দিচ্ছেন। আবার অনেক মানুষ আমাকে চাইছেনও। অথচ, তাঁদের কাছে আমি এ দিন এগোতেই পারলাম না। আমাকে ধাক্কা দেওয়া হল, হেনস্থা করা হল। পুলিশ পর্যন্ত আমাকে রক্ষা করতে পারছে না, এ রকম যখন একটা পরিস্থিতি— তখন আমার নামে মারধর, হার ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠছে!’’

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে ‘লড়াকু নেত্রী’ হিসেবে রূপা যতই নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন, ততই শাসক দলের কোপে পড়ছেন বলে মনে করেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। এর আগে নিউ আলিপুরে প্রচারে গিয়ে হেনস্থা হতে হয়েছিল রূপাকে। সে বারও রূপার বিরুদ্ধেই খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করে পুলিশ। শাসক দল যে ভয় পেয়েই বার বার এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছে, এ ব্যাপারে এক রকম নিশ্চিত বিজেপি নেতৃত্বের বড় অংশ। বস্তুত, গত চার বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই মিথ্যা মামলায় তাঁদের নেতা-কর্মীদের ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ বাম থেকে বিজেপি এবং কংগ্রেস সব বিরোধী দলেরই। আসানসোলে লোকসভা ভোটের আগে প্রচার-পর্বে বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় থেকে শুরু করে সাত্তোরের নির্যাতিতা মহিলার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের— এমন নজির আছে ভুরি ভুরি। মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই সিপিএম নেতা গৌতম দেব সম্প্রতি পুলিশের বাড়িতে পোস্টার মারার কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। বিরোধীদের দাবি, এ দিন হাবরার ঘটনায় ফের প্রমাণ হল, শাসক দলের অস্বস্তি হলেই বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার ধারা অব্যাহত।

এ দিন অশোকনগর-হাবরায় গিয়ে রূপাদেবীকে যে ভাবে হেনস্থা হতে হয়েছে, তা নিয়ে হাবরা থানায় মৌখিক অভিযোগ জানিয়ে বিকেলের দিকে এলাকা ছেড়েছিলেন তিনি। পরে জানতে পারেন, সন্ধের দিকে তাঁর নামে জনৈক নীলিমা দে এবং আরও এক ব্যক্তি পৃথক ভাবে হার ছিনতাই ও মারধরের দু’টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই একই থানায়।

উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ কিন্তু এ দিন তিন জন মহিলা পুলিশ কর্মী সর্বক্ষণ ঘিরে ছিলেন রূপাদেবীকে। ছিলেন অন্য পুলিশ কর্মীরাও। ডিএসপি (সদর) দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও ছিলেন বিজেপি নেত্রীর নিরাপত্তা দেখভাল করতে। কোথাও কোথাও বিক্ষোভের সামনে কার্যত অসহায় দেখায় পুলিশ কর্মীদের। রূপাকে এক জায়গায় গাড়ি থেকে নামতে পর্যন্ত দেননি তাঁরা।

প্রশ্ন হল, পুলিশ-বেষ্টিত রূপা কী ভাবে ছিনতাই কিংবা মারধর করার সুযোগ পেলেন? তা হলে কী অন্য কোনও চাপে পড়ে পুলিশকে অভিযোগ নিতে হল? এ প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ কর্তাদের মুখে কুলুপ।

আর কী বলছে তৃণমূল-শিবির?

হাবরার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের জবাব, আমরা কিছু করিনি। যাদের সঙ্গে ওঁরা ওই ব্যবহার করেছেন, তাঁরাই অভিযোগ জানিয়েছেন।

তবে রূপার ত্রাণ নিয়ে যাওয়া এবং দিনভর দফায় দফায় হেনস্থা হওয়া প্রসঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়বাবু আগে বলেছিলেন, ‘‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে আমরাই সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু বুধবার ঘটনার পরে ওখানে কাউকে দেখা যায়নি। এখন ত্রাণ বিলির নামে দু’টো বিস্কুট, আর চারটে ত্রিপল আনার ব্যাপারটা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ভাল ভাবে নেননি। তাঁরাই প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এই ঘটনায় আমাদের দলের কোনও ভূমিকা নেই।’’

এ দিন রূপাদেবীকে যে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল, সেখানে তৃণমূলের পতাকা ছিল না। নেতা-কর্মীদেরও দেখা মেলেনি। তাঁরা কেউ কেউ দাঁড়িয়ে ছিলেন একটু দূরে। রূপাদেবীদের কনভয়ের পিছনে তৃণমূলের পরিচিত মুখের সারিকে মোটর বাইকে দেখা গিয়েছে। রূপাদেবী বলেন, ‘‘ত্রাণ দিতে এসেছিলাম। সবই নিজের সামর্থ্য মতো, নিজের টাকায় কেনা। শাসক দলের কিছু লোক তা করতে দিল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE