Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ফর্ম কিনে জমা দিতে গিয়ে জানা গেল, কোর্সটাই নেই

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে সবে এম.এ পাশ করেছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.ফিল করার জন্য ফর্মও কিনলেন। কিন্তু কয়েক দিন পরেই জানতে পারলেন কোর্সটাই সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৪:০১
Share: Save:

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে সবে এম.এ পাশ করেছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.ফিল করার জন্য ফর্মও কিনলেন। কিন্তু কয়েক দিন পরেই জানতে পারলেন কোর্সটাই সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

একই অবস্থা কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করা আরেক ছাত্রীর। ফর্ম কিনে নিয়ে যাওয়ার ক’দিন পরেই জানতে পারলেন কোর্স সাময়িক ভাবে বন্ধ।

ছাত্র-ছাত্রীরা প্রশ্ন তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ রকম কোন নির্দেশিকার উল্লেখ নেই কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জন অধ্যাপক জানান, ওয়েবসাইট তো বহু দিন হল আপডেটই করা হয় না। রাজ্যের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে অন্যতম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের হাল এখন এমন যার ফলে বিভ্রান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকের অভাবে এম.ফল এবং পিএইচডি ডিগ্রি কোর্স পড়ানো সম্ভব নয় তা অনেক দিন আগেই বিভাগীয় কোঅরডিনেটর কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, এমনটাই জানাচ্ছেন বিভাগের এক জন অধ্যাপক।

তা ছাড়া, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.ফিল কোর্সে ভর্তি নিয়ে কত শতাংশ প্রাপ্ত নম্বরকে যোগ্যতা হিসেবে ধরা হবে তা নিয়েও বিভ্রান্তি দেখা যাচ্ছে ওয়েরসাইটের তথ্যের জন্য। কোথাও স্নাতোকত্তর স্তরে পঞ্চাশ শতাংশ আবার কোথাও পঞ্চান্ন শতাংশকে ন্যূনতম নম্বর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

যার ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিচ্ছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহু ছাত্র-ছাত্রী আসছেন পঞ্চাশ শতাংশ নম্বর নিয়ে এম.ফিলের জন্য কিন্তু তাঁদের নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। শুধু তাই নয় ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই এম.এ পাশ করা বহু পড়ুয়া ভুল তথ্যের জন্য বিভ্রান্ত হচ্ছেন।

ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রের যে অনুপাত দেওয়া হয়েছে, তাতেও অমিল আছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যলয়ের ওয়েবসাইটে প্রতিটি বিভাগের শিক্ষকের যে পরিসংখ্যান দেওয়া আছে সেটাও যথেষ্ট বিভ্রান্তকর। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের সম্পর্কে ওয়েবসাইটে বিস্তৃত বিবরণ দেওয়া আছে। পাশাপাশি, ইউজিসির কাছে বিশ্ববিদ্যালয় যে ‘সেল্ফ স্টাডি রিপোর্ট’(এসএসআর) পাঠাচ্ছেন সেটির উল্লেখ আছে। যেমন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ক্ষেত্রে বলা যায়, এসএসআরএ জানানো হচ্ছে, প্রতি পঞ্চাশ জন ছাত্র প্রতি এক জন অধ্যাপক আছেন। কিন্তু ওয়েবসাইটের বিভাগীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি এগারো জন প্রতি এক জন শিক্ষক থাকা উচিত। একই ছবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা, ইংরেজি, রসায়নবিদ্যা, ইতিহাস, ব্যবহারিক গণিত-সহ বিভিন্ন বিভাগে। বাংলা বিভাগের এসএসআর রিপোর্ট বলছে, ছাত্র-অধ্যাপক অনুপাত ৯৩:১ আর বিভাগীয় তথ্য বলছে অনুপাত হওয়া উচিত ৪৫:১, ইংরেজি বিভাগের এসএসআর অনুপাত বলছে ৫৮:১ আর বিভাগীয় হিসেব অনুযায়ী অনুপাত হওয়া উচিত ১৮:১। ইতিহাস বিভাগের এসএসআর বলছে, অনুপাত ১৮:১ আর বিভাগীয় তথ্য অনুযায়ী অনুপাত হওয়া উচিত ৯:১। রসায়নবিদ্যা বিভাগের এসএসআর বলছে অনুপাত ৭:১ আর বিভাগীয় তথ্য আনুযায়ী হিসেব হওয়া উচিত ২:১।

এ ছাড়াও, যে সব শিক্ষকেরা অবসর নিয়েছেন তাদের এখনও বিভাগীয় অধ্যাপক হিসেবে নাম ও যোগাযোগ নম্বর দেওয়া আছে ওয়েবসাইটে।

ওয়েব-পরিকাঠামোর অভাব নিয়ে ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরাও। তাঁরা জানাচ্ছেন, পরীক্ষা পিছোলে বা রেজাল্ট বেরোলে কোনটাই তাঁরা ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারেন না। ওয়েবসাইটে যে নোটিফিকেশন সেকশন আছে সেটি আপডেট না হওয়ায় খুবই সমস্যায় পরেন তাঁরা। বিশেষ করে কলেজ নির্বাচন ঘিরে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন হয় ওয়েবসাইটে তার উল্লেখ না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ পড়ুয়াদের।

ওয়েব-পরিষেবাতে যে ত্রুটি আছে তা মেনে নিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ‘‘পরিবর্তিত তথ্য বিভাগীয় প্রধানের জানানোর দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে। তাঁরা দেরি করেন বলেই আপডেট করতে দেরি হয়।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ (একাডেমিক) অধ্যাপক সৌগত সেন জানান, ‘‘এত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সময়ই যোগাযোগের ত্রুটি থেকে যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সক্রিয় ওয়েব পরিষেবা সক্রিয় রাখার জন্য।’’

শহরের সব বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছবি অবশ্য একই নয়। প্রেসিডেন্সি বা যাদবপুরের ছবিটা অনেকটাই আলাদা। এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েরসাইট নিয়মিত আপডেট করা হয়। এখানকার ওয়েরসাইটের কর্মীরা জানাচ্ছেন, ‘‘ওয়েবসাইট আপডেট করার জন্য আমাদের আলাদা টিম আছে। তাঁরা নিয়মিত সমস্ত বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। ফলে সময় মতো ওয়েবসাইট আপডেট করা সমস্যা হয় না।’’

যদি প্রেসিডেন্সি বা যাদবপুর পারে তা হলে কলকাতা কেন পারবে না এই প্রশ্নই তুলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে পড়ুয়া সকলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE