Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রায়শই ‘পাচার’ হয় রোগী, নার্সিংহোমে ঢোকালেই মেলে কমিশন

একটা মৃত্যু নতুন করে সামনে নিয়ে এল অনেক দিনের অভিযোগকে। কী সেই অভিযোগ? কী ভাবে এক সরকারি হাসপাতাল থেকে ‘রেফার’ হয়ে অন্য সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার মাঝপথেই ‘হাইজ্যাক’ হয়ে যান রোগী।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:২৫
Share: Save:

একটা মৃত্যু নতুন করে সামনে নিয়ে এল অনেক দিনের অভিযোগকে।

কী সেই অভিযোগ?

কী ভাবে এক সরকারি হাসপাতাল থেকে ‘রেফার’ হয়ে অন্য সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার মাঝপথেই ‘হাইজ্যাক’ হয়ে যান অনেক রোগী। যে অ্যাম্বুল্যান্সের রোগীকে নিয়ে যাওয়ার কথা অন্য এক সরকারি হাসপাতালে, সেই চালকই পরিবারকে ছলে-কৌশলে বুঝিয়ে রোগীকে ভর্তি করিয়ে দেন নার্সিংহোমে। তার সুবাদে চালকের ট্যাঁকে ঢোকে কমিশন।

এখানে কথা হচ্ছে বীরভূমের রামপুরহাট হাসপাতাল নিয়ে। আগের মহকুমা হাসপাতাল এখন জেলা হাসপাতাল। বীরভূম তো বটেই, লাগোয়া ঝাড়খণ্ড ও মুর্শিদাবাদের একাংশ থেকেও প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী এই হাসপাতালে আসেন। অভিযোগ, যে রোগ সারানো সম্ভব রামপুরহাটেই, বহু ক্ষেত্রেই নিজেদের ঘাড়ে তা না রেখে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এই ‘রেফার’ প্রথাই সুযোগ করে দিয়েছে হাসপাতাল চত্বরে থাকা অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের একাংশের সঙ্গে বর্ধমানের কিছু নার্সিংহোমের আঁতাঁতের।

ঠিক যেমন চুমকি লেটের ক্ষেত্রে হয়েছে বলে অভিযোগ। ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানার সদ্য মা হওয়া ওই যুবতীকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রামপুরহাটেই। হাসপাতাল তাঁকে ‘রেফার’ করে বর্ধমান মেডিক্যালে। অভিযোগ, যে অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেটির চালক চুমকির বাবা তপন লেটকে ভুল বুঝিয়ে নিয়ে যান বর্ধমানের নবাবহাটের পিজি নার্সিংহোমে। বিলের টাকা পুরো জোগাড় করতে না পারায় চুমকিকে ছাড়া হবে না বলে জানায় নার্সিংহোম। মঙ্গলবার আত্মঘাতী হন তপনবাবু।

আরও পড়ুন: অ্যাপোলোর বিরুদ্ধে থানায় নালিশ করল সঞ্জয়ের পরিবার

মুরারই ব্লকের তেমনই এক ভুক্তভোগী রোগীর কথায়, “সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ঠিকমতো চিকিৎসা হবে না, আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে রোগী—এই সব ভয় দেখানো শুরু হয়। এর পরে পছন্দের নার্সিংহোমের নামে গুণগান শুরু করে দেন চালক। এক সময়ে তাঁর কথায় বিশ্বাস করে রোগীর পরিবার। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। সুস্থ হয়ে যে বাড়ি ফিরেছি, সেই ঢের।’’

ঘটনা হল, বছর চারেক আগেও রামপুরহাট হাসপাতালে যেখানে চার, পাঁচটি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া খাটত, সেখানে এখন সংখ্যাটি ২৩। বর্ধমানে গত তিন-চার বছরে শুধু জিটি রোডের উপরেই অন্তত ৩১টি নার্সিংহোম খুলেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখে রোগী টানতেই অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের ‘কমিশন’ দেয় নার্সিংহোমগুলির একাংশ। মালিকরা।

বর্ধমান নার্সিংহোম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা জানালেন, অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের সঙ্গে কিছু নার্সিংহোমের আঁতাঁতের কথা তাঁদেরও কানে গিয়েছে। খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ব্রজেশ্বর মজুমদার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Harassment of Patient Commission Brokers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE