অনুপম আদক
সবং-কাণ্ডে ধৃত ছাত্র পরিষদের কর্মী অনুপম আদককে বিচার চলাকালীন মেদিনীপুর থেকে হাওড়া জেলে সরিয়ে আনা নিয়ে সোমবার হইচই বাধল বিধানসভায়। আদালতের নির্দেশ ছাড়া কেন অনুপমকে এক জেল থেকে অন্য জেলে আনা হল, তা নিয়ে এ দিন বিধানসভা অধিবেশনের প্রথমার্ধে পয়েন্ট অফ অর্ডার আনতে চেয়েছিলেন কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব। কিন্তু বিষয়টি ‘বিচারাধীন’, এই যুক্তি দেখিয়ে তাঁকে বক্তব্য শেষ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রতিবাদে কংগ্রেস ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ করে এবং পরে সারা দিনের জন্য অধিবেশন বয়কট করে।
বিধানসভায় যে দিন সবং-কাণ্ড নিয়ে এই হইচই চলছে, তখন অনুপমকে মেদিনীপুর জেলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর মা প্রতিমা আদকের আর্জি অবশ্য খারিজ করে দিয়েছেন মেদিনীপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) মঞ্জুশ্রী মণ্ডল। মেদিনীপুর থেকে হাওড়া জেলে সরিয়ে দেওয়ায় অনুপমের প্রাণসংশয়ের আশঙ্কা করছেন তাঁর মা। সিজেএম মঞ্জুশ্রীদেবীর এজলাসে পিটিশন দিয়ে এ দিন তিনি ওই আশঙ্কার কথা জানান। তাঁর আর্জি, ‘‘ছেলেকে মেদিনীপুর জেলেই ফিরিয়ে আনা হোক।’’ প্রতিমাদেবীর আরও অভিযোগ, মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশী অনুপমকে পুজোয় জামা-টাকা দেবেন বলেছেন। বিনিময়ে একটা কাগজে সই করিয়ে নিতে চেয়েছেন। সই না করলে ছেলের জীবন শেষ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চেয়ে অনুপম যে হেতু আবেদন করেছেন, তাই তাঁকে চাপ দিয়ে ওই আবেদন তোলাতেই জেল বদল-সহ নানা কাণ্ড চলছে বলে ধৃত ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ।
মেদিনীপুরের সিজেএম-এর এজলাসে অনুপমের আইনজীবী হরিসাধন ভট্টাচার্যও একই মর্মে পৃথক পিটিশন জমা দেন। তাঁরও আশঙ্কা, ‘‘হাওড়া জেলে থাকাকালীন অন্য কয়েদিদের দিয়ে অনুপমকে মারধর করানো হতে পারে। অনুপমকে দিয়ে কোনও কাগজে জোর করে সই করানো হতে পারে।’’ সরকার পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ নাজিম হাবিব অবশ্য যুক্তি দেন, ‘‘নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই এই জেল বদল।’’ সিজেএম দু’টি পিটিশনই খারিজ করে দিয়েছেন। আজ, মঙ্গলবার অনুপমের গোপন জবানবন্দি প্রত্যাহারের আর্জি নিয়ে শুনানি রয়েছে মেদিনীপুরের সিজেএম আদালতে। তবে আজ অনুপমকে হাজিরা দিতে হবে না। তাঁকে হাজিরা দিতে হবে ৩ অক্টোবর।
কলকাতা হাইকোর্টেও এ দিন সবং সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। উচ্চ আদালতে সেই মামলার জন্য নিম্ন আদালতের মামলায় কোনও প্রভাব পড়বে না বলে হাইকোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে। আবেদনকারীরা কিছু অতিরিক্ত তথ্য হাইকোর্টে জমা দিতে চেয়েছেন। হাইকোর্ট কাল, বুধবারের মধ্যে তাঁদের অতিরিক্ত হলফনামা দিতে বলেছে বলে আবেদনকারীদের আইনজীবী জানিয়েছেন। অধিবেশন বয়কট করার পরে এ দিন বিধানসভা চত্বরে সোহরাব বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ ছাড়া কী করে অনুপমের জেল বদল হল? এটা বেআইনি! আমরা জানতে চাই, এক জন এসপি-র কথায় কি সরকার চলছে?’’ সবংয়েরই বিধায়ক তথা কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা মানস ভুঁইয়ার ক্ষোভ, ‘‘পুলিশ সুপার শ্মশান-কালীর মতো খড়্গ হাতে ছোটাছুটি করছেন! আর মুখ্যমন্ত্রী মা চণ্ডীর মতো হিল্লি-দিল্লি ছুটে বেড়াচ্ছেন! নিরীহ মানুষ কোনও সুরক্ষা পাচ্ছেন না।’’
অনুপম হাওড়া জেলে চলে আসায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েও জেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রথমে অনুমতি পাননি কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র। নিয়মানুযায়ী, জেলার জনপ্রতিনিধিরা আগাম নোটিস দিয়ে জেলে বন্দির সঙ্গে দেখা করতে পারেন। পরে কারামন্ত্রী হায়দর আজিজ সফির হস্তক্ষেপে অবশ্য তাঁকে জেলে গিয়ে অনুপমের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy