উত্তরকন্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি বিশ্বরূপ বসাক।
জয়ী হন বা না হন, বঞ্চিত হলেন না কেউই! নেত্রীর বদান্যতায় উত্তরবঙ্গের ছোট-বড় প্রায় সব নেতাই জায়গা পেলেন সরকারি কমিটিতে। সৌজন্যে, এ বারের ভোটে উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের ভাল ফল। বুধবার উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে ৪টি কমিটি গড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২৯ জনকে মনোনীত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে এমনটা মনে করছেন দলেরই অনেকে।
দ্বিতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবার উত্তরবঙ্গ সফরে এসে বুধবার শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সফরের আগে থেকেই অবশ্য নানা নেতার ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে জল্পনা চলছিল। কারণ, কেউ ভাল ফল করেও মন্ত্রিত্ব পাননি। তাই তাঁর অনুগামীরা ছিলেন হতাশ। আবার কেউ হারের পরেও জোরদার লড়াইয়ের জন্য কিছু স্বীকৃতির আশায় ছিলেন উন্মুখ। সরকারি কমিটির তালিকা সামনে আসতে দেখা গেল, নেত্রীর কৃপাদৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হননি প্রায় কেউই। শুধু দলের নেতারাই নন, তৃণমূলকে বিধানসভা ভোটে সমর্থন করেও ‘পুরস্কার’ জিতেছেন পাহাড়ের দুই নেতা হরকাবাহাদুর ছেত্রী ও জিএনএলএফ সভাপতি, প্রয়াত সুবাস ঘিসিঙ্গের ছেলে মোহন ওরফে মনও।
তবে এ দিনের পুরস্কারের তালিকায় তৃণমূলের অন্দরে সর্বাধিক চর্চিত নাম ছিল কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামী এবং আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। মিহিরবাবুকে এনবিএসটিসির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এনবিএসটিসির চেয়ারম্যান পদ থেকে সৌরভবাবুকে সরিয়ে দেওয়া হলেও তাঁকে চা বাগান নিয়ে কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। তাতে সৌরভবাবুর প্রশাসনিক গুরুত্বও বেড়েছে। সৌরভবাবু গত সপ্তাহেই এসজেডিএ-র চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব পেয়েছেন। বামেদের খাসতালুক বলে পরিচিত ধূপগুড়ি আসনে জয়ী মিতালী রায়কে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের
উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্য হয়েছেন বিধায়ক অর্ঘ্য রায় প্রধান, খগেশ্বর রায়, অনিল অধিকারীও। এনবিএসটিসির ডিরেক্টর ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হয়েছেন চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমান।
‘পুনর্বাসন’ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে উত্তরবঙ্গের দুই প্রাক্তন মন্ত্রীকেও। ইসলামপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরীকে উন্নয়ন পর্ষদের উপদেষ্টা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং মালদহের মানিকচকের প্রাক্তন বিধায়ক তথা মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রকে ওই কমিটিরই সদস্য করা হয়েছে। সরকারি পদে পুর্নবাসন পেয়েছেন শিলিগুড়ি থেকে ভোটে লড়ে পরাজিত ভাইচুং ভুটিয়াও। উত্তরবঙ্গের ক্রীড়া উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ছাড়া ভাইচুংকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের কাউন্সিলের সদস্যও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আলিপুরদুয়ারের চা শ্রমিক নেতা প্রাক্তন সাংসদ জোয়াকিম বাক্সলা, কোচবিহারের নেতা আব্দুল জলিল আহমেদকেও রাখা হয়েছে কয়েকটি সরকারি কমিটিতে। তবে শিকে ছেঁড়েনি এক জনের। কোনও কমিটিতেই রাখা হয়নি এ বারের ভোটে পরাজিত প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীকে।
দলের বাইরের সঙ্গীদের ক্ষেত্রেও দরাজহস্ত ছিলেন মমতা। পাহাড়ে মোর্চার বিরুদ্ধে তৃণমূলের লড়াইয়ের সঙ্গীদের ‘স্বীকৃতি’ দিয়েছেন তিনি। কালিম্পঙের প্রাক্তন বিধায়ক তথা জন আন্দোলন পার্টির সভাপতি হরকাবাহাদুর ছেত্রীকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নে গঠিত উপদেষ্টা কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে। জিএনএলএফের সভাপতি মন ঘিসিঙ্গকে সামিল করা হয়েছে উত্তরবঙ্গ ক্রীড়া উন্নয়ন কমিটিতে। মোর্চা ছেড়ে জন আন্দোলন পার্টি নামে নতুন দল গড়ে তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে কালিম্পং কেন্দ্রে লড়েছিলেন হরকা। জিততে না পারলেও মোর্চার জয়ের মার্জিন এগারো হাজার ভোটের কাছাকাছি নামিয়ে এনেছেন তিনি। কালিম্পং পুরসভার সিংহভাগ ওয়ার্ডেই মোর্চা প্রার্থীকে ভোটের নিরিখে পিছনে ফেলেছেন হরকা। দার্জিলিং, কালিম্পং এবং কার্শিয়াং— তিন আসনেই এ বারের ভোটে মোর্চার জয়ের ব্যবধান কমেছে। মনে করা হচ্ছে, সে কারণেই একাধিক কমিটিতে দার্জিলিং আসনে তৃণমূলের প্রার্থী সারদা সুব্বা এবং কার্শিয়াঙের প্রার্থী শান্তা ছেত্রীও ঠাঁই পেয়েছেন।
বিরোধীরা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘সরকারি দফতরের কাজের জন্য মুখ্যমন্ত্রী কমিটি ঘোষণা করেছেন। অথচ বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধি, বিধায়ক, মেয়র, চেয়ারম্যানদের সেখানে রাখা হয়নি। এতে তো অনেকের মনে হতে পারে তৃণমূলের পরাজিত প্রার্থীদের পুনর্বাসন কমিটি হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy