চিকিৎসার মতো পেশায় ধর্মীয় পরিচয় কি আদৌ বিচার্যবিষয় হতে পারে? চিকিৎসক আর রোগীর সম্পর্কের মধ্যে ধর্মের কোনও স্থান থাকতে পারে কি? চিকিৎসকদের একটি সংগঠনকে ঘিরে এই প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসক মহলের অন্দরে। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব মুসলিম ডক্টরস’ নামে জাতীয় স্তরের ওই সংগঠনটি দিল্লিতে চলতি মাসেই একটি সম্মেলনের ডাক দিয়েছে। সম্মেলনের বিষয়, ‘একুশ শতকে মুসলিম ডাক্তারদের ভূমিকা’। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম ডাক্তারদের ওই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা। অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তারদের ওই সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, সম্মেলনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যে তাঁরা তাঁদের শাখা খোলার বিষয়েও ওই সম্মেলন থেকে ডাক দেবেন।
কোন কোন রাজ্যে নিজেদের শাখা খুলতে চান তাঁরা? উদ্যোক্তারা জানান, আপাতত দিল্লি ও মুম্বইয়ে তাঁরা সক্রিয়। এর পরে পশ্চিমবঙ্গে শাখা খুলতে চান। এ রাজ্যের বহু ডাক্তার তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন বলেও দাবি করেন এই সংগঠনের চিকিৎসকেরা। তবে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এ রাজ্যের চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশই জানিয়েছেন, তাঁরা এ ধরনের কোনও সংগঠনের সম্পূর্ণ বিরোধী এবং এমন উদ্যোগকে সর্বশক্তি দিয়ে রুখবেন।
জাতীয় স্তরের ওই সংগঠনটির জন্ম ২০০৯ সালে। ২০১১ সালে এটির রেজিস্ট্রেশন হয়। কিন্তু বছর দু’য়েক এর সক্রিয়তা বেড়েছে। সংগঠনের অতিরিক্ত সচিব মহম্মদ আতাহার আনসারির কথায়, ‘‘আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় হল ‘এথিক্যাল প্র্যাকটিস’। গোটা দেশেই চিকিৎসকদের মধ্যে এর অভাব দেখা দিচ্ছে। এই নিয়ে জোরালো প্রচার চালাতে চাই।’’ কিন্তু সেই প্রয়োজন তো সমস্ত ডাক্তারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তার জন্য আলাদা পরিচিতি নিয়ে এমন একটি সংগঠন খোলার প্রয়োজন পড়ল কেন? আনসারির বক্তব্য, সামগ্রিকভাবে চিকিৎসকদের মধ্যে নৈতিকতার বোধ জাগানোর পাশাপাশি মুসলিম ডাক্তারদের মধ্যে সংহতি বাড়ানোর জন্যও এটা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যথাযথ গুরুত্ব চাই। বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের মুসলিম ডাক্তারদের সদস্য পদ রয়েছে। কিন্তু সেখানে মুসলিম পদাধিকারী কত জন? সংখ্যাটা নেহাৎই নগণ্য। আমরা অন্য সমস্ত ধর্মের ডাক্তারদের জন্য সংগঠনের দরজা খোলা রাখছি। কিন্তু আমাদের জন্যও সর্বত্র দরজা খোলা থাকাটা দরকার।’’
এ রাজ্যের চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশই এই উদ্যোগের বিরোধী। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, ‘‘এই সংগঠনের কথা আমাদেরও কানে আসছে। এদের এ রাজ্যের ঢোকার চেষ্টা আমরা সর্বশক্তি দিয়ে রুখব। দরকার হলে রাস্তায় নেমে ডাক্তাররা প্রতিবাদ করবেন। কিন্তু কোনও মূল্যেই চিকিৎসার মতো পেশায় ধর্মীয় ভাগাভাগিকে বরদাস্ত করা হবে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো মুসলিম। তার জন্য তো চিকিৎসক সংগঠনের পদাধিকারী হওয়া আটকায়নি। এ ক্ষেত্রে ভেদাভেদের রাজনীতি করা হচ্ছে। যার পরিণাম সাধারণ রোগীদের পক্ষে মারাত্মক হতে পারে।’’ একই বক্তব্য চিকিৎসকদের সব চেয়ে বড় সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তনু সেনের। তাঁর কথায়, ‘‘এমন সংগঠন যে তৈরি হতে পারে, আমার পেশাগত জীবনে এই প্রথম শুনছি। ডাক্তাররা কোনও দিনই ধর্মের পরিচয়ে বাঁচেন না। আমাদের রাজ্যে তো এমন সংস্কৃতি কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।’’
বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার প্রয়াত হাসিম আব্দুল হালিমের ছেলে, কলকাতার শল্য চিকিৎসক ফুয়াদ হালিমও বলেন, ‘‘এটা তো স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে চিকিৎসকদের মধ্যে ভাঙন ধরানোর জন্যই এটা করা হচ্ছে। ধর্মের ভিত্তিতে ডাক্তারদের কোনও সংগঠন তৈরি হতে পারে, এটাই বিশ্বাস করি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy