নিজাম প্যালেসে ইফতার পার্টিতে মুকুল-অঞ্জনা। ছবি: সুমন বল্লভ
আদতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উৎসব। কিন্ত হয়ে উঠল বহু ধর্ম এবং বহু রাজনীতির সম্মেলন। সৌজন্য: মুকুল রায়! নিজাম প্যালেসে রবিবার মুকুলবাবুর ইফতার পার্টিতে হাজির হলেন মুসলিম, হিন্দু ও শিখ সম্প্রদায়ের বিশিষ্টেরা। একই সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানে দেখা গেল তৃণমূল বিধায়ক শিউলি সাহা, শীলভদ্র দত্ত, বিজেপি নেতা প্রদীপ ঘোষ, কংগ্রেস নেতা সম্রাট তপাদার, টলিউড থেকে বিজেপি-তে যাওয়া অঞ্জনা বসু, কৌশিক চক্রবর্তী এবং প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক দীপক ঘোষ প্রমুখকে। বরাহনগরের কয়েক জন বিজেপি কর্মী, ‘জনসঙ্ঘে’র নেত্রী শ্রীলেখা শ্রীবাস্তবও এ দিন ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। ‘বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চ’ এবং সিপিডব্লিউডি এমপ্লয়িজ ফেডারেশন যৌথ ভাবে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বলে মুকুলবাবু জানান। অনুষ্ঠানে ভিড়ের বহর ছিল চোখে পড়ার মতো।
ইফতার পার্টির অবসরে দীপকবাবু জানান, তাঁরা নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। ঈদের পরে সেই সংক্রান্ত নথিপত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হবে। দীপকবাবুর কথায়, ‘‘৩৪ বছরের দলতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রকে সরানোর জন্য আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটা নতুন সরকার গড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকার তৈরি হওয়ার প্রথম দিন থেকেই লক্ষ করছি, ওই স্বৈরতন্ত্রের বিলোপ হয়নি। তৃণমূল এখন আত্মঘাতী হানাহানিতে মেতেছে। তৃণমূল নেত্রীর কার্যকলাপ আমরা যারা পছন্দ করছি না, তারা সকলে মিলে একটা দল গড়ার জন্য আলোচনা করছি।’’ একই সঙ্গে দীপকবাবুর বক্তব্য, ‘‘নির্বাচন কমিশনে কাগজপত্র জমা দিলেই পার্টি তৈরি হয়ে যায় না। একটা প্রক্রিয়া আছে।’’ তাঁদের দলে মুকুলবাবু নিশ্চয়ই থাকছেন? দীপকবাবুর জবাব, ‘‘মুকুলবাবু থাকবেন কি না, সে ব্যাপারে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি অন্য দলের সাংসদ। নতুন দলে যোগ দিতে হলে তাঁকে সেই দল ছেড়ে আসতে হবে।’’
দীপকবাবুর এই বক্তব্যের জেরে নতুন রাজনৈতিক দল এবং সেখানে মুকুলবাবুর যোগদান নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরে জল্পনা ফের গতি পেয়েছে। মুকুলবাবু নিজে অবশ্য সব জল্পনা উড়িয়ে দাবি করেছেন, তিনি এমন কোনও নতুন রাজনৈতিক দলের বিষয়ে কিছু জানেন না। দীপকবাবু যা বলেছেন, তা তাঁর নিজস্ব বক্তব্য। তবে তৃণমূলের যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ শাসক দলের বিভিন্ন নেতা-নেত্রীর মুখে যখন নানাবিধ হুমকি শোনা যাচ্ছে, ইফতারের মঞ্চে মুকুল তখন বলেছেন, ‘‘আপনারা আল্লার কাছে দোয়া চান, যাতে সকলের ভাল হয়! বাংলার, ভারতের ভাল হয়।’’
তৃণমূলের সাধারণ সাংসদ থেকে গেলেও মমতার দলে মুকুলের ইনিংস এখন অতীত। দূর থেকেই তাঁর এই ইফতার-মঞ্চের দিকে নজর রেখেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মমতার সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসানোর লক্ষ্যেই মুকুলবাবুর এই আয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা। শাসক দলের অন্দরের ইঙ্গিত, দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না, এমন কয়েক জন নেতা-নেত্রীর উপরে শাস্তির খাঁড়া নামতে পারে অচিরেই। ঘটনাচক্রে, কোপের মুখে-পড়া ওই নেতা-নেত্রীরা মুকুল-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy