Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মহামিছিল করে তৃণমূল উৎখাতের ডাক বিজেপির

দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ ডাক দিয়েছিলেন, বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখেই ‘লং জাম্প’ দিতে হবে। শাহের রাজ্য সফরের আগের দিন লালমাটি থেকে সক্রিয় হতে শুরু করল বিজেপি।

মুষ্টিবদ্ধ: সিউড়িতে বিজেপির মহামিছিল।

মুষ্টিবদ্ধ: সিউড়িতে বিজেপির মহামিছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:৪৬
Share: Save:

দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ ডাক দিয়েছিলেন, বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখেই ‘লং জাম্প’ দিতে হবে। শাহের রাজ্য সফরের আগের দিন লালমাটি থেকে সক্রিয় হতে শুরু করল বিজেপি। সিউড়িতে মহামিছিল করে কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষেরা হুমকি দিলেন, রাজ্য থেকে তাঁরা তৃণমূলকে উৎখাত করে ছাড়বেন। শাসক দলের গুন্ডাগিরি রোখার জন্য প্রয়োজনে অস্ত্র ধরতেও তারা পিছপা হবেন না। তৃণমূল অবশ্য গেরুয়া শিবিরের হুমকি উড়িয়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে, তর্জন-গর্জন না করে মাঠে নেমে দেখান।

রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ মনে করছে, বীরভূম হিমশৈলের চূড়া মাত্র! রাজ্য জুড়েই এখন বিজেপির উত্থান শুরু হয়েছে। লোকসভা ভোটের পর থেকেই বীরভূমে যেহেতু বিজেপির জমি কিছুটা তৈরি ছিল, তাই সেখানে প্রতাপ দেখানো কৈলাস, দিলীপবাবুদের পক্ষে তুলনায় সহজ হয়েছে। লোকসভা ভোটের পর থেকে তৃণমূল-বিজেপির টানা সংঘর্ষে রক্তাক্ত হয়েছিল বীরভূমের মাটি। গত পঞ্চায়েত ভোটের পরে ওই জেলায় অনুব্রত মণ্ডলদের দাপটে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের একাংশ নাম লিখিয়েছিল গেরুয়া শিবিরে। কিন্তু পরে তারা আবার ফিরে যায় শাসক দলেই। ধাক্কা খায় বিজেপি। উত্তরপ্রদেশের ভোটে সাফল্য, এ রাজ্যে রামনবমী ও হনুমান জয়ন্তী ঘিরে উন্মাদনার আবহ কাজে লাগিয়ে বিজেপির মিছিলে এখন লোকের ঢল নামলেও সাংগঠনিক ভাবে জমি ধরে রাখাই বিজেপির সামনে চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।

সিউড়িতে সোমবারের মিছিল অবশ্য বিজেপির উত্থানের স্পষ্ট বার্তাই নিয়ে এসেছে। গত ১১ এপ্রিল একটি ধর্মীয় সংগঠনের ডাকা হনুমান জয়ন্তীর মিছিলে পুলিশের লাঠি চালানোর প্রতিবাদে এ দিনের মিছিলে লোক এসেছিল গোটা জেলা থেকেই। কৈলাস, দিলীপবাবু, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসুদের উপস্থিতিতে মিছিলের বহর দৃশ্যতই ছাপিয়ে গিয়েছে তৃণমূলের গত রবিবারের শান্তি মিছিলকে। জেলার অন্তত চার জায়গায় তাদের মিছিলমুখী সমর্থকদের বাধা দেওয়া হয় বলে বিজেপির অভিযোগ। আবার বিজেপির সমর্থকেরা ভাঙচুর চালান আমোদপুরে তৃণমূলের কার্যালয়ে। শাসক দল ও পুলিশ-প্রশাসনকে চাপে রাখতে পাড়ুই থানায় গিয়ে ঘরছাড়াদের ফেরানোর দাবিও তুলে এসেছেন দিলীপবাবুরা।


গেরুয়া-মিছিল: সিউড়িতে সোমবার বিজেপি-র কর্মসূচি।

মিছিলকে ঘিরেই বাগ্‌যুদ্ধ বেধেছে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের। কৈলাস বলেছেন, ‘‘দিদির তো অর্ধেকের বেশি মন্ত্রী জেলে যাবেন! বিজেপি রাজ্য থেকে তৃণমূল সরকারকে উৎখাত করবে।’’ এক ধাপ এগিয়ে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবুর হুঙ্কার, ‘‘আমরা গুন্ডাগর্দির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। তার জন্য যদি তরোয়াল ধরতে হয়, গলা ধরতে হয়, বন্দুক ধরতে হয়— তা-ই ধরব!’’ যা শুনে আবার তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রতের পাল্টা হুঁশিয়ারি, ‘‘বাইরে থেকে এসে অনেকে অনেক কথা বলেন। মাঠে নেমে করে দেখান!’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘কার পিঠের ক’টা চামড়া ওঁরা তুলেছেন, জানি না। নিজেদের পিঠের চামড়া থাকবে কি না, দেখুন!’’ আর দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘গর্জন করাই সার! বাংলায় বিজেপির কোনও ভবিষ্যৎ নেই।’’

মুখে যা-ই বলুন, বিজেপির সিউড়ির মিছিল তৃণমূলের অন্দরেও চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। এখনও বীরভূমে তেমন মজবুত নয় বিজেপির সংগঠন। বিধানসভা নির্বাচনেও তারা পর্যুদস্ত হয়েছে। তার পরেও কী ভাবে এত লোকের মিছিল?

রাজ্যের শাসক দলের অভিযোগ, বাম শিবিরের হতাশ কর্মীদের অনেকে সামিল হয়েছিলেন এ দিনের মিছিলে। বিজেপি নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, রাজ্যে অপশাসনের বিরুদ্ধে একজোট হতে সিপিএম, কংগ্রেস তো বটেই, তৃণমূল ছেড়েও বহু মানুষ তাঁদের দিকে ঝুঁকেছেন।

—নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Rally BJP Suri Panchayat election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE