Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

দরদর করে ঘামছিলেন সমরেশ

নীল রঙের বড় সুটকেস কোলে আঁকড়ে পিছনের সিটে বসেছিলেন তিনি। সিটের নীচে ছিল একটা বড় থলে। ঘামছিলেন দরদর করে। আর দ্রুত চালানোর জন্য চালককে তাড়া দিচ্ছিলেন বারবার।

শ্রীরামপুরের ওয়ালশ হাসপাতালে সমরেশ। ছবি: দীপঙ্কর দে।

শ্রীরামপুরের ওয়ালশ হাসপাতালে সমরেশ। ছবি: দীপঙ্কর দে।

সৌমেন দত্ত ও প্রকাশ পাল
বর্ধমান ও শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৯
Share: Save:

নীল রঙের বড় সুটকেস কোলে আঁকড়ে পিছনের সিটে বসেছিলেন তিনি। সিটের নীচে ছিল একটা বড় থলে। ঘামছিলেন দরদর করে। আর দ্রুত চালানোর জন্য চালককে তাড়া দিচ্ছিলেন বারবার।

কেন, সে কথা তখন বুঝতে পারেননি গাড়ির চালক নুর হাসান আলি। বর্ধমানের লস্করদিঘির বাসিন্দা নুর হাসান জানান, মঙ্গলবার খবরের কাগজ ও টিভি দেখে দুর্গাপুরের বাসিন্দা সুচেতা ও তাঁর শিশুকন্যা দীপাঞ্জনার মর্মান্তিক পরিণতির কথা জানতে পারেন। বুঝতে পারেন, মা-মেয়েকে টুকরো করে ব্যাগে পুরে ফেলায় মূল অভিযুক্ত সমরেশ সরকারই সে দিন তাঁর গাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। সমরেশের কোলে নীল সুটকেসে ছিল সুচেতার ধড়। নীচের থলেতে ছিল তাঁর মুন্ড। আরও একটি সুটকেস ও একটি ব্যাগও তাঁর সঙ্গে ছিল, তা-ও মনে পড়ে নুর আলির।

প্রথমে কয়েক জন বন্ধু, তার পরে তৃণমূলের ট্যাক্সি ইউনিয়নের কর্তাদের বিষয়টি জানান নুর আলি। ওই ইউনিয়নের সভাপতি ইফতিকার আহমেদ বলেন, “আমরা নুরকে থানায় যোগাযোগ করতে বলি।”

সেই মতো বুধবার বিকেলে বর্ধমান থানায় গিয়ে সংবাদপত্রে সমরেশের ছবি দেখিয়ে নুর হাসান আলি বলেন, ‘‘আমি এই ব্যক্তিকে বর্ধমান থেকে ব্যারাকপুরে একটি ফেরিঘাটে নামিয়ে এসেছিলাম। আপনাদের যে কোনও প্রয়োজনে সাহায্য করতে আমি প্রস্তুত।’’ পুলিশের কথামতো বৃহস্পতিবার দুপুরে ফের থানায় হাজির হন তিনি। এ দিন শ্রীরামপুরের পুলিশ গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই চালককেও শ্রীরামপুরে আনা হয়।

নুর আলি জানান, শুক্রবার ভোর ৫টা নাগাদ দুর্গাপুর থেকে একটি গাড়িতে করে সমরেশ বর্ধমান স্টেশনে আসেন। এর পরে তিনি ও সেই গাড়ির চালক ব্যারাকপুর যাওয়ার জন্য গাড়ি খুঁজছিলেন। ২২০০ টাকা ভাড়ায় তিনি যেতে রাজি হয়ে যান। তাঁর দাবি, “ওই যাত্রী নিজেই সুটকেস, ব্যাগ, থলি এক গাড়ি থেকে নামিয়ে আমার গাড়িতে তোলেন। আমাদের ব্যাগে হাত দিতে নিষেধ করেছিলেন।’’

জোড়া খুনের তদন্ত করতে গিয়ে দুর্গাপুর থেকে সমরেশ যে গাড়িতে বর্ধমানে গিয়েছিলেন, তার হদিস আগেই পেয়েছিল পুলিশ। কিন্তু বর্ধমান থেকে তিনি ব্যারাকপুরে পৌঁছলেন কী ভাবে, পুলিশ তার খোঁজ করছিল। বুধবার বিকেলে নিজে বর্ধমান থানায় হাজির হয়ে নুর হাসান আলি জানান, সমরেশ তাঁর গাড়িই ভাড়া নিয়েছিলেন। ।

সমরেশের খুন ও দেহ লোপাটের পদ্ধতি স্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, তার মোটিভ সম্পর্কেও আরও জোরালো প্রমাণ মিলছে। পুলিশ সূত্রের খবর, সমরেশ জেরায় জানিয়েছেন, নানা সময়ে সুচেতার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে সেই টাকার পরিমাণ প্রায় দশ লক্ষ টাকা। সমরেশকে বৃহস্পতিবার শ্রীরামপুরের ওয়ালশ হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসকদের সমরেশ জানিয়েছেন, তাঁর কোনও শারীরিক সমস্যা নেই। দুর্গাপুরে সুচেতা চক্রবর্তী ছাড়াও সমরেশের সঙ্গে অন্য যে তরুণীর ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে জানা গিয়েছে, এ দিন তাঁকেও শ্রীরামপুর থানায় জেরা করা হয়।

(সহ-প্রতিবেদন: সুব্রত সীট)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE