মেজাজ: প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সোমবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
রাজ্য জুড়ে যখন ডেঙ্গির দাপট, তখন রোগের প্রকোপের কথা মানতেই নারাজ ছিল তাঁর সরকার। মুখ্যমন্ত্রীই বলেছিলেন, ডেঙ্গি নিয়ে গুজব এবং আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। অন্য দিকে তথ্য এমনকী ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনাও আড়াল করার পাল্টা অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা।
সোমবার নদিয়া জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে নিজে থেকেই ডেঙ্গি প্রসঙ্গ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, রোগ মোকাবিলায় পঞ্চায়েত দফতরের ভূমিকায় তিনি খুশি নন। তখন তাঁর ঠিক পাশে বসে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ঘর ঠাসা নেতা-মন্ত্রী-আমলা, বিভিন্ন দফতরের কর্মী অফিসারে।
এ দিন বৈঠকে নদিয়া জেলাশাসক সুমিত গুপ্তকে ডেঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন করেন মমতা। জানতে চান, জেলা নজরদারি কমিটি এ ব্যাপারে কতটা কাজ শুরু করেছে। জেলাশাসক কিছুটা উত্তর দেওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আরবান ডেভেলপমেন্ট তবু ভাল কাজ করেছে, কিন্তু পঞ্চায়েত ভাল করেনি। ‘সরি টু সে’ সুব্রতদা, পঞ্চায়েত মনিটরিং করছে না।’’
অর্থাৎ, মমতার কাছে ডেঙ্গি মোকাবিলায় ফিরহাদ (ববি) হাকিমের দফতর পুরো নম্বর পেলেও সুব্রতবাবুর দফতর ফেল!
আরও পড়ুন: পুলিশকে ভর্ৎসনা মমতার
কৃষ্ণনগর সার্কিট হাউসে বৈঠকের ভিতরেই তখন ফিসফাস শুরু হয়ে গিয়েছে। উপস্থিত নেতা-অফিসারেরা বলছেন, ডেঙ্গি মোকাবিলা কার কাজ? মমতার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা স্বাস্থ্য দফতরের, না কি পঞ্চায়েত দফতরের? মুখ্যমন্ত্রীর সামনে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি সুব্রতবাবু। তবে বৈঠকের পরে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ আমাদের কাজ নয়। মুখ্যমন্ত্রী হয়তো চাইছেন পঞ্চায়েতও যেন এ ব্যাপারে একটু এগিয়ে আসে। বাকিটা আপনাদের যা মনে হয়, লিখে দিন!’’
প্রশাসনের একটা বড় অংশের মতে, গত বছরের শেষ কয়েকটা মাসে রাজ্যে যখন ডেঙ্গির রমরমা, তখন রোগ মোকাবিলার বদলে তা অস্বীকার করতেই ব্যস্ত ছিল সরকার। এ নিয়ে কেন্দ্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে চাপানউতোর থেকে শুরু করে হাইকোর্টে মামলা পর্যন্ত হয়। কিন্তু সরকারই যে হেতু ডেঙ্গির প্রকোপ মানতে নারাজ ছিল, ফলে তার প্রতিরোধে কোমর বেঁধে নামেনি প্রশাসনও। তখন গ্রামের রাস্তায় ব্লিচিং ছড়ানোর নাম করে আটা ছড়ানোর খবর করেছিল আনন্দবাজার। মুরগিতে খেয়ে গিয়েছিল সেই আটা।
সেই সময় এ নিয়ে মুখ খোলেননি মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন তিনি দোষ দেন বিরোধী দলের পঞ্চায়েতকেই। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘গত বছর উত্তর চব্বিশ পরগনার দু’টি জায়গা থেকে ডেঙ্গি ছড়িয়েছিল। ওই পঞ্চায়েত দু’টি অন্য দলের। সেখানে ব্লিচিংয়ের বদলে আটা দেওয়া হয়েছে। সে আটা কাক খেয়ে গিয়েছে। এটা দেখতে হবে। সিরিয়াস ক্রাইম।’’ এ ব্যাপারে পঞ্চায়েতসচিব সৌরভ দাসের বক্তব্য, ‘‘গ্রাম পঞ্চায়েত সরাসরি ব্লিচিং কেনে। কোন পঞ্চায়েত এটা করেছে দেখতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী যখন বলেছেন তখন সব রকম খোঁজ নেওয়া হবে।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী পাল্টা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত না হয় অন্য দলের, কিন্তু মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা, জেলাশাসক— সব তো ওঁর প্রশাসনের। তাঁরা কী করছিলেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy