Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিশু সদন থেকেই রক্ত বাইরের ল্যাবে

খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এলাকার চিত্তরঞ্জন শিশুসদন হাসপাতালে এই অভিযোগ উঠেছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:০০
Share: Save:

নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে এক সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীর জোগান পেয়ে লাভের কড়ি গুনছে এক বেসরকারি ল্যাবরেটরি! খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এলাকার চিত্তরঞ্জন শিশুসদন হাসপাতালে এই অভিযোগ উঠেছে।

ওই হাসপাতালের আউটডোরে বসেই প্রতিদিন সেখানে আসা রোগীদের অনেকের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন ওই ল্যাবরেটরির কর্মীরা। রোগীদের থেকে বাজারদরেই টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। অথচ চুক্তি অনুযায়ী, একমাত্র হাসপাতালের ‘জননী শিশু সুরক্ষা যোজনা’ (জেএসএসকে) এবং ‘রাষ্ট্রীয় বাল সুরক্ষা কার্যক্রম’-এর (আরবিএসকে) অন্তর্গত রোগীদের রক্তই ওই ল্যাবরেটরির সংগ্রহ করার কথা। বাকি রোগীদের রক্ত হয় হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা হবে, না-হলে রোগী তার ইচ্ছেমতো বাইরের কোনও ল্যাবরেটরি থেকে তা করিয়ে নেবেন। হাসপাতাল তাঁকে কোনও ল্যাবে ‘রেফার’ করবে না। কিন্তু তা হচ্ছে না বলেই একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে স্বাস্থ্যভবনে।

যেমন, সপ্তাহ দেড়েক আগে কাঁকুলিয়া রোডের বাসিন্দা এক মহিলা তাঁর দেড় বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে ওই হাসপাতালের আউটডোরে গিয়েছিলেন। শিশুটির কয়েক দিন ধরে জ্বর চলছিল। ওই মহিলার কথায়, ‘‘আউটডোরে দেখানোর পরেই আমাকে ডাক্তারবাবু জানান, ডেঙ্গি পরীক্ষা করাতে হবে। তিনি আমাকে ১৬ নম্বর ঘরে যেতে বলেন। সেখানে গেলে আমাকে বলা হয়, রক্ত নেওয়া হবে। কিন্তু সব মিলিয়ে ১৪০০ টাকা লাগবে। আমি শুনেছিলাম, সরকারি হাসপাতালে সব ফ্রি। অত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই ওখান থেকে পুরসভার ক্লিনিকে গিয়ে পরীক্ষা করাই।’’

যে বেসরকারি ল্যাবরেটরির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার তরফে কেবল সিংহ নামে এক জন টেলিফোনে বললেন, ‘‘চিত্তরঞ্জন শিশুসদনের আউটডোরে ১৬ নম্বর ঘরে আমাদের দু’জন টেকনিশিয়ান বসেন। জেএসএসকে প্রকল্প বা আরবিএসকে প্রকল্পের রোগী এলে তাঁদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য আমাদের কালীঘাটের ল্যাবে নিয়ে যাওয়া হয়। তার জন্য রোগীকে কোনও টাকা দিতে হয় না। চুক্তি অনুযায়ী, হাসপাতালই সেই টাকা আমাদের দিয়ে দেয়। আর রোগী যদি ওই দুই প্রকল্পের বাইরের হয়, তা হলেও আমরা পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা নিয়ে যাই। তাঁদের বাজারদরেই টাকা দিতে হয়। যেমন ডেঙ্গির জন্য ১৪০০ টাকা নিই।’’

কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জেএসএসকে এবং আরবিএসকে প্রকল্পের আওতায় থাকা রোগীদের রক্ত সংগ্রহ করার পরে হাসপাতালের গাড়িতে করে তা ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় না? ওই বেসরকারি ল্যাবরেটরির প্রতিনিধিরা রোগীদের কাছে পৌঁছতে পারছেন কী করে? কেন সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে আলাদা ঘরে ওই ল্যাবরেটরির প্রতিনিধিদের বসতে দেওয়া হচ্ছে? আর যদি বসতেই দেওয়া হয়, তা হলে সেই ঘরে যাতে জেএসএসকে এবং আরবিএসকে প্রকল্পের বাইরে থাকা কোনও রোগী প্রবেশ করতে না পারেন, তা নজরে রাখা হচ্ছে না কেন? হাসপাতালের একাধিক কর্মী এবং চিকিৎসকই স্বীকার করেছেন, আউটডোরের অনেক ঘর থেকে ডাক্তারবাবুদের একাংশই প্রকল্পে না থাকা রোগীদের ১৬ নম্বর ঘরে পাঠিয়ে দেন। এক প্রবীণ কর্মীর কথায়, ‘‘এতে রোগীরই সুবিধা হয়। অন্য জায়গায় দৌড়তে হয় না। তা ছাড়া, হাসপাতালের নিজস্ব ল্যাবরেটরির হালও তথৈবচ। সেখানে নমুনা পাঠালে কবে রিপোর্ট আসবে, কেউ জানে না। তাই চিকিৎসকেরা রোগীর স্বার্থে সেখানেও পাঠাতে চান না।’’

কী বলছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ?

অধ্যক্ষা সুতপা গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এই রকম হচ্ছে বলে আমার কাছে খবর নেই।’’

কিন্তু খোদ ল্যাবরেটরির তরফেই তো এ কথা স্বীকার করা হয়েছে। সুতপাদেবী বলেন, ‘‘আমি বলতে পারব না।’’ পাশাপাশি তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের ল্যাব সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে আমাদের এক জন মাত্র প্যাথোলজিস্ট। বায়োকেমিস্ট্রি বা মাইক্রোবায়োলজির লোক নেই। তাই পরীক্ষায় কিছুটা সমস্যা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE