রাজ্যে জনপরিষেবা অধিকার আইন তৈরি হয়েছে ২০১৩ সালে। আইন বলবৎ করার জন্য জনপরিষেবা অধিকার কমিশন গঠিত হয়েছে গত বছর। নবান্নের কাছে সেই কমিশনের প্রথম সুপারিশ, সরকারি ওয়েবসাইটে জনপরিষেবা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি ইংরেজির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাতেও দেওয়ার ব্যবস্থা হোক। কারণ, রাজ্যের বহু মানুষ এখনও ইংরেজি পড়তে বা বুঝতে সক্ষম নন।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই মানুষ যাতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন, তার জন্য ‘সময়ের সাথী’ নামে একটি প্রকল্প তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এই প্রকল্প তৈরি করতে হল কেন?
নবান্নের এক কর্তা জানান, সরকারের বিভিন্ন দফতরের অধীনে বেশ কিছু জনকল্যাণ প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত প্রচার ও পরিকাঠামোর অভাবে অনেকেই প্রকল্পগুলির কথা জানতে পারেন না। আবার যাঁরা জানতে পারেন, অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের সেই সুযোগ-সুবিধা পেতে কালঘাম ছুটে যায়। এক কথায় চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন উপভোক্তারা। ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এই হয়রানি ও অব্যবস্থার মূলেই আঘাত করতে চান,’’ বলেন ওই কর্তা। সেই জন্যই সময়ের সাথী প্রকল্প রূপায়ণে প্রথমে আইন এবং পরে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল, পরিষেবা পেতে আগ্রহী কোনও নাগরিক আবেদন করলে যথাসময়ে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। সংশ্লিষ্ট দফতরকেই জানিয়ে দিতে হবে, কত দিনের মধ্যে তারা আবেদনকারীর কাজটা করে দিতে পারবে। নবান্নের খবর, খাতায়-কলমে বছরখানেক আগে কমিশন গড়া হলেও তারা কাজ শুরু করেছে মাত্র কয়েক মাস। এবং প্রথমেই সরকারের কাছে তাদের সুপারিশ, এ রাজ্যের বেশির ভাগ মানুষ যে-ভাষা বুঝতে ও পড়তে পারেন, সেই বাংলাতেও কল্যাণকাজের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া উচিত। কমিশনের এক কর্তার যুক্তি, বিশেষত গ্রামাঞ্চলের বহু মানুষ ইংরেজি ভাষা বোঝেন না। এমনকী অল্পশিক্ষিত অনেকের কাছেও ইংরেজি বিজ্ঞপ্তি বোধগম্য হয় না। তাই বাংলাতেও বিজ্ঞপ্তি দরকার। ‘‘আমাদের ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যেই ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষার ব্যবহার শুরু হয়েছে,’’ বলেন ওই কর্তা।
কিন্তু শুধু ওয়েবসাইটে দিলেই সকলে প্রকল্পের জানতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ বাড়িতে এখনও কম্পিউটার নেই। ফলে তাঁদের ওয়েবসাইট দেখার সুযোগ নেই। এই সমস্যা কাটাতে পঞ্চায়েত এবং বিডিও অফিসে নোটিস টাঙানো এবং বিভিন্ন গ্রামে পরিষেবার নাম, নির্দিষ্ট সময় জানিয়ে প্রচারের ব্যবস্থা করা উচিত। তা হলেই সময়ের সাথী প্রকল্পের সার্থক রূপায়ণ সম্ভব। কমিশনের প্রধান অরূপ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আইনে ফেস্টুন, ব্যানার, পোস্টারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার কথা বলা আছে। কিন্তু সেখানেও ইংরেজিতেই পোস্টার লেখা হচ্ছে। সেগুলো বাংলাতেও লেখার কথা বলেছি।’’
‘সময়ের সাথী’ প্রকল্প ঘোষণার পরে বিভিন্ন সরকারি দফতর জনপরিষেবামূলক প্রকল্পগুলির কথা ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে। সেখানে বলা হচ্ছে, কোন পরিষেবা পেতে কত দিন সময় লাগবে। তার ভিত্তিতেই নির্দিষ্ট ফর্মে আবেদন করতে হয়। রাজ্যের ২৩টি দফতরই সময়ের সাথী প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। এই প্রকল্পের মধ্যে ২৭৫টির মতো পরিষেবা পাওয়ার কথা সাধারণ মানুষের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy