Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
তোলপাড় রিষড়ার বিধানচন্দ্র রায় কলেজ

কলেজ ছাত্রীকে চড়-থাপ্পড়-লাথি মারলেন তৃণমূল ছাত্রনেতা

বুধবার ফের আক্রান্ত হয়েই চন্দননগর কমিশনারেটের এসিপি মল্লিকা গর্গের কাছে ওই অভিযোগ জানান ছাত্রীটি।

প্রকাশ্যে: মারের এমন ছবিই ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ্যে: মারের এমন ছবিই ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রিষড়া শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৮
Share: Save:

কুপ্রস্তাবে সাড়া দেননি। এই ছিল ‘অপরাধ’। তাই রিষড়ার বিধানচন্দ্র রায় কলেজের এক ছাত্রীকে কয়েকদিন ধরে মারধর, শ্লীলতাহানি এবং তাঁর উপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) শাহিদ হাসান খানের বিরুদ্ধে। বিএ তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীটিও একই সংগঠনের সদস্য। ছাত্র সংসদের পদাধিকারীও। নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় তিনি বৃহস্পতিবার কলেজ যাননি।

বুধবার ফের আক্রান্ত হয়েই চন্দননগর কমিশনারেটের এসিপি মল্লিকা গর্গের কাছে ওই অভিযোগ জানান ছাত্রীটি। বৃহস্পতিবার ছাত্র সংসদের ঘরের গত ৪ ডিসেম্বরের একটি সিসিটিভি ফুটেজ সংবাদমাধ্যমের হাতে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, শাহিদ মেয়েটিকে চড়-থাপ্পড়, লাথি মারছেন। জামা ধরে টানছেন। এক বার টেবিলের কাচ তুলে মারতেও উদ্যত হন। ঘরের অন্য যুবকেরা শাহিদকে থামান।

ছাত্রীটি বলেন, ‘‘শাহিদের কুপ্রস্তাবে রাজি না-হওয়ায় ও প্রায়ই আমাকে ফিজিক্যালি, মেন্টালি এবং সেক্সুয়ালি হেনস্থা করছিল। খুনেরও হুমকি দিয়েছে। ওর একক সিদ্ধান্তেই ছাত্র সংসদের যাবতীয় কাজকর্ম চলে। ও কলেজের নানা অনুষ্ঠানের টাকা আত্মসাৎ করে জাল বিল দিত। এ সবের প্রতিবাদ করাতেই আমার উপরে রাগ।’’

আরও পড়ুন: বাসন্তীতে গুলিযুদ্ধ, বুক ফুঁড়ল স্কুলফেরত পড়ুয়ার

বালির দেওয়ানগাজি রোডের বাসিন্দা ওই ছাত্রীর আরও অভিযোগ, নিগ্রহের কথা জানানো সত্ত্বেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেননি। কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ মানেননি। তাঁদের দাবি, লিখিত বা মৌখিক— কোনও ভাবেই ছাত্রীটি কোনও অভিযোগ জানাননি। এ দিন সংবাদমাধ্যম থেকে ঘটনার কথা জানতে পেরে কলেজের অ্যান্টি-র‌্যাগিং কমিটি এবং যৌন হেনস্থা প্রতিরোধ কমিটি আলোচনায় বসে। টিচার-ইনচার্জ রমেশ কর বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের থেকে ওই ফুটেজ দেখে তদন্ত শুরু করেছি। অভিযুক্তকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কেন তাঁকে বহিষ্কার করা হবে না, তা চিঠি দিয়ে তিন দিনের মধ্যে জানতে চাওয়া হয়েছে।’’ তবে, ফুটেজ তাঁরা আগে দেখেননি কেন, এই প্রশ্নে রমেশবাবু জানান, মনিটর তাঁর ঘরে থাকলেও একটি কোর্স করার জন্য তিনি গত মাসের কয়েক দিন কলকাতায় ছিলেন। ফলে, ফুটেজ নজর এড়িয়ে যায়।

ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়েছে টিএমসিপি এবং শাসকদলও। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন নবান্নে বলেন, ‘‘এখানে এসে ঘটনাটি জেনেছি। দলের জেলা সভাপতিকে রিপোর্ট দিতে বলেছি। রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা জানাব।’’ আজ, শুক্রবারই ওই রিপোর্ট শিক্ষামন্ত্রীকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত। টিএমসিপি-র রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত বলেন, ‘‘নিন্দনীয় ঘটনা। শুক্রবারের মধ্যেই শাহিদকে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ইস্তফা দিতে বলা হয়েছে। পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। ওকে সংগঠনের কাজ থেকেও আপাতত বিরত থাকতে বলা হয়েছে।’’ এডিসিপি (শ্র্রীরামপুর) অতুল ভি জানান, ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। রিষড়া থানায় ওই ছাত্রের নামে এফআইআর হয়েছে।

কী বলছেন শাহিদ?

বাবা জাহিদ হাসান খান রিষড়ার উপ-পুরপ্রধান হওয়ায় কলেজে শাহিদের আস্ফালনের অভিযোগ রয়েছেই। ছাত্রীর অভিযোগ সামনে আসায় শাহিদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন অনেকেই। তাঁরা মনে করছেন, ছাত্রীর অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে। শাহিদ অবশ্য সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন। ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে তিনি পাল্টা হেনস্থার অভিযোগ জানিয়েছেন থানায়। শাহিদের দাবি, ‘‘ওই ছাত্রী ছাত্র সংসদের সভাপতি হতে চান। এ জন্য আমার কাছে তদ্বিরও করেছেন। কিন্তু তিনি না-করায় ছাত্রীটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমার নামে কুৎসা করছে।’’ তা হলে ৪ ডিসেম্বরের ফুটেজ কি মিথ্যা? ওই ছাত্রনেতা বলেন, ‘‘সে দিন কলেজের মাঠে কয়েক জনের সঙ্গে বসেছিলাম। মেয়েটি নেশাগ্রস্ত হয়ে এসে আমার গায়ে থুথু দেয়। ওকে ছাত্র সংসদের ঘরে আসতে বলি। সেখানেও থুথু ছেটায়। তখন শুধু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিই। মারধর করিনি। ও আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে চায়। তাই এতদিন পরে অভিযোগ তুলছে।’’

ছাত্রীটি এখনও তটস্থ। তিনি বলেন, ‘‘কলেজ যেতে ভয় করছে। ওর ঘনিষ্ঠ কয়েক জন বাড়িতে এসে আমাকে এবং পরিবারের লোকজনকে শাসিয়ে গিয়েছে।’’ কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রীটিকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE