Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আয়করেরও প্রশ্নের মুখে মেয়র-ঘরনি

যাঁকে ঘিরে ওই তিন কেন্দ্রীয় সংস্থার এত তৎপরতা, সেই রত্না চট্টোপাধ্যায় এই মুহূর্তে রয়েছেন লন্ডনে। তাঁর স্বামী, রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:৪০
Share: Save:

তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে স্টিং অপারেশনে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে। তাঁর বিরুদ্ধে নেই। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে সঙ্গে তিনিও এসে গিয়েছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি এবং সিবিআইয়ের নিশানায়। এবং ওই দুই তদন্তকারী সংস্থা ছাড়াও এ বার তিনি আয়কর দফতরের নজরে। অনেকটা চক্রব্যূহের ধাঁচে ঘিরে ফেলা হচ্ছে তাঁকে।

যাঁকে ঘিরে ওই তিন কেন্দ্রীয় সংস্থার এত তৎপরতা, সেই রত্না চট্টোপাধ্যায় এই মুহূর্তে রয়েছেন লন্ডনে। তাঁর স্বামী, রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত। শোভনবাবুর সঙ্গে সঙ্গে নারদ-তদন্তের আওতায় পুরো মাত্রায় এসে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী। ইডি তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল। তিনি হাজিরা দেননি। সিবিআই তাঁকে তলবের তোড়জোড় শুরু করেছে। এ বার তাঁর কাছে বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব চাইছে আয়কর দফতর।

কিন্তু রত্নাদেবী কেন নিশানায়?

ইডি ও সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তে নেমে ওই দুই সংস্থাই মেয়রকে ডেকে পাঠিয়েছিল। দুই সংস্থারই জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন মেয়র। তাঁর আর্থিক লেনদেনের সবিস্তার হিসেব চাওয়া হলে দু’টি জায়গাতেই মেয়র জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তাঁর ও তাঁর পরিবারের আর্থিক লেনদেনের পুরোটাই দেখেন স্ত্রী রত্নাদেবী। তার পরেই ইডি ও সিবিআইয়ের তদন্তের আওতায় চলে আসেন মেয়র-পত্নী। রত্নাদেবীর হিসেবনিকেশ সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য পেতে সম্প্রতি সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডিরেক্ট ট্যাক্সের দ্বারস্থ হয় ইডি ও সিবিআই। সেখান থেকেই নির্দেশ আসে আয়কর দফতরের কাছে। অভিযোগ, আয়কর অফিসারেরা রত্নাদেবীর কাছ থেকে আয়কর রিটার্ন সংক্রান্ত বেশ কিছু ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠালেও তিনি তাঁর জবাব দেননি।

ছদ্মবেশী সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েল যখন কলকাতায় এসে স্টিং অপারেশন চালিয়েছিলেন, সেই ২০১৪-’১৫ আর্থিক বছরে মেয়র-পত্নীর আয়কর রিটার্নকেই পাখির চোখ করেছেন আয়কর অফিসারেরা। অভিযোগ, সেই আয়কর রিটার্নে হিসেবের অনেক গরমিল পাওয়া গিয়েছে। দেখা গিয়েছে, সেই বছরেই দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৬ লক্ষ টাকা করে জমা দিয়েছিলেন রত্নাদেবী। সেই ৩২ লক্ষ টাকা কোথা থেকে এল, তা জানতে চায় আয়কর দফতর।

আয়কর দফতর সূত্রের খবর, তারাতলার হাইড রোডে কয়েকটা ওয়্যারহাউস রয়েছে রত্নাদেবীর নামে। সেগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, ২০১৪-’১৫ সালে সেই ভাড়ার পরিমাণ আচমকাই অনেকটা কমিয়ে দেখানো হয়। আয়কর অফিসারেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সেই সব ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, ২০১৪-’১৫ সালে তাঁরা যে-ভাড়া দিয়েছেন, রিটার্নে তা দেখানো হয়নি। এ ছাড়াও রত্নাদেবী ওই আর্থিক বছরে দু’টি বাড়ি কিনেছেন বলে আয়কর দফতরের দাবি। যে-টাকায় সেই জোড়া বাড়ি কেনা হয়েছে, তা-ও তাঁর দেখানো আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে অভিযোগ। এরও ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠানো হয়েছে তাঁর কাছে। ৪ সেপ্টেম্বর রত্নাদেবীকে ডেকে পাঠিয়েছিল ইডি। কিন্তু তিনি অসুস্থ এবং লন্ডনে রয়েছেন বলে ইডি-র কাছ থেকে সময় চেয়ে নেন। সে-বার লন্ডন থেকে ফোনে রত্নাদেবী জানান, শোভনবাবু তাঁর রাজনৈতিক কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাই তাঁর স্ত্রী হিসেবে ব্যবসা সংক্রান্ত সমস্ত কাজকর্ম তাঁকেই দেখতে হয়। তিনি স্বচ্ছ ভাবে ব্যবসা করেন। তাই ব্যবসা সংক্রান্ত যে-কোনও নথিই তিনি তুলে দিতে পারেন তদন্তকারীদের হাতে। ইডি আগামী ৪ অক্টোবর তাঁকে আবার ডেকে পাঠিয়েছে। এ বার লন্ডনের সেই ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Income Tax CBI Sovan Chatterjee ED Mayor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE