কার্শিয়াঙের সভায় মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
পাহাড়ে তিন ভোটের দোরগোড়ায় নতুন তিনটি বোর্ড গঠনের ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দার্জিলিং পাহাড়ের চার পুরসভার মেয়াদ ফুরিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটও এ বছরই হওয়ার কথায়। জিটিএ-র ভোটও চলতি বছরেই হতে পারে। অগস্টে জিটিএ-র মেয়াদও ফুরোচ্ছে। তার আগেই রবিবার কার্শিয়াঙের গোথেলস স্কুলের মাঠের সরকারি সভা থেকে যে তিনটি সম্প্রদায় নতুন বোর্ড পাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, তাতে জিটিএ-র প্রধান বিমল গুরুঙ্গের সম্প্রদায়ও রয়েছে। গুরুঙ্গ সম্প্রদায়ের জন্য এই পর্ষদ ঘোষণা করে মোর্চা প্রধানকে তৃণমূল নেত্রী বাড়তি চাপের মুখে ঠেলে দিলেন বলে তৃণমূল নেতাদের দাবি। সেই সঙ্গে, খাস এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্যও এ দিন বোর্ড ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিনের পরে পাহাড়ে বোর্ডের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫।
পাহাড়ে বোর্ড গঠন নিয়ে আগাগোড়া রাজ্যের বিরোধিতা করেছেন গুরুঙ্গরা। গত জুলাইয়ে রাষ্ট্রপতির সামনেই মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেছিলেন গুরুঙ্গ। তবে সূত্রের খবর, এ বার সরাসরি সংঘাতের রাস্তায় না-ও হাঁটতে পারেন তাঁরা। মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলার শুনানি মাসখানেকের মধ্যেই শুরু হওয়ার কথা। সে সময় মামলায় অভিযুক্ত গুরুঙ্গ সহ অন্য শীর্ষ মোর্চা নেতারা পাহাড়ে থাকতে পারবেন না। তাঁদের কলকাতা পুলিশের এলাকায় থাকতে হবে। ইতিমধ্যে তা নিয়ে যথেষ্ট চাপে দল। সে কারণেই এখন রাজ্যের সঙ্গে নতুন করে সংঘাতে না গিয়ে আজ চৌরাস্তায় মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সরকারি অনুষ্ঠানে কোনও প্রতিনিধিকে গুরুঙ্গ পাঠাতে পারেন বলে দলের অন্দরের খবর।
তবে নতুন করে বোর্ড গঠন নিয়ে উষ্মার কথা লুকোননি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি। তিনি বলেন, ‘‘ভোটে জেতার জন্য মুখ্যমন্ত্রী একের পর এক বোর্ড গঠন করার কথা বলছেন। তবে তাতে কোনও লাভ হবে না। পাহাড়বাসীর সমর্থন মোর্চার সঙ্গেই রয়েছে।’’ তবে পাহাড়ের তৃণমূল নেতাদের দাবি, একের পর এক বোর্ড গড়ে উন্নয়ন করাতেই এখানে শাসক দলের পায়ের তলার জমি শক্ত হয়েছে। বিধানসভায় পাহাড়ের তিন আসনেই মোর্চার জয়ের ব্যবধান কমেছে। কালিম্পঙে মোর্চা ১১ হাজারের কিছু বেশি ভোটে জিতেছে। বিধানসভা ভোটের নিরিখে কালিম্পং পুরসভা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় মোর্চা। দার্জিলিং-কার্শিয়াং-মিরিক পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল প্রার্থীরা।
মুখ্যমন্ত্রীও ভোটের কথা নিয়ে কোনও লুকোছাপা করেননি। তিনি জানান, আগে বারোটি বোর্ডের উন্নয়নের জন্য মোট ২৬৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, আরও তিনটি বোর্ড হল। দার্জিলিঙের অস্থায়ী শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ নিয়ে রাজ্য সরকার দ্রুত পদক্ষেপ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘পাহাড়ের জন্য অনেক কাজ করতে চাই। পুরসভা-জিটিএ আমার হাতে থাকলে অনেক কাজ করতে পারতাম। পাহাড়ের যা প্রয়োজন তাই করে দেওয়া সম্ভব হতো।’’
আগামী মাসে মুখ্যমন্ত্রী ফের পাহাড়ে আসবেন জানিয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে কালিম্পঙ পৃথক জেলা হিসেবে কাজ শুরু করবে। মিরিক নতুন মহকুমা গঠন করা হবে। তিনধরিয়ায় ধস মেরামত করা, পাহাড়ের জাতীয় এবং রাজ্য সড়ক সংস্কারের জন্য ২২০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে গত সেপ্টেম্বরে বন্ধ ডেকেছিল মোর্চা। লাগাতার বন্ধের হুমকিও দিয়েছিল। সরাসরি সে প্রসঙ্গ না তুললেও মোর্চাকে বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘অশান্তি করলে কোনও উন্নয়ন হবে না। পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য শান্তি চাই। পাহাড়বাসীকে আমি ভালবাসি। বাসিন্দাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। পাহাড়বাসীর যা প্রয়োজন তাই দেব। আপনাদের কাছে আবেদন সকলে আগামী ভোটে অংশ নিন।’’
খেলায় জয়ীদের চাকরি
জঙ্গল মহলের মতোই পুলিশের হিমাল, তরাই ডুয়ার্স স্পোর্টসের বিভিন্ন খেলায় জয়ীদের চাকরি দেওয়ার কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার দুপুরে কার্শিয়াঙের গোথেলস মেমোরিয়াল স্কুল মাঠের অনুষ্ঠানে বিজেতাদের হাতে পুরস্কার হিসেবে স্কুটি, বাইক, এলএইডি টিভি তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে উত্তরবঙ্গের এডিজি এন রমেশবাবু, জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগিদের তিনি ওই ছেলেমেয়েদের বিস্তারিত তথ্য ভাণ্ডার তৈরির নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘‘আমরা সবার ছোটখাট চাকরির ব্যবস্থা করব।’’ জঙ্গলমহলেও একই ভাবে খেলাধূলায় বিজেতাদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। ৯০ জন ছাত্রছাত্রীকে ১০ হাজার টাকা করে সাহায্যও দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy