Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ন্যায্য মূল্যের বহু ওষুধ কি আদৌ রোগ কমাতে সক্ষম?

রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের সদ্য প্রাক্তন অধিকর্তা চিন্তামণি ঘোষের কথায়, ‘‘রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল প্রতি ছ’মাস অন্তর বিভিন্ন ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে নমুনা তুলে স্বাস্থ্য দফতরকে দেয়।

ভরসা: বহু রোগীই নির্ভর করেন ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানগুলির উপরে। বৃহস্পতিবার, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

ভরসা: বহু রোগীই নির্ভর করেন ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানগুলির উপরে। বৃহস্পতিবার, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩৫
Share: Save:

রাজ্য সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে (পিপিপি মডেল) চলা ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে যে ওষুধ বিক্রি হয়, তার মান সম্পর্কে স্বাস্থ্য দফতর কি নিশ্চয়তা দিতে পারবে? বাজারের তুলনায় দামে অনেক বেশি ছাড় দেওয়া সেই ওষুধগুলি কি আদৌ রোগ কমাতে সক্ষম? অতীতে এই প্রশ্ন তুলেছিলেন চিকিৎসকদের একাংশ। এ বার তুললেন কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের অফিসারেরা।

গত অগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে ক্রেতা সেজে বিভিন্ন ওষুধ কেনেন তাঁরা। সেগুলি পাঠানো হয় কিড স্ট্রিটে কেন্দ্রীয় ড্রাগ ল্যাবরেটরিতে। রিপোর্ট বলছে, বেশির ভাগ ওষুধই নিম্ন মানের। অর্থাৎ, ওই ওষুধে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের এক কর্তা বলেন, ‘‘এর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াও হার্ট, শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ ও থাইরয়েডের ওষুধ রয়েছে। আছে অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কাছে অভিযোগ আসছিল, ন্যায্য মূল্যের দোকানের ওষুধ খেয়ে রোগ কমছে না। আমরা বহু বার স্বাস্থ্য দফতর এবং রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলকে জানিয়েছি যে, আমরা ওই দোকানগুলি থেকে নমুনা তুলে পরীক্ষায় আগ্রহী। আমাদের ল্যাবে উন্নত পরিকাঠামো রয়েছে। কিন্তু ওরা নানা অজুহাতে তা এড়িয়ে গিয়েছে। তাই আমরা ক্রেতা সেজে ওষুধ কিনেছি।’’ আর এক অফিসারের বক্তব্য, ‘‘কম দামের নামে নিম্ন মানের ওষুধ দিয়ে মানুষকে ঠকানো হচ্ছে!’’

এ ব্যাপারে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পিপিপি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব বিনোদ কুমারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোন নামিয়ে রাখেন।

আরও পড়ুন: প্রশ্ন আটকাতে মেরুকরণই দাওয়াই

কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের এক কর্তা জানান, মান খারাপ পেলেও আইনত ওষুধ নির্মাতা সংস্থা ও বিক্রয়কারী সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা তাঁদের নেই। তাঁরা বড়জোর রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ও রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলকে বিষয়টি জানাতে পারেন। ওষুধের নির্মাতা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল আদালতেও যেতে পারে। কিন্তু সমস্যা হল, সেই মামলা কবে শেষ হবে, কেউ জানে না।

নীলরতন, আর জি কর, মেডিক্যালে ন্যায্য মূল্যের দোকানের কর্তা স্বপন দাসের আবার যুক্তি, ‘‘আমাদের ওষুধ আসে মূলত হিমাচলের সোলান ও উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন উৎপাদকের কাছ থেকে। আমরা ওদের সব বৈধ কাগজপত্র দেখে নিই। ওষুধের মান খারাপ হলে ওদের দায়।’’

রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের সদ্য প্রাক্তন অধিকর্তা চিন্তামণি ঘোষের কথায়, ‘‘রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল প্রতি ছ’মাস অন্তর বিভিন্ন ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে নমুনা তুলে স্বাস্থ্য দফতরকে দেয়। সেগুলি এনএবিএল-অ্যাক্রিডিটেড কোনও ল্যাবে পাঠানো হয়। অথচ, সেখানে রিপোর্ট খারাপ পাওয়া গেলে তার ভিত্তিতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। কারণ সেগুলি বেসরকারি ল্যাব!’’

তা হলে খামোখা বেসরকারি ল্যাবে নমুনা যাবে কেন, তার ব্যাখ্যা স্বাস্থ্য দফতর থেকে মেলেনি। যে সব নমুনার মান খারাপ হয়, সেগুলি আবার কনভেন্ট লেনে রাজ্যের ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখান থেকে রিপোর্ট যত দিনে আসে, তত দিনে ওই ওষুধের পুরো স্টক বিক্রি হয়ে যায়। সেই ওষুধ খেয়ে কত জনের রোগ কমল, সেই হিসেব কেউ রাখে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE