Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অস্ত্রোপচার ভাঙা হাতে, জ্ঞানই ফিরল না শিশুর

খেলতে গিয়ে পড়ে হাত ভেঙেছিল বছর চারেকের ছেলেটার। তড়িঘড়ি কাছেই এক নার্সিংহোমে তাকে নিয়ে যান বাবা-মা। অস্ত্রোপচার করার জন্য শিশুটিকে অজ্ঞান করা হয়। আর তার জ্ঞান ফেরেনি। সোমবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরে পাঁশকুড়ার মেচগ্রামে শুভম কুইল্যা নামে ওই শিশুটির মৃত্যুর পরেই বাড়ির লোকজন সন্দেহ করেন, তাকে অজ্ঞান করতে গিয়ে গোলমাল করেছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। অ্যানাস্থেটিস্ট মধুসূদন মাইতিকে ঘিরে ধরেন তাঁরা।

ছেলের দেহ জড়িয়ে কান্না মায়ের। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

ছেলের দেহ জড়িয়ে কান্না মায়ের। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০৩:৪৮
Share: Save:

খেলতে গিয়ে পড়ে হাত ভেঙেছিল বছর চারেকের ছেলেটার। তড়িঘড়ি কাছেই এক নার্সিংহোমে তাকে নিয়ে যান বাবা-মা। অস্ত্রোপচার করার জন্য শিশুটিকে অজ্ঞান করা হয়। আর তার জ্ঞান ফেরেনি।
সোমবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরে পাঁশকুড়ার মেচগ্রামে শুভম কুইল্যা নামে ওই শিশুটির মৃত্যুর পরেই বাড়ির লোকজন সন্দেহ করেন, তাকে অজ্ঞান করতে গিয়ে গোলমাল করেছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। অ্যানাস্থেটিস্ট মধুসূদন মাইতিকে ঘিরে ধরেন তাঁরা। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়। তবে জনতার রোষ থেকে রক্ষা পায়নি নার্সিংহোমটি। গোটা চত্বরে ভাঙচুর চলে। তাদের সামাল দিতে গিয়ে চার পুলিশকর্মী আহত হন।
কোলাঘাটের নারায়ণপাকুড়িয়া গ্রামের হোসিয়ারি কর্মী সমরেশ কুইল্যা ও তাঁর স্ত্রী সর্বাণীর এক মাত্র সন্তান শুভম। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সকালে বাড়িতে খেলার সময়ে পড়ে গিয়ে বাঁ হাতে চোট পেয়েছিল সে। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকায় তাকে নিয়ে সকাল ৭টা নাগাদ মেচগ্রামের নার্সিংহোমে যান সমরেশবাবুরা। তাঁর দাবি, ছেলেকে পরীক্ষা করে সব্যসাচী সাঁতরা নামে এক অস্থি চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। সাড়ে ৭টা নাগাদ শুভমকে নিয়ে যাওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে।

সমরেশবাবুর কথায়, ‘‘আমরা ওটি-র বাইরে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। ছেলের যে কিছু হয়েছে, কেউ তা জানায়নি। ৯টা নাগাদ পুলিশ এসে জানতে চায়, কোনও শিশু মারা গিয়েছে কি না। তখনই আমাদের সন্দেহ হয়।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘ভুল চিকিৎসাতেই আমার ছেলে মারা গিয়েছে। অস্ত্রোপচারের আগে ওকে অজ্ঞান করার সময়েই সম্ভবত কোনও ত্রুটি থেকে গিয়েছিল।’’

সংশ্লিষ্ট অস্থি চিকিৎসক ঘটনার পর থেকেই এলাকাছাড়া। বারবার মোবাইলে ফোন করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। অ্যানাস্থেটিস্ট মধুসূদনবাবুরও ফোন বন্ধ। তবে নার্সিংহোমের মালিক তাপস রাণা গাফিলতির অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘অস্ত্রোপচারের আগে অজ্ঞান করার সময়েই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।’’

বাড়ির লোকেদের কিছু জানানো হয়নি কেন? নার্সিংহোমের মালিকের দাবি, ‘‘প্রথমেই আমরা ছেলেটির শারীরিক অবস্থার কথা তার বাড়ির লোকেদের জানিয়েছিলাম। পরে সেই রোগী মারা গিয়েছে কি না, তা বুঝতেও তো সময় লাগে।’’

হাতের হাড়ের অস্ত্রোপচার করতে যে ধরনের অ্যানাস্থেসিয়া দরকার হয়, তাতে কি কারও মৃত্যু হতে পারে?

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বহু ক্ষেত্রে এই ধরনের অস্ত্রোপচারে ‘লোকাল অ্যানাস্থেসিয়া’ করে শুধু মাত্র নির্দিষ্ট জায়গাটি অবশ করে দেওয়া হয়। তাতে রোগীর জ্ঞান চলে যায় না এবং সে কারণে তুলনামূলক নিরাপদ। তবে শিশুরা অস্ত্রোপচারের সময়ে নড়াচড়া করলে অসুবিধা হতে পারে বলে অনেক সময়ে পুরো অজ্ঞান করা হয়। সে ক্ষেত্রে অ্যানাস্থেসিয়ার মাত্রা বেশি হয়ে গেলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। আবার, রোগীর হৃদ্‌যন্ত্রে সমস্যা থাকলেও ওই সময়ে ‘হার্ট ব্লক’ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে।

নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, অস্ত্রোপচারের আগে শুভমকে পুরো অজ্ঞান করারই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে তার পরে কী ঘটেছে, তা পরিষ্কার নয়। বিকেলে তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে দেহের ময়না-তদন্ত করিয়েছে পুলিশ। সকালেই পাঁশকুড়া থানায় ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেন সমরেশবাবু। তবে পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে তাঁদের এক প্রতিবেশীকে আটক করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE