Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ভর্ৎসনা অভিযোগকারিণীকে

ধর্ষণের মামলায় খালাস ব্যবসায়ী

ধর্ষণের চেষ্টার একটি অভিযোগে দিনের পর দিন পরিবারছাড়া হয়ে থাকতে হয়েছে তাঁকে। শুনতে হয়েছে অপমান। ভয়ে-লজ্জায় স্কুলে যেতে পারেনি ছেলেমেয়েরা। মামলা চালাতে জলের মতো টাকা খরচ হয়েছে। তবু লড়াই ছাড়েননি পার্কসার্কাসের ব্যবসায়ী রবিউল হক।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:১৬
Share: Save:

ধর্ষণের চেষ্টার একটি অভিযোগে দিনের পর দিন পরিবারছাড়া হয়ে থাকতে হয়েছে তাঁকে। শুনতে হয়েছে অপমান। ভয়ে-লজ্জায় স্কুলে যেতে পারেনি ছেলেমেয়েরা। মামলা চালাতে জলের মতো টাকা খরচ হয়েছে। তবু লড়াই ছাড়েননি পার্কসার্কাসের ব্যবসায়ী রবিউল হক। দু’বছর পরে তিনি সেই লড়াই জিতলেন।

দিন কয়েক আগে বারাসত আদালত জানিয়ে দিল, রবিউলের বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণের চেষ্টার মামলাটি নেহাতই মনগড়া। তিনি বেকসুর। মিথ্যা অভিযোগের জন্য অভিযোগকারিণী, রবিউলের আত্মীয় সাবিনা ইয়াসমিনকে ভর্ৎসনাও করেন বিচারক। তাঁকে এ ভাবে হেনস্থার প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই সাবিনার বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছেন রবিউল। তিনি বলেন, ‘‘আর কাউকে যাতে এমন অবাঞ্ছিত সমস্যায় পড়তে না হয়, সে জন্য মানহানির মামলা নিয়ে প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাব।’’

কথায় কথায় শ্লীলতাহানি এবং ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্তের যে কতটা ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, বারাসত আদালতের এই রায় সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেক সময়ে অন্য অভিযোগের সঙ্গে শ্লীলতাহানি, ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগও জুড়ে দেওয়া হয়। মিডিয়ার প্রচারে সবাই তা জেনে যায়। শুরু হয়ে যায় তিরস্কার, ভর্ৎসনা, নানা মন্তব্য। পরে অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হলেও তত দিনে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।’’

ক্ষতি তাঁরও হয়েছে বলে জানিয়েছেন রবিউল। তিনি দেগঙ্গার বেড়াচাঁপার বাসিন্দা সাবিনার জেঠতুতো দেওর। সম্পত্তি নিয়ে তাঁদের পারিবারিক বিবাদ রয়েছে। কিন্তু তার জন্য সাবিনা যে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনবেন, ভাবতে পারেননি রবিউল। ঠিক কী হয়েছিল?

দেগঙ্গা থানায় অভিযোগে সাবিনা জানিয়েছিলেন, ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি রবিউল তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল ‘হয় ধর্ষককে ধরুন, নয়তো আমাকে গ্রেফতার করুন’, এই দাবিতে দেগঙ্গা থানার সামনে রাতভর অনশন করে খবরের শিরোনামেও আসেন সাবিনা।

বারাসত আদালতে পেশ করা তদন্ত-রিপোর্টে পুলিশ অবশ্য জানিয়ে দেয়, ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগের সারবত্তা নেই। ঘটনার দিন পার্কসার্কাসে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে ছিলেন রবিউল। বেড়াচাঁপায় পা-ই রাখেননি। ডাক্তারি পরীক্ষা না-করার আবেদন করেছিলেন সাবিনা নিজে। মামলা চলাকালীন আদালতে দিনের পর দিন অনুপস্থিত ছিলেন সাবিনা ও তাঁর পরিবার। সাবিনা, তাঁর স্বামী আইনুল হক, শ্বশুর মোজাম্মেল হক এবং হুমায়ুন রেজা চৌধুরী নামে তাঁদের এক পড়শির বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। পরে সাবিনার স্বামী-শ্বশুর হলফনামা দিয়ে সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করেন। মামলা ঝুলিয়ে রাখার এহেন চেষ্টাকেও ভর্ৎসনা করেছেন বিচারক।

এই দু’বছরে বহু ঝড়ঝাপটা সামলেছে রবিউলের পরিবার। ব্যবসা ও পরিবার ছেড়ে বাইরে বাইরে কাটিয়েছেন রবিউল।

আত্মীয়, পড়শি, বন্ধুবান্ধবদের কাছে বারবার জবাবদিহি করতে হয়েছে তাঁকে। আমদানি-রফতানির ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তাঁর স্ত্রী জুলেখা বলেন, ‘‘গভীর রাতে হঠাৎ পুলিশ আসত। ছেলেমেয়েরা ভয়ে কাঁটা হয়ে যেত। সব তছনছ হয়ে গিয়েছিল। একবার ভেবেছি মরে যাই, আবার আল্লাহ্‌কে ডেকেছি।’’

রবিউলকে এ ভাবে হেনস্থা করা বা আদালতের রায় নিয়ে কিছু বলতে চাননি সাবিনা। শুধু জানান, আত্মীয়স্বজনের ব্যাপার বলে মামলা চালাতে চাননি। রবিউল কিন্তু জানিয়েছেন, মানহানির মামলা তিনি চালিয়ে যাবেন। শেষ দেখে ছাড়বেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rape Case Release রবিউল হক
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE