Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

বিহারে বিজেপি-র ধাক্কা বড় স্বস্তি দিল মমতাকে

বিহারে নীতীশ কুমারের বিরাট জয়ের পর কেন্দ্রে বিজেপি-বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ জোট আরও পোক্ত হবে বলে মনে করছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। পাশাপাশি তাঁদের দাবি, প্রতিবেশী বিহারের ভোটের বার্তা কিছুটা হলেও পৌঁছবে পশ্চিমবঙ্গে।

অগ্নি রায়
নয়া দিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৫ ১৯:৫৮
Share: Save:

বিহারে নীতীশ কুমারের বিরাট জয়ের পর কেন্দ্রে বিজেপি-বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ জোট আরও পোক্ত হবে বলে মনে করছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। পাশাপাশি তাঁদের দাবি, প্রতিবেশী বিহারের ভোটের বার্তা কিছুটা হলেও পৌঁছবে পশ্চিমবঙ্গে। এক কথায়, বিহারে ‘মোদী হাওয়া’ মুখ থুবড়ে পড়ার পর, আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে বিজেপি খাতাই খুলতে পারবে না— এমনটাই দাবি করছেন তৃণমূলের একটি বড় অংশ।

আজ বিহারের গণনা শেষ হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইটারে অভিনন্দন জানিয়েছেন নীতীশ কুমার আর লালুপ্রসাদকে। মহাজোটকে অভিনন্দন জানানোর সুযোগে বিজেপি-কে বিঁধতেও ছাড়েননি মমতা। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ট্যুইটারে লেখেন, ‘অভিনন্দন নীতীশজী, লালুপ্রসাদজী এবং আমার বিহারের ভাইবোনেরা। এই জয় সহিষ্ণুতার। এটি অসহিষ্ণুতার পরাজয়।’’ প্রায় একই সঙ্গে দলের পক্ষ থেকে বিহারের ফলাফলকে স্বাগত জানিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়েন বলেন, ‘বিজেপি হারল, দেশ রক্ষা পেল।’

পরে দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীতীশ কুমার, অরবিন্দ কেজরীবাল এবং আরও কয়েক জন নেতা ইতিমধ্যেই সংসদের বাইরে এবং ভিতরে নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয় করতে শুরু করে দিয়েছেন। এই বন্ধন আরও শক্তিশালী হবে। অন্যান্য অনেক দল এতে যোগ দেবে।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল নেতৃত্ব এটা হিসাবের মধ্যে রাখতে চাইছেন যে, বিহার সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে একটি বড় বিহারি ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। উত্তর দিনাজপুর, শিলিগুড়ি, ডুয়ার্স এলাকায় বিহারি জনসংখ্যা যথেষ্ট। এ ছা়ড়া কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনাতেও কয়েক লাখ বিহারি বসবাস করেন। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে নীতীশের দলকে এক বা দু’টি আসন ছেড়ে দেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে দলীয় অন্দরমহলে। সে ক্ষেত্রে বড়বাজার এলাকাতে লালুপ্রসাদকেও একটি আসন দিতে পারে তৃণমূল।

গত দেড় বছর ধরে কেন্দ্রে একটি অকংগ্রেসি, অবিজেপি ধর্মনিরপেক্ষ জোট গঠনের জন্য সক্রিয় দৌত্য করে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কয়েক দফায় তিনি বৈঠক করেছেন শরদ যাদব, অরবিন্দ কেজরিবাল, লালুপ্রসাদ, সপা এবং বসপা নেতাদের সঙ্গে। স্বর তুলেছেন রাজ্যগুলির প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে। তবে এই ফ্রন্ট গঠনের ক্ষেত্রে বাম দল বরাবরই তাঁর কাঁটা হয়ে থেকেছে। বাম দল যেহেতু মমতার কাছে রাজনৈতিক ভাবে অচ্ছ্যুৎ, তাই তাকে বাইরে রেখেই দিল্লির অঙ্ক কষতে হচ্ছে মমতাকে। তবে আজ নীতীশ-লালুর এই বিরাট জয়ে মমতার বিজেপি-বিরোধী মঞ্চ অনেকটাই জোর পেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

পাঁচ সপ্তাহ আগেই রাজধানীতে অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিবাল। মোদী সরকারকে চাপে ফেলাটাই ছিল উদ্দেশ্য। মমতা তাতে উপস্থিত থাকলেও আসতে পারেননি নীতীশ। বিহারের নির্বাচন নিয়ে তাঁর ব্যস্ততা তখন তুঙ্গে। তিনি না এলেও চিঠি দিয়ে অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন সে দিন। তবে সেখানে মমতা এবং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা মানিক সরকার ছাড়া কেউই না-আসায় সেই সম্মেলন কার্যত ব্যর্থ হয়েছিল। মমতা এবং মানিক কেউ কারও মুখোমুখিও হননি। দু’জনেই পৃথক ভাবে বৈঠক করেছিলেন কেজরীবালের সঙ্গে। এ বার মমতার চেষ্টা থাকবে বিভিন্ন জাতীয় বিষয়গুলি নিয়ে নীতীশ এবং লালুকে (যাঁরা এই মুহূর্তে বিজেপি বিরোধিতার সবচেয়ে সফল ব্র্যান্ড) সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগা।

বিহারে বিজেপি তথা মোদী বিরাট ধাক্কা খাওয়ার পর গোটা দেশে তাদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিঃসন্দেহে কিছুটা খর্ব হয়েছে। রাজনৈতিক শিবিরের মতামত, এটি মমতা তথা পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের পক্ষে যথেষ্ট স্বস্তিজনক। কেননা, বিহার ভোটের পর রাজ্যসভায় বিজেপি-র শক্তি বাড়ানোর যে স্বপ্ন ছিল, তা ভঙ্গ হয়েছে। ফলে সংসদে বিল পাশ করানোর স্বার্থে আঞ্চলিক অবিজেপি দলগুলির উপর নির্ভরতা মোদী সরকারের বাড়বে বই কমবে না। তাই এই পরিস্থিতিতে সারদা কেলেঙ্কারির জেরে সিবিআই তদন্ত নিয়ে তৃণমূলকে খুব বেশি চাপের মধ্যে ফেলা মোদীর পক্ষে সম্ভব হবে না বলেই মনে করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE