Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কোপে শুধু প্রধান শিক্ষকই কেন, বিতর্ক

গত বুধবার বিধাননগর সরকারি স্কুলে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন স্কুল শিক্ষা সচিব এবং স্কুল শিক্ষা দফতরের অধিকর্তা। স্কুলের পরিস্থিতি দেখে খুবই অসন্তুষ্ট হন তাঁরা। মিড-ডে মিল বণ্টনের হিসেবে অসামঞ্জস্য এবং অপরিচ্ছন্ন স্কুলবাড়ি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। সেই পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতেই ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকুমার চক্রবর্তীকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল শিক্ষা দফতর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫৩
Share: Save:

বিধাননগরে প্রধান শিক্ষককে সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত নিয়ে ছড়িয়েছে বিতর্ক।

গত বুধবার বিধাননগর সরকারি স্কুলে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন স্কুল শিক্ষা সচিব এবং স্কুল শিক্ষা দফতরের অধিকর্তা। স্কুলের পরিস্থিতি দেখে খুবই অসন্তুষ্ট হন তাঁরা। মিড-ডে মিল বণ্টনের হিসেবে অসামঞ্জস্য এবং অপরিচ্ছন্ন স্কুলবাড়ি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। সেই পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতেই ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকুমার চক্রবর্তীকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল শিক্ষা দফতর।

কিন্তু কোপে শুধু প্রধান শিক্ষক কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নানা মহলে। এর দায় যে তাঁর একার নয়, তা নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকেই। শনিবার সরকারি স্কুল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘‘যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা কখনওই কাঙ্খিত নয়। মাত্র কিছু দিন হল সুকুমারবাবু প্রধান শিক্ষক পদে এসেছেন। তিনিই সবটার জন্য দায়ী, এটা ভাবা বোধ হয় ঠিক নয়। প্রাক্তনদের উপরেও দায় বর্তায়।’’

প্রসঙ্গত, গত মে মাসে বালিগঞ্জ সরকারি স্কুল থেকে বিধাননগর সরকারি স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন সুকুমারবাবু। সহ-প্রধান শিক্ষক তারাপদ সাঁতরা এর আগে ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে এক বছর ধরে কাজ চালিয়েছেন। এ দিন তারাপদবাবুও স্বীকার করেন, যদি স্কুলের দিক থেকে কোনও গাফিলতি হয়ে থাকে, তার দায়িত্ব কোনও ভাবেই একা সুকুমারবাবুর নয়।

অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষক সুকুমারবাবুর চাকরি রয়েছে আগামী ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। তাঁর বক্তব্য, তিনি চিরকাল নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন। ভবিষ্যতেও করবেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘এখনও সাসপেনশনের চিঠি হাতে পাইনি। তবে আমাকে যদি গোটা বিষয়টি ব্যাখ্যার সুযোগ দেওয়া হয়, তবে তা করব।’’

স্কুল সূত্রের খবর, পরিদর্শক দলের আসার কোনও খবর সুকুমারবাবুর কাছে ছিল না। ফলে স্কুলের তরফে আগাম প্রস্তুতির কোনও সুযোগ ছিল না। এ দিকে স্কুলে এখন বিদ্যুৎ লাইনের মেরামতের কাজ চলছে। তার ফলে ধুলো-বালিও ছড়াচ্ছে বেশি। কিন্তু স্কুলে রয়েছেন এক জনই সাফাইকর্মী। তাঁর একার পক্ষে সব দিক পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না বলেই যুক্তি স্কুলের। অভিযোগ অবশ্য উঠেছে আরও। পরিদর্শকেরা দেখেছেন, শৌচালয়ও ব্যবহারযোগ্য নয়। জলের সব কল কাজ করে না। নানা জায়গায় জল জমে থাকতেও দেখেন পরিদর্শকেরা।

মিড-ডে মিলের হিসেব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন পরিদর্শকেরা। তাঁদের প্রশ্ন, যেখানে ২৯৪ জন পড়ুয়া যেখানে মিড-ডে মিল পায়, সেখানে মাত্র ৪০-৫০ জনের খাবার কেন এসেছিল সে দিন? স্কুল সূত্রে খবর, যেই শিক্ষকের কাছে থাকে, পরিদর্শনের দিন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।
তবে তারাপদবাবুর ব্যাখ্যা, মিড-মিল স্কুলে রান্না হয় না। বাইরে থেকে আসে। অনেক পড়ুয়াকেই অভিভাবকেরা এই মিড-ডে মিল খেতে দিতে চান না। ডিম যে দিন হয়, সে দিন সকলেই শুধু ডিমটা খায়। সে দিনও সব পড়ুয়ার জন্য ডিম এসেছিল।
কিন্তু সকলে খিচুড়ি খায় না বলে আসেনি। তবে যে পাত্রে খাবার পাঠানো হয়েছিল, তাও পরিচ্ছন্ন ছিল না।
সেই বিষয়টিও পরিদর্শক দলের চোখে পড়ে। এ সব ক্ষেত্রে যে তাদের ভুল হয়েছে, তা স্বীকার করেছেন স্কুলের বহু শিক্ষক। কিন্তু গোটা বিষয়টির দায় প্রধান শিক্ষকের উপরে গিয়ে পড়ায় বিস্মিত সরকারি স্কুলের বহু শিক্ষক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE