ভূমিকম্পে আহতদের দেখতে শিলিগুড়ি হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
ভূমিকম্পের পরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রশাসনিক বৈঠকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গকেও আহ্বান করল রাজ্য সরকার। পরপর দু’দিনের ভূমিকম্পে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতেই সোমবার উত্তরকন্যায় মুখ্যমন্ত্রী ওই বৈঠক ডেকেছেন।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বক্তব্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করার সঙ্গে সঙ্গেই গুরুঙ্গকে প্রশাসনিক বৈঠকে আহ্বান করে মোর্চার সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব কমানোরও চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত লোকসভা ভোটের সময় থেকেই তৃণমূল ও মোর্চার মধ্যে দূরত্ব বেড়ে গিয়েছে। তারপরেও কেন গুরুঙ্গকে এই বৈঠকে ডাকা হল?
তৃণমূল সূত্রে খবর, আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে আর কিছু দিনের মধ্যেই শিলিগুড়ি মহকুমার গ্রামীণ এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে পারে। পাহাড়ের কিছু রাজনীতিক মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে পাহাড়ের সমস্যা ও উন্নয়নের ব্যাপারে তাঁর আন্তরিকতা যে অটুট, পাহাড়বাসীকে সেই বার্তা দিতেই জিটিএ-কে সামিল করার চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল নেতাদের অবশ্য যুক্তি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা নিয়ে কখনও রাজনীতি হয় না। আর মুখ্যমন্ত্রী তা কখনও করেননি। ভূমিকম্পের জেরে মানুষের মনে আতঙ্ক রয়েছে। অনেকে চিকিৎসাধীন। এই অবস্থায়, সবাইকে একজোট করে কাজ করতে হবে। ওই নেতারা জানান, শুধু একজোট হওয়া নয়, সকলে যাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকেন, তা সুনিশ্চিত করতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তাই কোনও সাহায্য না চাইলেও ভূমিকম্পের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দুর্যোগের মোকাবিলার নামে মুখ্যমন্ত্রী রাজনীতি করতে এসেছেন। তাই তিনি ক্ষতিপূরণ দিতে এলেও সেখানে দলের পতাকা টাঙানো হচ্ছে। পাহাড়-সমতলের মানুষ এটা ভাল ভাবে নেবেন না।’’ এই প্রসঙ্গে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক তথা জিটিএ সদস্য রোশন গিরি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে বৈঠকে যোগ দেওযার আমন্ত্রণ এখনও আসেনি। ডাকা হলে, তখন দেখা হবে।’’
পরপর দু’দিনের ভূমিকম্পের পরে রবিবার দুপুরে কলকাতা থেকে বাগডোগরায় আসেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ভূমিকম্পে মৃত প্রত্যেকের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে, শরীরের ৬০ শতাংশের বেশি আহত হলে ২ লক্ষ টাকা করে এবং ৬০ শতাংশের কম হলে ৫৯ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। ভূমিকম্পে বাড়ি ভেঙে গেলে তা তৈরির টাকাও মিলবে। শিলিগুড়িতে এসে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা কিছু সাহায্য চাইনি। তবে স্বাভাবিক নিয়মেই তা কেন্দ্রের থেকে আসবে। এই সব সময় রাজনীতি বা অন্য কোনও বিষয় থাকে না।’’
এরপরে তিনি নকশালবাড়িতে ভূমিকম্পে মৃত রূপবান খাতুনের বাড়িতে চলে যান। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ফিরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে অসুস্থ এবং রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলেন চিকিৎসকদের সঙ্গেও। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘চিকিৎসাধীন রোগীদের ভাল চিকিৎসা হচ্ছে।’’
এরপরে তিনি চলে যান মিরিকে। আমাবাড়ির ডাঙাপাড়াতেও ভূমিকম্পে মঙলু রায় নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তবে তাঁর দেহের অন্ত্যেষ্টি হয়ে গিয়েছে বলে তিনি আর সেখানে যাননি। আমবাড়িতে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। মিরিকে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী মৃত পুষ্পা রাইয়ের বাড়িতে গিয়ে তাঁর দেহে খাদা পড়িয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান। রাতে তিনি ফিরে আসেন শিলিগুড়ির উত্তরকন্যার ভিআইপি অতিথি নিবাসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy