Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
এ বার পছন্দসই মিশ্র পাঠ

ব্যবস্থা বদল, বিদায়-ঘণ্টা নতুন বিধির

সেই নতুন পাঠ-ব্যবস্থা হল চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম (সিবিসিএস) বা পছন্দসই মিশ্র পাঠ। যে-ব্যবস্থায় কলা-বিজ্ঞান-বাণিজ্যের ভেদরেখা লুপ্ত করে যে-কেউ যে-কোনও বিষয়ের সঙ্গে পছন্দের অন্য বিষয় পড়তে পারবেন। তাতে বার্ষিক পরীক্ষা হয় না।

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৮ ০৫:০৯
Share: Save:

পরীক্ষার নতুন নিয়ম নিয়েই যত সমস্যা! যত বিক্ষোভ-আন্দোলন এবং পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবি!

সেই ধুন্ধুমার আন্দোলন-অবরোধের জেরে প্রায় নজিরবিহীন ভাবে পরীক্ষার নতুন নিয়মকে তাকে তুলে রাখতে হয়েছে। পুরনো নিয়মে স্নাতক পার্ট-১ পরীক্ষার ফল আবার ঘোষণা করে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।

আর এখন নতুন এক পাঠ-ব্যবস্থা এবং নতুনতর পরীক্ষা-পদ্ধতির আবির্ভাবে নেপথ্যে ঠেলে দেওয়া সেই নতুন নিয়মবিধির চিরবিদায়ের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে।

সেই নতুন পাঠ-ব্যবস্থা হল চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম (সিবিসিএস) বা পছন্দসই মিশ্র পাঠ। যে-ব্যবস্থায় কলা-বিজ্ঞান-বাণিজ্যের ভেদরেখা লুপ্ত করে যে-কেউ যে-কোনও বিষয়ের সঙ্গে পছন্দের অন্য বিষয় পড়তে পারবেন। তাতে বার্ষিক পরীক্ষা হয় না। মূল্যায়ন হয় সেমেস্টার পদ্ধতিতে। শিক্ষা শিবিরের একাংশের ধারণা, সেই সেমেস্টার-ভিত্তিক সিবিসিএস ব্যবস্থাই নতুন নিয়মের বিদায়-ঘণ্টা বাজিয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ নামমাত্র চালু হয়েই ২০১৬ সালের নতুন নিয়ম বিলুপ্তির পথে।

এ বার স্নাতক পার্ট-১ পরীক্ষায় কলা বিভাগে ৫৭.৫০% পরীক্ষার্থী ফেল করেন। বিজ্ঞানে পাশের হার কমে যায় ১০%। এই বিপর্যয়ের জন্য পড়ুয়ারা দায়ী করেন নতুন নিয়মকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে লাথি মেরে, দফায় দফায় অবরোধ করে নতুন নিয়মের বিরোধিতা করেন তাঁরা। নতুন নিয়ম অনুযায়ী অনার্সের পড়ুয়াকে জেনারেলের একটি বিষয়ে পাশ করতেই হবে। এবং জেনারেল পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে দু’টি বিষয়ে পাশ করা বাধ্যতামূলক। শুধু তা-ই নয়, ২০০৯ সালের নিয়মে পাঠ্যক্রম শেষ করতে ১০ বছর পর্যন্ত সময় মিলত। নতুন নিয়মে তা কমে হয় পাঁচ বছর।

সেই নতুন নিয়মের গেরোয় এ বার অনুত্তীর্ণের সংখ্যা এত বেড়েছে বলে অভিযোগ পড়ুয়াদের। তাঁদের বক্তব্য, নতুন নিয়মের কথা তাঁরা জানতেনই না। শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালের পুরনো নিয়মে ফের ফল প্রকাশ করে অকৃতকার্যদের পরের পরীক্ষায় বসতে দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রশ্ন উঠছে, নতুন নিয়মের কী হবে? বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, সব শাখায় সেমেস্টার-ভিত্তিক সিবিসিএস চালু হয়ে গেলে নতুন নিয়ম এমনিতেই অর্থহীন হয়ে পড়বে। শিক্ষাজগতের একাংশের মতে, কার্যত শুরুতেই শেষ হয়ে যাবে নতুন নিয়ম।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক বাণিজ্য শাখায় ইতিমধ্যেই সিবিসিএস চালু হয়ে গিয়েছে। কলা এবং বিজ্ঞান বিভাগেও তা চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। এই নিয়মে কোনও বিষয়ে ফেল করলে পরবর্তী সেমেস্টারে ক্লাস করার সঙ্গে সঙ্গে সর্বোচ্চ দু’টি বিষয়ে আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ মেলে। উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কিছু দিনের মধ্যেই সব শাখায় সিবিসিএস চালু হয়ে যাবে। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, ২০১৬ সালের নতুন নিয়মের আর ফেরার সম্ভাবনা নেই।

উপাচার্য বলেন, ‘‘এক জন পড়ুয়া সর্বাধিক পাঁচ বছরে তাঁর কোর্স শেষ করতে পারবেন, এমনই নির্দেশ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সেই পরিবর্তনের সঙ্গে পাশের নিয়মও বদল করা হয়েছিল।’’ সোনালিদেবীর সময়ে এই বদল হয়নি। আগের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সুগত মারজিত বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছিলেন। সেটি বাস্তবায়িত হয়েছিল আশুতোষ ঘোষ অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্বে থাকাকালীন। সোনালিদেবীর বক্তব্য, এই ছাত্রছাত্রীরা ভর্তির সময়ে জানতেনই না যে, ২০১৬ সালের নিয়ম তাঁদের উপরে প্রযোজ্য হবে।

নতুন করে ফল প্রকাশের ফলে ওই পড়ুয়াদের সমস্যা মিটেছে। সেই সঙ্গে নতুন নিয়মটিকে কার্যত অবান্তর করে দিতে চলেছে সিবিসিএস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE