Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

এসজেডিএ চার্জশিটে সাক্ষী রুদ্রনাথ, শঙ্কর, রঞ্জন, নান্টু

এসজেডিএ-র কোটি কোটি দুর্নীতি মামলার প্রথম চার্জশিটে সংস্থার পাঁচ জন বোর্ড সদস্যকে সাক্ষী হিসাবে উল্লেখ করেছে সিআইডি। ময়নাগুড়ির বৈদ্যুতিক চুল্লির মামলায় গত ২১ জুলাই আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে সিআইডি। সেখানে সাক্ষীদের তালিকায় তৎকালীন পাঁচ জন সদস্যকে সাক্ষী করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০২:৪৬
Share: Save:

এসজেডিএ-র কোটি কোটি দুর্নীতি মামলার প্রথম চার্জশিটে সংস্থার পাঁচ জন বোর্ড সদস্যকে সাক্ষী হিসাবে উল্লেখ করেছে সিআইডি। ময়নাগুড়ির বৈদ্যুতিক চুল্লির মামলায় গত ২১ জুলাই আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে সিআইডি। সেখানে সাক্ষীদের তালিকায় তৎকালীন পাঁচ জন সদস্যকে সাক্ষী করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই সিআইডি-র ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘বোর্ড সদস্যদের একাংশের যোগসাজশ ছাড়া ওই দুর্নীতি হতেই পারে না। সেখানে বোর্ডের সদস্যদের সাক্ষী করে সিআইডি আপাতত বুঝিয়ে দিল, বোর্ডের কেউ মামলায় জড়িত নয়।’’ এই অবস্থায় আজ, সোমবার ১৪ দিনের জেল হেফাজতের পর আইএএস অফিসার গোদালা কিরণকুমারকে শিলিগুড়ি আদালতে পেশ করা হবে।

আদালত সূত্রের খবর, সিআইডি-র পেশ করা চার্জশিটে মোট ৯৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৭ নম্বর থেকে ৮১ নম্বর ক্রমিক সংখ্যা অনুসারে পাঁচজন তৎকালীন বোর্ড সদস্যকে সাক্ষী করা হয়েছে। প্রথমেই রয়েছেন সংস্থার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা শহরের বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। তার পরে আছেন, জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি চন্দন ভৌমিক, তৃণমূলের পুরসভার বিরোধী দলনেতা নান্টু পাল, পুরসভার তৃণমূলের বরো চেয়ারম্যান রঞ্জনশীল শর্মা এবং মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার।

আইনি প্রক্রিয়া অনুসারে, মামলার বিচারপর্ব শুরু হলেই এদের সকলেই সমন পাঠিয়ে সাক্ষী দেওয়ার জন্য আদালতে ডেকে পাঠানো হবে। উল্লেখ, মামলার শুরুতে দুই বিধায়ক থেকে শুরু করে ওই পাঁচ জনকে ডেকে পুলিশ জেরাও করেছে।

বিধায়ক রুদ্রবাবু থেকে শঙ্করবাবু বা নান্টু পাল সকলেই অবশ্য জানিয়েছেন, আইনের উপর তাঁদের আস্থা রয়েছে। আর পুলিশ সাক্ষী যে কাউকে করতেই পারে। তাঁরা যা বলার আদালতে বলবেন।

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন

সিআইডি-র এই চার্জশিটকে অবশ্য হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা শহরের মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘এসজেডিএ নিজে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে তদন্ত করিয়েছে। সেখানে পরিষ্কার বলা রয়েছে, সংস্থার ‘পলিসি মেকার’দের একাংশের অজান্তে এমন কাজ হতে পারে না। সেখানে প্রথম চার্জশিটে বোর্ড সদস্যকে সাক্ষী করে কার্যত নির্দোষ বলা হল। এতো হাস্যকর ঘটনা।’’ অশোকবাবু জানান, সিআইডি যে আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশে কাজ করে যাচ্ছে তা আবার প্রমাণ হল।

তদন্তের এই গতিপ্রকৃতির জন্য তাঁরা সিবিআই তদন্তের দাবিতে হাইকোর্টে মামলা করেছেন বলে এদিন ফের মন্তব্য করেছেন জেলা কংগ্রেসের অন্যতম সা‌ধারণ সম্পাদক তথা পুরসভার বরো চেয়ারম্যান সুজয় ঘটক। তিনি বলেন, ‘‘এসজেডিএতে উন্নয়ন হলে তার কৃতিত্ব বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থেকে সদস্যদের। আর দুর্নীতি হলে তার দায় সরকারি অফিসার, ইঞ্জিনিয়রদের—সিআইডি তো চার্জশিটে তাই প্রমাণ করল।’’ সুজয়বাবু’র কথায়, ‘‘আমরা রাজ্যের কোনও সংস্থার উপর ভরসা রাখতে পারিনি বলেই তো হাইকোর্টে সিবিআই তদন্ত চেয়েছি। সেখানে সিআইডি নথিপত্র জমা দিচ্ছে। আদালতের কাছে সবই পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’

সিআইডি-র চার্জশিটকে একইভাবে পুরোপুরি পক্ষপাতমূলক অভিযোগ করে আদালতের তত্ত্বাবধানে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন বসু এবং সিপিআই (এমএল)-এর জেলা সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার। তাঁদের কথায়, ‘‘সিআইডির উপর ভরসা আর রাখা যাচ্ছে না। তাই হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানেই তদন্ত দরকার।’’

২০১২ সালে ময়নাগুড়িতে বৈদ্যুতিক চুল্লির প্রকল্প হাতে নেয়। প্রথমে ১৩ কোটি টাকার মত প্রকল্পের ‘বিড’ হলেও তা গরমিল করে প্রায় ১৬ কোটি টাকা করা হয়। সবশেষে কাজ প্রায় না করেই সাড়ে ৯ কোটি টাকা পেমেন্ট করে দেওয়া হয়। এই মামলায় সংস্থার তৎকালীন সিইও গোদালা কিরণ কুমার-সহ একাধিক বাস্তুকার, ঠিকাদারকে গ্রেফতার করা হয়। কিছু টাকা হাওলার মাধ্যমে ভিন রাজ্যে পাঠানো হয়েছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে চার্জশিটকে নিয়ে বিতর্ক প্রথম থেকে রয়েছে। এক অভিযুক্তের ঠিকানা ব্যখ্যা করতে গিয়ে চার্জশিটে মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের বাড়ির ঠিকানা উল্লেখ করা হয়। তা নিয়ে অশোকবাবু মামলা’র হুমকিও দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE